মোঃ সাইফুল ইসলাম: মামলার ২৪ বছর পর প্রথম দু’জন সাক্ষী আদালতে এসেছেন। উভয় সাক্ষীই আদালতে এসে বললেন, তারা মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কে বাদী কে আসামী জানেন না। কেন তারা সাক্ষী হয়েছেন তাও জানেন না। সাক্ষীদের এমন বক্তব্যে আমি মোটেও অবাক হইনি। কেননা মাদক ও নিষিদ্ধ দ্রব্য উদ্ধারের মামলায় জব্দ তালিকায় প্রায় সকল সাক্ষীই এরূপ বক্তব্য প্রদান করে। এ সংক্রান্তে মাননীয় উচ্চ আদালতের অসংখ্য রায়ের মাধ্যমে কিছু সাবধানতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা অধঃস্তন আদালতে অনুসরণ করা হয়। অত্যাশ্চার্য হয়েছি, গত ২৪ বছরে কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয় নি দেখে।
মামলার ঘটনাটি পড়ছিলাম গত বছর দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনে। ১৯৯৮ সালে রাজশাহীর এক কৃষক তার বাড়ী থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরে কোনো এক জেলার বাস-টামিনালে পুলিশ কর্তৃক ১০০ গ্রাম হেরোইন সহ আটক হন। পুলিশ তদন্ত করে ০৬ মাস পর অভিযোগ পত্র দিলেও অভিযোগ গঠনের পর কোনো সাক্ষী আদালতে আসেনি। মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে কোনো সাক্ষী আসেনি। এ যেন আসামীর এক অন্তহীন পথযাত্রা। এমন পথযাত্রায় তার মতো অনেকে মামলার ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে বিক্রি করেছেন জায়গা-জমি, হারিয়েছেন অর্থ-সম্পদ ও জীবনী শক্তি। মূলতঃ সাক্ষী ব্যবস্থাপনার ক্রটি এই দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তির অন্যতম প্রধান কারণ ।
আমাদের দেশের ফৌজদারী বিচারিক আদালতগুলোতে ২৪ বছরের এমন পুরোনো মামলা খুব কমই আছে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো মামলা নেহাতই কম নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৪ লক্ষ ফৌজদারী মামলা রয়েছে (দ্য ডেইলি স্টার, বাংলা অনলাইন, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। যারা ফৌজদারী বিচারের সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা জানেন, এই মামলাসমূহের মধ্যে অধিকাংশ মামলাই মাদকের এবং কারাগারে অধিকাংশ আসামীও আছে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ অক্টোবর ২০২১)। তারা কেউ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে, কেউ স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে কিংবা অন্য কোনো মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় জড়িত আছে। একটু সচেতনভাবে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এই মামলাগুলোর ৯০ শতাংশ সাক্ষীই সরকারী সাক্ষী। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই এ সকল মামলার এজাহারকারী হয় এবং তাদের সঙ্গীয় সদস্যগণ অভিযানকারী দলের সদস্য হিসেবে সাক্ষী হন। এছাড়া স্থানীয় দু’জন সাক্ষী থাকে যারা তল্লাশীর সময় অভিযানকালে উপস্থিত থাকেন। নিবিড়ভাবে মামলাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, যে বা যারা মামলাগুলোর এজাহারকারী, সঙ্গীয় ফোর্স বা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হন, তিনি একই থানার অন্য মামলার এজাহারকারী, সঙ্গীয় ফোর্স বা তদন্তকারী কর্মকর্তা হন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে এরূপ শুধু একটি মামলার অভিযান পরিচালনা করেন না, তার ৩/৪ বছরের কর্মকালীন সময়ে তিনি এরূপ শতাধিক মামলায় তিনি কখনও এজাহারকারী, সঙ্গীয় ফোর্স বা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এছাড়া হত্যা, ধর্ষণ সহ অন্যান্য ফৌজদারী মামলাতেও চিকিৎসক সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রমূখ সরকারী সাক্ষীর জন্য বছরের পর বছর পড়ে থাকে। এই মামলাগুলো একই জেলার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমনও নজির আছে যে সাক্ষী পাশের আদালতে ভিন্ন জেলা থেকে এসে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তাকে আরেক আদালতে বছরের পর বছরও খুঁজে পাওয়া যায় না। এই মামলাগুলোর সাক্ষী পরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করলে অধিকাংশ মামলাই বিশ বছরে নয় বরং এক বছরেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
যদি মামলাগুলোকে সাক্ষী অনুসারে পৃথক করে একই দিনে কয়েকটি বা পরপর তারিখ রাখা যায় তাহলে সহজেই সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যাবে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ অন্তে দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। যে সাক্ষী পঞ্চগড় আদালতে কক্সবাজারের মতো দূরবর্তী জেলা থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আসবে, তাকে একই আদালতে বা উক্ত জেলার অন্য আদালতে ০৭ দিন পর আনা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করলে দেখা যাবে, একই ব্যক্তি বিভিন্ন আদালতে উক্ত মাসে ৭/৮টি মামলায় সাক্ষী আছে। এই সাক্ষীকে এক মাসে ৭/৮ দিন কক্সবাজার থেকে আনা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় বলেই তিনি ঐ মাসে অন্যান্য আদালতের মামলাগুলোতে আসতে পারেন না। আবার তিনি যদি সেখান থেকে বদলী হন তবে তাকে খুঁজে পাওয়া আরো কঠিন হয়ে যায়। কেননা আদালত থেকে সমন দেবে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তার অভিযোগপত্রে বর্ণিত ঠিকানায়। এই সাক্ষী যদি জেলায় কর্মরত থাকেন তবে সহজেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। যদি রেঞ্জের মধ্যে থাকে তবে ডিআইজির মাধ্যমেও তাকে পাওয়া যায়। কিন্তু রেঞ্জ পরিবর্তন হয়ে গেলে তার কাছে বার্তা পৌঁছাতে পৌঁছাতে তারিখ আদালত নির্ধারিত সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ অতিবাহিত হয়ে যায়। যদিও সম্প্রতি অধিকাংশ মামলাতেই সাক্ষীদের মোবাইল নম্বর অভিযোগপত্রে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই নম্বর গুলো সরকারী নম্বর নয়। কোনোটাতে হোয়াটস এ্যাপ আছে, কোনোটাতে নেই। কিন্তু আজ থেকে ৪/৫ বছর আগের মামলাগুলোতেও সাক্ষীদের মোবাইল নম্বর অভিযোগপত্রে নেই। এই সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করাটা পুলিশের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ বটে।
এরূপ ক্ষেত্রে চমৎকার সমাধান হতে পারে যদি আমরা সাক্ষী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপস ব্যবহার করি। যেমন, এসআই মামুনুর রশিদকে আদালত থেকে সমন দেওয়ার প্রয়োজন হলো। তার নাম, বিপি নম্বর বা মোবাইল নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করলেই দেখা যাবে উক্ত সাক্ষীর উক্ত জেলায় কবে কবে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য আছে। আবার তিনি সমনের হার্ডকপির পাশাপাশি মোবাইলে তাৎক্ষণিকভাবে মেসেজ পাবেন এবং উক্ত মেসেজ তিনি দেখেছেন কিনা তা লাল/সবুজ বিশেষ রং দ্বারা চিহ্নিত করা থাকবে। ফলে সংশ্লিষ্ট আদালত সহজেই সেই নির্ধারিত তারিখে বা তার সামনে বা পিছনে তারিখে সমন্বয় করে দিন ধার্য করতে পারবেন। এভাবে, উক্ত সাক্ষী সেই জেলায় একবার এসে এক সপ্তাহ থেকেই ১৫-২০টি মামলায় সাক্ষ্য দিতে পারবেন। কিন্তু একই সাক্ষী উক্ত ১৫-২০ টি মামলার জন্য দূরবর্তী জেলা থেকে আসতে হলে প্রতিবার আসা যাওয়া বাবদ তিনদিন করে মোট ৪৫-৬০ দিন সময় ব্যয় হতো। একইসাথে টিএ/ডিএ বাবদ সরকারী ব্যয় বাড়তো। কিন্তু বর্ণিত পদ্ধতিতে শুধু মাত্র একবার এসেই একজন সাক্ষীর জন্য সাক্ষী ব্যবস্থাপনায় সরকারের লক্ষাধিক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। সাক্ষী অনুসারে মামলা পৃথক করা হলে দূরবর্তী সাক্ষীদের ক্ষেত্রে একই কাজ আমরা মাননীয় হাইকোর্টের প্রাকটিস নির্দেশনা অনুসরণ করে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তা করতে পারি। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সরকারী সাক্ষী বেঁচে যাওয়া সময় অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন।
আদালতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অধিকাংশ মামলাতে অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর নাম অভিযোগপত্রে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এক মামলাতে ২০-২৫ জন সাক্ষীর নাম থাকলে সকল সাক্ষী পরীক্ষা করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। শুধু তাই নয়, ঘটনার সাথে একেবারেই সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিকেও সাক্ষী করা হয়। নাম-ঠিকানা যাচাইকারী পুলিশ কর্মকর্তা, রেকর্ডিং অফিসার, একই মামলায় ৪/৫ জন তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম যাদের অধিকাংশ জনের মামলার তদন্তে কোনো ভূমিকা থাকে না, শুধু বদলীসূত্রে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এমন অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর নাম অভিযোগপত্রে পাওয়া যায়। আমরা সাক্ষ্য আইনের বিধান ভুলে যাই যে, কোনো নির্দিষ্ট বিষয় প্রমাণের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সচেতন হতে হবে।
এছাড়া মাঝে মাঝেই লক্ষ্য করেছি ভুল সরকারী সাক্ষী আদালতে আসেন। আদালত থেকে অভিযোগপত্রে বর্ণিতরূপে সমন/ওয়ারেন্ট দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে ভুল মেসেজ দেওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে সরকারী সাক্ষী এসে ফেরত যায়। এমন সাক্ষীও পেয়েছি যারা ঘটনার সময়ে উক্ত থানায় কর্মরত ছিলেন না। এর কারণ মুলতঃ দুইটি। যথা-১. সমনে সাক্ষীর ব্যক্তিগত সনাক্তকারী নম্বর বা সার্ভিস আইডি ও মোবাইল নম্বর না থাকা ও ২. উক্ত জেলায় সংশ্লিষ্ট সাক্ষীর পরিবার থাকায় তিনি মেসেজ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বা আদালত কর্মচারীদের সাথে যোগসাজস করে এরূপ সমন নেয়। তবে আদালত কর্মচারীদের ভুলেও সঠিক সাক্ষীদের জবানবন্দী ও জেরা গৃহীত হওয়ার পরেও রিকল করা ছাড়াই আসতে পারেন যদি না পূর্বে সাক্ষ্য দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারী তার নামটি অভিযোগপত্র হতে বিশেষ চিহ্ন দ্বারা না কাটেন।
আরেকটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে, সাক্ষীরা আদালতে এসে তাদের তদন্তকালীন সময়ে প্রদত্ত জবানবন্দী খুঁজে পায় না। কেস ডায়েরি বা সিডি পাওয়া যায় না। প্রসিকিউটরদের অব্যবস্থাপনায় সরকারি সাক্ষীরা নথি দেখার সুযোগ পেলেও পাবলিক সাক্ষীরা তা পায় না। ফলে তারা সাক্ষ্য আইনের ১৫৯ ধারায় বিধান মতে তাদের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিতও করতে পারেন না। তাই মানসম্মত ও সতেজ সাক্ষ্য প্রদানের জন্য সিডি সংরক্ষণ অপরিহার্য।
এবার আসি সাধারন সাক্ষীদের বিষয়ে। বাস্তবে দেখা যায়, বেসরকারি সাধারণ সাক্ষীগণ মামলার সমন, নোটিশ পেলে তার ২/১টি তারিখের মধ্যেই আদালতে আসে। কিন্তুু আদালতে আসার পর তারা জানেন না কোথায় যেতে হবে, কি বলতে হবে এবং আসামীপক্ষের প্রশ্নের উত্তর ও সাজেশনে কি বলতে হবে। এপিপিদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে কোর্টে এসেও ফিরে যান। আরো ফিরে যান কোর্ট রেভারেন্স হলে কিংবা বিচারক প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে থাকলে। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট মামলায় সাক্ষীকে উত্থাপন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করার বা অবকাশ করার মত অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা না থাকায় সাক্ষী দিনভর বিরক্ত হয়ে চলে যায়। তাদের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার কোনো খরচাদি সরকারীভাবে প্রদান করা হয় না। এভাবে বেসরকারী সাক্ষীরা নিজ খরচে আদালতে এসে নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হন। অথচ সাক্ষীদের যুক্তিসংগত খরচ প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে আইন (সিআরপিসি ৫৪৪ ধারা) ও প্রজ্ঞাপন থাকা স্বত্ত্বেও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর থেকে এ খাতে কোন বাজেট দেওয়া হয় না। আর পক্ষগণের আবেদনক্রমে কোনো সাক্ষীকে হাজির করা হলে তার যুক্তিসংসগত খরচ আদালতে জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও {সিআরপিসি ২৪৪(৩) ধারা} বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় কালেভদ্রে। ফলে বেসরকারী সাক্ষীরা আদালতে আসতে অনাগ্রহী হন।
এছাড়াও, অনেক সময় সাক্ষীকে শুধু সাক্ষী হওয়ার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাক্ষরও নেওয়া হয় যা ঘটনাস্থলে করার কথা ছিল। তাদের সাথে অনেক সময় শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা হয় না, বরং আসামীর মত আচরণ করা হয়। তাই অনেকে সাক্ষী হওয়াকে ঝামেলা ও হয়রানিমূলক মনে করেন। এজন্য কাউকে সাক্ষী করার পূর্বে তার মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, মামলা দায়ের হলে তা প্রত্যাহার করা অথবা চালু হলে সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদান হতে বিরত রাখার লক্ষ্যে অপরাধী বিভিন্ন রকম হুমকী, ভয় ভীতি প্রদর্শন বা চাপ প্রয়োগ করে। গুরুতর অপরাধে কখনো কখনো সাক্ষীদের প্রাণনাশেরও নজির রয়েছে। ফলে সাক্ষীগণ নিঃশঙ্ক চিত্তে নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারেন না। এরূপ প্রেক্ষাপটে সাক্ষীদের নিরাপত্তা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন দেশে এ সংক্রান্তে আইন বা নীতি থাকলেও আজও আমাদের দেশে ভিকটিম ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ করা হয়নি।
সাক্ষী ব্যবস্থাপনায় আরেকটি ক্রটি হচ্ছে, সমন বা ওয়ারেন্ট সঠিকভাবে জারী না হওয়া এবং জারী রিপোর্ট যথাসময়ে না আসা। কোন সাক্ষী কেন আসলো না তা সর্বাগ্রে জানতে হবে এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭১(২) ধারানুসারে আদালতে সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব পুলিশের। বিচার ব্যবস্থায় সাক্ষীর সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নানা কঠোর আদেশ, পরিপত্র ইত্যাদি জারি করেছেন। নানা ধরনের সাধুবাদযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আদতে সমস্যার মূলে গিয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় সেগুলো ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা রোধে সাক্ষী ব্যবস্থাপনায় নি¤œলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
ক) সাক্ষী ব্যবস্থাপনার নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে যেখানে সাক্ষীর শ্রেণীভেদে বিশেষ সুবিধা ব্যবস্থাপনা এবং কিভাবে আদালত, পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও প্রতিশ্রুতিশীল সাক্ষ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় সেজন্য অনুসরণীয় বিশেষ নির্দেশনা উল্লেখ থাকবে।
খ) সরকারি সাক্ষীদের নামের তালিকা অনুসারে মামলা পৃথক করতে হবে এবং এক সাক্ষীকে একাধিক মামলায় একই দিন, আগের দিন বা পরের দিন রাখতে হবে। এটি নিঃসন্দেহে সাক্ষী ব্যবস্থাপনায় সরকারি ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমাবে।
গ) সাধারণ সাক্ষীদের আদালতে আসা-যাওয়ার পথ খরচ, খাবার ও প্রয়োজনে রাতে থাকার যুক্তিসংগত খরচ বাবদ পুনরায় বাজেট দিতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত প্রয়োজনে শিশু, অশীতিপর ও প্রতিবন্ধী সাক্ষীর অভিভাবক বা এটেনডেন্টকেও এই খোরাকী ভাতার আওতাভূক্ত করতে হবে।
ঘ) সাক্ষী ব্যবস্থাপনার অ্যাপস বা সফটওয়্যার তৈরী করতে হবে। সমন বা ওয়ারেন্টের হার্ডকপির পাশাপাশি মোবাইলে কল বা এসএমএস, হোয়াটস অ্যাপ, ই-মেইল বা সাক্ষী ব্যবস্থাপনার অ্যাপসের মাধ্যমে মেসেজ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
ঙ) অভিযোগপত্রে অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর নাম অন্তর্ভূক্তিকরণ পরিহার করতে হবে। অভিযোগপত্রের কোন কোন সাক্ষীর প্রতি সমন বা ওয়ারেন্ট দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারককে বিশেষ নজর দিতে হবে।
চ) অভিযোগপত্রে সরকারী সাক্ষীর সার্ভিস আইডি ও মোবাইল নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো আমলী আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট এরূপ তথ্য সম্বলিত সাক্ষীর নাম না থাকলে উক্ত অভিযোগপত্র গ্রহণ করবেন না।
ছ) কোনো সরকারী সাক্ষী যেন কোনোভাবেই ভুল মেসেজ পেয়ে সাক্ষ্য দিতে না আসে তা পুলিশ সুপারকে নিশ্চিত করতে হবে।
জ) কোনো বিচারক প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে থাকলে সাক্ষীদের বিশেষ করে চিকিৎসক, পুলিশসহ সরকারি কর্মকর্তাদের পূর্বেই জানিয়ে দিতে হবে। যদি জানানো না যায় এবং ধার্য উক্ত আদালতে সাক্ষী চলে আসে তবে উপস্থিত সাক্ষীদের সমমর্যাদা সম্পন্ন অন্য কোনো আদালতের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো সরকারী সাক্ষী আদালতে এসে যেনো ফিরে না যায় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ কর্তৃক উপস্থাপিত সাক্ষীকে পাবলিক প্রসিকিউটর যাতে ফেরত দিতে না পারে সেদিকেও আদালতের খেয়াল রাখতে হবে।
ঝ) যদি অপরিহার্য কারণে উপস্থিত সাক্ষীদের পরীক্ষা করা সম্ভব না হয় তাহলে অপ্রয়োজনীয় সময় বিলম্ব না করে কেসের তারিখ মুলতবী ঘোষণা করতে হবে এবং পরবর্তী তারিখে সবার আগে সেই সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে।
ঞ) আদালতে বিচারকের সময় অসীম নয়, বিচার প্রার্থীদের শক্তি ও ধৈর্য অপার নয়। সারাদিন অপেক্ষায় থাকার পর শেষ বিকেলে এসে “সাক্ষ্য হবে না” শোনাটা সাক্ষী ও বিচার প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক এবং বেদনাদায়ক। একেক সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরায় একেক রকম সময় থাকতে পারে তাই সাক্ষীর শ্রেণী ভেদে সম্ভাব্য সময় বিবেচনায় আদালতের সাক্ষ্য পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সাক্ষীর মামলাগুলোতে একদিনে যেনো সংশ্লিষ্ট বিচারকের সক্ষমতার বেশি সাক্ষী না আসে সেটাও আদালতকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে সাধারণভাবে এটা ২০ জনের বেশী হওয়া সমীচীন নয়।
ট) কোন বিচারক যদি মনে করেন ধার্য তারিখে অধিক সংখ্যক সাক্ষী চলে আসার কারণে সময়ের অভাবে বা নিজের অসুস্থতাজনিত কারণে বা অন্য কোন কারণে সকল সাক্ষীকে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়; তাহলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা বিচারিক এখতিয়ার ও অন্যান্য আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি বিবেচনায় সাক্ষীসহ নথি এক বা একাধিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বদলি করবেন। কয়েকটি জেলায় এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাকেও বিভিন্ন আদালতের সাক্ষ্য গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যেমন, কোন আদালতে ৩০ জন সাক্ষী এসেছে কিন্তু আরেক আদালতে কোন সাক্ষীই আসেনি। সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা বর্ণিত পদ্ধতি প্রয়োগ করে সমন্বয় করতে পারেন।
ঠ) প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষী সংক্রান্ত একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যে সব মামলায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আছেন সে সব মামলার তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করবেন। পরবর্তীতে আইনের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে যতদূর সম্ভব সাক্ষ্য আইনের ৮০ ধারার বিধান অনুসরন করে উক্ত জেলা থেকে বদলির পূর্বেই সিআরআরও এর বিধি ৫০ মোতাবেক সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে।
ড) আদালতে যে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে সেই সাক্ষীর নাম আবশ্যিকভাবে অভিযোগপত্র হতে লাল কালি দিয়ে কেটে দিতে হবে যেন কোনো সরকারি সাক্ষী ভুলক্রমে আদালতে এসে বিড়ম্বনার শিকার না হন।
ঢ) প্রত্যেক সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পর্কিত তথ্যের মধ্যে সহজ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। জিআর মামলার সিডি কোনোভাবেই যেন না হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ণ) পক্ষগণকে জি. আর মামলার মতো নালিশী মামলাতেও (সিআর) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চিকিৎসক সাক্ষীকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
ত) সিআরআরও এর ১৩১ (৪) বিধি সাপেক্ষে সাক্ষীর সাক্ষ্য হাতে লেখার পরিবর্তে বিচারক স্বয়ং বা স্টেনো-টাইপিস্টের সহযোগিতায় কম্পিউটার কম্পোজ করতে হবে। সাক্ষীর সাক্ষ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিচারক-সাক্ষী উভয়দিকেই মনিটর স্থাপন করতে হবে।
থ) সাক্ষীর প্রতি সমন, ওয়ারেন্ট বা আদেশের কপি ইস্যু করার পর প্রসেসের নম্বর ও তারিখ আবশ্যিকভাবে নথিবদ্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যথাসময়ে তা প্রেরণ করছেন কিনা তা বিচারককে ঘন ঘন তদারকি করতে হবে।
দ) সাক্ষী ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই একটি মনিটরিং সেল থাকতে হবে। কোন দিন কোন কোন আদালতে কতজন সাক্ষী উপস্থিত হলো এবং কতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হলো ও কতজন কি কারণে ফেরত গেল সে সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। সাক্ষী ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
ধ) প্রত্যেক জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে একটি হেল্পডেস্ক বা আইনগত তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থাকতে হবে। উক্ত সেবা কেন্দ্রের অন্যতম একটি সেবা হবে সাক্ষীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা। কোন আদালতে কখন সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে এবং কোন প্রশ্নের বা সাজেশনে কি ধরনের উত্তর দিতে হবে সেই সম্পর্কে উক্ত ডেস্ক প্রাথমিক ধারণা প্রদান করবে। এতদ্সংক্রান্তে আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি স্থাপন করা যেতে পারে।
ন) প্রত্যেক জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাক্ষীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা ও ওয়াশরুম রাখতে হবে। নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার থাকতে হবে। এসব জায়গাগুলোতে খাওয়ার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
প) ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫ (জি)(২), ৩৪৯(২), ৩৪৯(এ) ও ৩৫০ ধারার বিধানসাপেক্ষে একজন সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা ক্রমাগতভাবে না নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বা খন্ড খন্ড করে নেওয়া পরিহার করতে হবে।
ফ) প্রতিটি আদালতে অফিসিয়ালি ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন সরবরাহ করতে হবে যাতে সমন, ওয়ারেন্টসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আদেশের কপি সাথে সাথে পিডিএফ বা ইমেজ কপি হোয়াটস অ্যাপ বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যায়।
ব) পুলিশের পার্সোনেল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরেকটু ঢেলে সাজাতে হবে যেন খুব সহজেই একজন পুলিশ সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যায়। পুলিশ সুপারের সংশ্লিষ্ট শাখার সেই সিস্টেমে সহজ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। একইভাবে প্রত্যেক সার্ভিসেরই এমন ডাটাবেজ প্রস্তুত করতে হবে।
ভ) বোবা, বধির, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ইত্যাদি শ্রেণির সাক্ষীদের ইন্টারপ্রিটার এর মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। এই শ্রেণির সাক্ষীদের আদালতে আসা-যাওয়া, আহার ও বিশ্রাম সংক্রান্তে বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
ম) যেকোনো সরকারি সাক্ষীর টিএডিএ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিশাধ করতে হবে। সময়মতো এই বিল পরিশোধ না হলে সরকারি সাক্ষীরা সাক্ষ্য প্রদানে অনাগ্রহী হন।
য) গুরুতর অপরাধের সাক্ষীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
র) প্রবীন, জরাগ্রস্থ ও দূর্বল সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানের সময় প্রয়োজনে কাঠগড়ায় বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ল) যেক্ষেত্রে সাক্ষী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার উপস্থিতি ব্যয়বহুল বা অসুবিধাজনক এবং সময় সাপেক্ষ সেক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০ অধ্যায়ের বিধানাবলী অনুসরণপূর্বক কমিশনে সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।
শ) প্রতিটি জেলায় বিজ্ঞ আইনজীবীর মৃত্যুজনিত কারণে বছরে একবার কোর্ট রেভারেন্স বা শোক সভা করা যেতে পারে।
ষ) সাক্ষ্য প্রদানের জন্য সমন বা ওয়ারেন্টের কপি প্রাপ্তির পরেও একাধিক তারিখে যে সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হন না সে সকল সাক্ষীর প্রতি প্রসেসের সাথে আদেশের কপি প্রেরণ করতে হবে। এরপরেও গরহাজির থাকলে সরকারি বা বেসরকারি নির্বিশেষে সকল সাক্ষীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৫ ধারানুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি সাক্ষীগণ সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে অনুপস্থিত থাকলে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা (ফৌজদারী আপীল নং-৭২৫৩/১৯ ও ৭৩৫৭/১৯) অনুসারে উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ প্রদান করতে হবে। কোনো কোনো বিশেষ সাক্ষীর ক্ষেত্রে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনা করা যেতে পারে।
স) প্রত্যেক সাক্ষীর সাথে মর্যাদা, ন্যায্যতা ও সম্মানের সাথে আচরণ করতে হবে এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখাতে তাদের অবদানের মূল্যায়ন করতে হবে।
ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার সফলতা মূলতঃ আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। সাক্ষীরা তর্কিত বিচার্য বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ও সত্য খুঁজে পেতে আদালতকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে সাক্ষীরা হচ্ছে আদালতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মেরুদন্ড। আজ থেকে দেড় শতাধিক বছর আগে প্রখ্যাত আইন বিজ্ঞানী বেনথাম বলেছেন, সাক্ষী হলো বিচারের চোখ এবং কান। আমরা সাক্ষীকে বিচারের চোখ, কান কিংবা মেরুদন্ড যাই বলি না কেন পক্ষগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত সাক্ষী ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
পুনশ্চ: লেখার শুরুতে বলছিলাম, হেরোইন মামলায় অভিযুক্ত রাজশাহীর সেই গরীব কৃষকের কথা। ২৪ বছর পর ০২ জন সাক্ষী এসেছেন। সেটি পত্রিকায় প্রকাশের ০৩ মাস পর পরবর্তী ধার্য তারিখে এজাহারকারীসহ একজন সঙ্গীয় ফোর্স এসেছেন সাক্ষ্য দিতে। প্রতিবেদনে জানা গেল, এজাহারকারী ও জব্দকারী কর্মকর্তা ছিলেন পুলিশের একজন কনস্টবল যার কিনা ঘটনাস্থলে আসামীকে তল্লাসি করার ক্ষমতাই ছিল না (৩৬ ধারা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০)! বাকী সাক্ষীরা কবে আসবেন সেটাও অনিশ্চিত। অথচ একটি পরিকল্পিত সাক্ষী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতভাবে এমন লাখো মামলায় সাক্ষীদের স্বল্প সময়ে খুঁজে বের করে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করণে সহায়তা করবে।
লেখক: বিচারক (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ), বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস।