তল্লাশী ও আটকে নাগরিক অধিকারঃ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয়
অ্যাডভোকেট মোঃ রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী

তল্লাশী ও আটকে নাগরিক অধিকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয়

মোঃ রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী: দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো দেশে জননিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহীনির অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসিয়ে পথচারী, যানবাহন ও যাত্রীদের, সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীতে তল্লাশি অভিযান চলছে। দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সময়ে দেখা যায় যে চলাফেরায় দেহ এবং সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র, ব্যাগ, মোবাইল (ম্যাসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, কললিস্ট) তল্লাশি কিংবা রাস্তায়, অফিসে, বাড়ীতে পুলিশের এই তল্লাশি বা আটক অভিযান। মূলত দেশের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতা ঠেকাতে তথা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা পুলিশ সন্দেহজনক মালামাল বা ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি বা প্রয়োজনে আটক করে।

দেশের বিদ্যমান আইন বিশ্লেষণে বলা যায়, পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ইচ্ছে করলেই যে কোন ব্যক্তিকে, যে কোন সময়ে তল্লাশি বা গ্রেফতার করতে পারেন। তার জন্য অবশ্য কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে। সাধারণ মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না। যার ফলে এই কাজে কিংবা পরিস্তিতিতে অনেক সময়ে পুলিশি হয়রানি ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এসময়ে নাগরিকদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা। তিনি যদি কোনো অপরাধ না করে থাকেন তাহলে ভয় না করে সেটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বুঝিয়ে বলতে হবে। তল্লাশিতে তাদের সহযোগীতা করতে হবে। তাদের যুক্তিসংগত প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দেওয়া ভাল। এমন কোন আচার-আচরণ করা বা কথা বলা যাবে না যাতে পুলিশের সন্দেহ সৃষ্টি হয়।

পুলিশি তল্লাশি বা আটক তথা অহেতুক হয়রানি থেকে মুক্ত থাকার জন্য নাগরিকদের কিছু পূর্ব প্রস্তুতিও রাখতে হবে। যেমন নিজের পেশাগত পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা। এ ছাড়া চেনাজানা দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর ও ঠিকানা সঙ্গে রাখা। বেআইনি কোন কর্মকান্ডে জড়িত না হওয়া এবং বেআইনি কোন বস্তু বা মালামাল না রাখা। দেশের বিদ্যমান আইন-কানুন মেনে চলা।

মূলতঃ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০১, ১০২ ও ১০৩- এ পুলিশের তল্লাশির দায়িত্ব এবং নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। এর বাইরেও বেশকিছু আইনি বিধান রয়েছে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তল্লাশি ও আটক সম্পর্কে বলা হয়েছে।

সাধারণত যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়, তখন আসামী গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে পুলিশ তল্লাশি করতে পারে। কোর্ট থেকে ম্যাজিস্ট্রেট যদি কারও বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে, তবে পুলিশ উক্ত ব্যক্তি বা বিষয়বস্তুর সন্ধানে তল্লাশি চালাতে পারে। ওয়ারেন্ট হলে তা লিখিত ও ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যদি পুলিশ জানতে পারে যে, কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বা প্রতিষ্টান, বাসা-বাড়িতে বেআইনি কর্মকান্ড হচ্ছে বা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে অথবা আগ্নেয়াস্ত্র বা বিষ্ফোরক পদার্থ মজুদ আছে তখন পুলিশ তল্লাশির জন্য সেই সন্দেহজনক জায়গায় যেতে পারে। উক্ত সন্দেজনক বস্তু জব্দ বা হেফাজতে এবং ব্যাক্তিকে আটক করতে পারে। এছাড়া কোনো মামলার পলাতক আসামীকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ তল্লাশি করতে পারে।

যদি পুলিশ কাউকে বা কোনো স্থান বা বাসা বাড়িতে তল্লাশি করতে আসে, তাহলে তল্লাশির পূর্বে পুলিশ অবশ্যই ওই এলাকার গণ্যমান্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে ডাকবেন। নিজেদের পরিচয় দিবেন অর্থাৎ কোন থানা বা সংস্থা থেকে এসেছেন, কেন এসেছে, কোন পদ মর্যাদা অফিসার বা সদস্য প্রভৃতি। তাদের সামনে-উপস্থিতিতে তল্লাশি বা আটক অভিযান পরিচালনা করবেন এবং উক্ত তল্লাশিতে সাক্ষী হতে বলবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাঁদের একজনের প্রতি লিখিত আদেশ দিতে পারবেন। কারো বিরুদ্ধে ‘তল্লাশি পরোয়ানা’ থাকলে স্থানীয় ব্যক্তি বা বাসিন্দাকে উপস্থিত থাকার জন্য লিখিত আদেশ দেয়া হতে পারে। যদি তল্লাশিকালে স্থানীয় এলাকার সম্মানিত সাক্ষী না পাওয়া গেলে ভিন্ন স্থান থেকে সাক্ষী নেয়া যেতে পারে।

ফৌজদারি কার্যবিধি ১০২ ধারা অনুযায়ী, কোনো ঘর বা বাড়ির মালিক পুলিশকে সার্চ করার অনুমতি দিতে বাধ্য, এ সময় তিনি পুলিশকে সকল প্রকার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ সুবিধা দেবেন। যদি তল্লাশিযোগ্য কোনো স্থান-জায়গা বন্ধ বা তালাবদ্ধ থাকে বা বাধাহীনভাবে-মুক্তভাবে প্রবেশ করা না যায়, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা পুলিশ ভেতরের বা বাইরের দরজা-জানালা ভেঙে প্রবেশ করতে পারবেন। পুলিশ তল্লাশির সময় যেখানেই যাবে সেখানে সাক্ষীকে উপস্থিত রাখতে হবে।

এছাড়াও তল্লাশিকৃত স্থানের দখলকারী ব্যক্তি অথবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিকে তল্লাশির সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দিবে পুলিশ। যেখানে পুলিশ তল্লাশি করবেন উক্ত স্থানে বা আশপাশে তল্লাশি করতে পারবেন। তল্লাশির সময় জব্দকৃত সব জিনিসের কোনটি কোন স্থানে তথা কিভাবে পাওয়া গেছে তা উল্লেখ করে একটি জব্দ তালিকা তৈরি করবেন। তল্লাশি শেষে আটক জিনিসগুলো উপস্থিত সাক্ষীকে দেখাবেন। তালিকাটিতে সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেবেন।স্থানীয় সম্মানিত সাক্ষী চাইলে এই তালিকার একটি কপি তাকেও সরবরাহ করা যাবে। উক্ত স্থান বা প্রতিষ্ঠানের মালিক-দখলকারী ব্যক্তি বা তার পক্ষে প্রতিনিধি অনুরোধ করলে সাক্ষীদের স্বাক্ষরযুক্ত আটককৃত মালামালের তালিকার একটি নকল দিতে হবে।

উল্লেখ যে, তল্লাশিতে সাক্ষীদেরকে যদি আদালত বিশেষভাবে সমন দিয়ে তলব না করে তাহলে উক্ত সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তির দেহে বেআইনি বস্তু লুকিয়ে আছে বলে সন্দেহ হলে পুলিশ তার দেহও তল্লাশি করতে পারবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩(৪) ধারায় বলা হয়েছে, কার্যবিধি ১০২(৩)ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করা যাবে। বলা হয়েছে,

‘যে বস্তু সম্পর্কে তল্লাশি হওয়া উচিত, উক্ত স্থানে বা স্থানের নিকট কোন ব্যক্তি উক্ত বস্তু তাহার দেহে লুকাইয়া রাখিতেছে বলিয়া যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ করা যায়, তাহালে উক্ত ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করা যাবে।’

অর্থাৎ যে জিনিসটি পুলিশ তল্লাশি করছে তা যদি ওই ব্যক্তির শরীরের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ সন্দেহ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ধারায় আরো বলা হয়েছে, সন্দিগ্ধ ব্যক্তি যদি মহিলা হয় তাহলে ৫২ ধারার নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে। ৫২ ধারা অনুযায়ী স্ত্রী লোককে অবশ্যই মহিলা পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করতে হবে। সেখানে মহিলা পুলিশ না থাকলে স্থানীয় কোন মহিলা দিয়ে দেহ তল্লাশি করা যাবে এবং তা অবশ্যই কঠোর শালীনতার মধ্য দিয়ে করতে হবে।

সন্দিগ্ধ কোনো স্থান বা বাড়ির তল্লাশির জন্য যেমন দুই বা ততোধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে থাকতে হয় ঠিক তেমনি ব্যক্তির তল্লাশির ক্ষেত্রেও তা অবশ্যই পালনযোগ্য। ব্যক্তির কাছ থেকে আটককৃত জিনিসের তালিকা করবে পুলিশ এবং ওই ব্যক্তি চাইলেই একটি নকল তাকে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ১০৩ ধারায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, লিখিত আদেশ দ্বারা আহবান জানানো সত্ত্বেও যদি কেউ যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তল্লাশিতে উপস্থিত না থাকে ও সাক্ষী হতে অস্বীকার বা অবহেলা করে তবে সে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারায় বর্ণিত অপরাধ করেছেন বলে ধরা হবে। দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা মতে,

‘কোনো ব্যক্তি সরকারি কর্মকর্তাকে সরকারি কোনো কাজে সহযোগিতায় ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকৃতি জানালে বা বাধা দিলে তাকে একমাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দুইশত টাকা পর্যন্ত যে কোনো পরিমাণ জরিমানা দণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।’

নিয়ম অনুযায়ী কাউকে তল্লাশি বা আটক করার পর ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নিজের থানায় রিপোর্ট করতে হয়। উক্ত ব্যক্তির কাছে যদি অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া না যায় তাহলে, “অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি” এই মর্মে তল্লাশীকারী পুলিশকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লিখিত একটি অনুলিপি দিতে হয় এবং এ ক্ষেত্রে রিপোর্টে দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সাক্ষী থাকতে হয়।

সুতরাং এ বিষয়ে নাগরিকদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকরী অফিসার অথবা কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কর্মকর্তা তল্লাশির সময়ে স্থানীয় এক বা দু’জন সম্মানিত ব্যক্তি সে স্থানে উপস্থিত আছে কি-না এবং তাদের দেখিয়ে সব মালামাল তল্লাশি করা হচ্ছে কি-না। তল্লাশির সময়ে কাউকে সন্দেহ হলে বা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারে। তল্লাশি করার পর ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নিজের থানায় রিপোর্ট করতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যদি অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া না যায় তাহলে, “অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি” এই মর্মে তল্লাশীকারী পুলিশকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লিখিত একটি অনুলিপি দিতে হবে এবং রিপোর্টে দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সাক্ষী থাকতে হবে।

সম্প্রতি পথচারী ও সন্দেহজনক ব্যক্তির মোবাইলের ছবি, ম্যাসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, কললিস্ট তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোবইল ফোনে ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, তথ্য বা ছবি থাকতে পারে, যা ঘাঁটাঘাঁটি করা একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এছাড়াও একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার সাথে তার মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’ এখানে যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়াল-খুশি মতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।’

সুতরাং গোপনীয়তা একজন ব্যক্তির সংবিধান স্বীকৃত অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। আদালতের আদেশ ছাড়া কোনভাবেই সেটা সার্চ করার এখতিয়ার কারও নেই। তল্লাশির ক্ষেত্রে পুলিশ নিয়ম না মানলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন। যদি পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কোন নাগরিক কে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করে তা অবশ্যই হতে হবে সুনির্দিষ্ট, বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। উক্ত ব্যক্তির যথাযত মর্যাদা ও সম্মান বজায় রেখেই করতে হয়। উক্ত ব্যক্তি যদি শিশু হয় তাহলে তার অভিবাবক বা বিশ্বাস ও আস্তা রাখে এমন বয়স্ক লোকের সামনে করতে হবে।

সাধারণত পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন না। কিন্তু অনেক সময় বিধিসাপেক্ষ বিনা পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ১ নং উপধারা মতে, একজন পুলিশ অফিসার ম্যাজিস্ট্রেটের ওয়ারেন্ট ছাড়াই কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য হল যেমন- যার কাছে ঘর ভাঙার যন্ত্র বা বস্তু আছে, সেই ব্যক্তি যাকে ‘ঘোষিত অপরাধী’ বলা হয়। এদের ধরার জন্য সংবাদপত্র বা গেজেটে ঘোষণা দেয়া হয়, যে ব্যক্তির কাছে চোরাইমাল আছে বলে সন্দেহ করা হয়, পুলিশের আইনানুগ কাজে যারা বাধা দেয় বা পুলিশের হেফাজত থেকে যারা পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে, যারা প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পলাতক, বাংলাদেশের বাইরে যারা অপরাধ করে, তাদের যদি বাংলাদেশে পাওয়া যায়, গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা খালাস পাওয়ার পরও তাদের যেসব নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেগুলো যারা ভঙ্গ করে, যেসব আসামিকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের জন্য অন্য থানা থেকে অনুরোধ করা হয় প্রভৃতি।

যেকারণেই আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হউক না কেন। উক্ত নাগরিকের কাছে পুলিশ নিজের পরিচয় দিবেন। আসামীকে আটক বা গ্রেফতারের কারণ জানাবেন। যদি আসামী গ্রেপ্তার এড়াতে চেষ্টা করে তাহলে আসামীর পলায়ন প্রতিরোধ করা জন্য যতটুকু বল প্রয়োগ করা প্রয়োজন ঠিক ততটুকু বল প্রয়োগ করতে হবে। গ্রেফতারকৃত আসামী যদি মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয় তাহলে তাকে হাতকড়া পড়ানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, থানায় বা পুলিশি হেফাজতে নাগরিক কে অত্যাচার করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে না।

অর্থাৎ কোন প্রকার শারিরীক-,মানসিক নির্যাতন বা নিষ্ঠুর ব্যবহার করা যাবে না। আর তাদের কাছে প্রদত্ত কোনো স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য প্রদানের ২৫ ধারা অনুসারে আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্যও নয়। আর যদি জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন করা হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। কখনই কোনো সাদা কাগজে দস্তখত করা যাবে না। অভিযোগ ছাড়া কাউকে যুক্তিসংগত সময়ের বাইরে তথা অনির্দিষ্টকালের জন্য থানায় আটক রাখা যায় না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে। অথবা কোনো আইনের আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করলে তখন ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও অপরাধ বিবেচনায় প্রয়োজনে আটকাদেশ দিতে পারেন।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। ই-মেইল: advraihanulwazedchy@gmail.com