বিচারপতিদের নিয়ে কটুক্তি: জাপা মহাসচিব চুন্নুর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু

বিচারপতিদের নিয়ে কটুক্তি: জাপা মহাসচিব চুন্নুর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : বিচারপতিদের নিয়ে কটূক্তি করায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম।

আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এ আবেদনটি দায়ের করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব ও অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান জানিয়েছেন, গত ১১ নভেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারপতি ও বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করে দেওয়া মো. মুজিবুল হক চুন্নু’র বক্তব্যে উচ্চ আদালতকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। যা আদালত অবমাননার শামিল। এজন্য আবেদনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে আদালতে সশরীরে হাজির করে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর কয়েকজন আইনজীবী জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে দলটির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উচ্চ আদালতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্রিলিয়ান্ট লোকদের বিচারপতি হওয়া, কিন্তু সেখানে সবচেয়ে অযোগ্য লোক বিচারপতি হন। মেট্রিক থার্ড ডিভিশন, ইন্টারমিডিয়েট থার্ড ডিভিশন, বিএ থার্ড ডিভিশন, সেন্ট্রাল ল কলেজে কোনোমতে টাইন্না-টুইন্না নাইটে পাস, সেও বিচারক।

এ সময় বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রবণতা ও দুর্নীতি ছাড়াও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন তিনি।

নিজের বিচারক জীবনের কথা স্মরণ করে চুন্নু বলেন, আমরা একসঙ্গে ৬৬ জন একযোগে শর্ট বিসিএস দিয়ে সহকারি জজ হয়েছিলাম। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিফথ ব্যাচ ল ডিপার্টমেন্টের, আমার ক্লাসমেট, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জেলা জজ, আর বারো জন এখন আছেন আপিল ও হাইকোর্টে। আমি একটা জিনিস দেখলাম, যারা ব্রিলিয়ান্ট লোক তারা বিচারক হননি। আবার অনেক লোক আছেন যারা বাল্বকে বাল্ব লিখতে পারবেন না তারাও বিচারক হয়েছেন।

তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগ হন দুই ক্যাটাগরিতে। দশ বছর হাইকোর্টের বারান্দা দিয়ে ঘুরতে হবে বা দশ বছর জুডিসিয়াল সার্ভিসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্লাস সরকার অন্যান্য আইন তৈরি করবে। যদি আইনের শাসন না থাকে, ন্যায় বিচার না থাকে, সে সমাজ তো ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, তিনজন বিচারপতিকে বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে কেনো? তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। গত তিন বছর ধরে তারা সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে করাপশনের অভিযোগ, কোনো তদন্ত হচ্ছে না।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব আরো বলেন, এরশাদ সাহেব উপজেলায় কোর্ট করেছিলেন তা কি ভুল করেছিলেন? বিএনপি, আওয়ামী লীগ বললো এতে দুর্নীতি বাড়বে। এরশাদ সাহেব কি ভুল করেছিলেন? না, এরশাদ সাহেব করেছিলেন তাই তারা বিরোধিতা করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেসিতে কি দুর্নীতি হচ্ছে না? আসলে এরশাদ সাহেব করেছেন, ভালো কাজ করলেও রাখা যাবে না।

তিনি বলন, হাইকোর্ট যখন বিকেন্দ্রীকরণ করা হলো, তখন বাংলাদেশে একচেটিয়া ব্যবসা করা আইনজীবী ও ঢাকার বাসিন্দা কিছু বিচারক যারা ঢাকার বাইরে থাকতে চান না, এক জোট হয়ে রিট করলেন। পরে আদালত থেকে বলা হলো এটি অবৈধ।

মুজিবুল হক চুন্নু সে অনুষ্ঠানে আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কয়েক দিনের উপনির্বাচনেও এখন সরকারকে সিল মারতে হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।

কিশোরগঞ্জের রাজনীতিবিদ মুজিবুল হক চুন্নু এর আগে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং এরশাদের মন্ত্রিসভায় ভূমি উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান জাতীয় সংসদের এই সদস্য কিশোরগঞ্জ ৩ ও ৪ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হন।