পুরুষকে ঘরজামাই হতে চাপ দেওয়া নিষ্ঠুরতা: দিল্লি হাইকোর্ট
দিল্লি হাইকোর্ট

বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন স্বামীর পরকীয়া অপরাধ নয়

স্ত্রীর থেকে দীর্ঘদিন আলাদা থাকার পর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন কোনও মহিলার সঙ্গে সহবাস করতেই পারেন স্বামী। তিনি গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হলে কিংবা স্ত্রীর দ্বারা মানসিকভাবে অত্যাচারিত হলে অন্য সম্পর্কে জড়ানো কোনও অন্যায় নয়। এর জেরে তাঁকে কিছুতেই ডিভোর্সের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এমনটাই পর্যবেক্ষণ দিল্লি হাইকোর্টের।

স্ত্রীর উপর স্বামী অত্যাচার করলে সংবিধান অনুযায়ী, স্বামীর শাস্তি হতে পারে৷ তবে অনেক সময় অত্যাচারিত হন স্বামীরাও৷ তাঁরাও গার্হ্যস্থ হিংসার শিকার হন৷ ফলে শান্তি খুঁজতে অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সম্পর্কে৷ বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন এই সম্পর্ক অপরাধ হিসাবে ধরা হবে না বলে জানাল দিল্লি হাইকোর্ট৷

আদালত জানিয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলাকালীনই অন্য মহিলার সঙ্গে সহবাস করতে পারেন স্বামী। সে ক্ষেত্রে পরকীয়ার কারণ দেখিয়ে কোনও রকম পদক্ষেপ নিতে পারবেন না স্ত্রী।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুরেশ কুমার কাইতের বেঞ্চে সম্প্রতি একটি বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা আসে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আদালতের পর্যবেক্ষণ ঘিরে রীতিমতো চর্চা চলছে।

আদালত সূত্রে খবর, যে দম্পতি এই মামলা করেছেন তাঁরা ২০০৫ সালে আলাদা থাকেন। এক ছাদের তলায় থাকেন না। একে অপরের সঙ্গে কোনও শারীরিক সম্পর্ক নেই। এমনকী, তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্স্থাপনেরও কোনও সম্ভাবনা নেই।

স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রী তাঁকে মানসিক নির্যাতন করেন। সংসার জীবনে শান্তি ছিল না তাঁর। মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়েছে এই দাম্পত্য জীবনে। আর তাই তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, তাঁর পরিবারের প্রতি অসম্মান, দীর্ঘ সময় ধরে ঝগড়া, অশান্তির দেরে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন মামলাকারী স্বামী। এই সমস্যার কোনওরকম সমাধান না দেখে নিরুপায় হয়ে তিনি দীর্ঘসময় ধরে আলাদা থাকেন। প্রতিদিন স্ত্রী ও তাঁর শশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁর ও তাঁর বাবা-মায়ের উপর নিষ্ঠুর আচরণ করতেন বলেও অভিযোগ। স্ত্রীর দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার এই স্বামী তাই বিয়ের এই সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া। স্ত্রীর থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন স্বামী।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি নীনা বনসান কৃষ্ণের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই ধরণের দীর্ঘমেয়াদি মতপার্থক্য এবং অপরাধমূলক অভিযোগ মামলাকারী স্বামীর জীবনে শান্তি বিঘ্নিত করেছে। এই ধরণের ঘটনা বিবাহিত জীবনের ভীত নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। যে কোনও দাম্পত্য সম্পর্ক এমনভাবে সুখকর হয় না।

বিচারপতির বেঞ্চ আরও জানায়, পুনরায় মিলনের কোনও সম্ভাবনা ছাড়া দীর্ঘ বছক বিচ্ছেদের পর যদি কোনও স্বামী নির্যাতন বা হিংসার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি শান্তি খুঁজে পেতে অন্য প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হতেই পারেন। অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে সহবাসও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় এই ঘটনাকে কোনওভাবেই জড়ানো যাবে না। এই পরকীয়া সম্পর্ক দেখিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে কোনওরকম অপরাধমূলক ও হিংসাত্মক ঘটনার প্রমাণ দিতে পারবেন না স্ত্রী।

উল্লেখ্য, দিল্লির ফ্যামিলি কোর্টেই এই মামলাকারী স্বামীর বিরুদ্ধে আনা স্ত্রীর সকল অভিযোগ বাতিল করে দেয়। অভিযোগকারী স্ত্রী আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

স্বামীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছিলেন তিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি ছিল, তাঁর স্বামী অন্য মহিলাকে বিয়ে করে সংসার করছেন। যদিও স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কোনও প্রমাণ আদালতে মেলেনি।