বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন নিয়ে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থা বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে এ পদে আপাতত বসতে পারবে না কেউ।
আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন— বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানি করতে বলেছেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ শূন্য থাকবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আদালতে নিপুণের পক্ষে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান ও হারুন-উর রশিদ ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে, জায়েদ খানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী নাহিদ সুলতানা ও মজিবুল হক ভূঁইয়া।
এর আগে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নিপুণের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এদিন বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
রোববার সকালে আদালত জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় আবেদনটি (নিপুণ) শুনবেন। সাড়ে ১১টার দিকে নিপুণের আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সকালে হাইকোর্টের আদেশের প্রত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়েছি। হাতে আছে। বিষয়টি সোমবার (আজ) আসুক। এই আবেদনসহ (স্থগিতাদেশ চেয়ে করা) সিপি (লিভ টু আপিল) করে দিই।’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘ঠিক আছেন দেন। সিপি একবারে শুনে ফেলি তাহলে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দুবার শুনানির চেয়ে একবারে করাই ভালো। আদালত বলেন, কাল কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।
পেছনের কথা
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচন হয়। পরদিন ঘোষিত ফলাফলে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী বলা হয়। পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন নিপুণ। এরপর আপিল বোর্ড সমাজসেবা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর এক চিঠিতে জানায়, আপিল বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ড জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে।
এ অবস্থায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২ ফেব্রুয়ারির চিঠি ও আপিল বোর্ডের ৫ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশে ২ ফেব্রুয়ারির চিঠির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারির চিঠি ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রুল শুনানির জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে পরদিন আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুন, যা ৯ ফেব্রুয়ারি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানি নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে নিপুণের আবেদনটি ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। একই সঙ্গে শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে এই সময়ে দুপক্ষকে (নিপুণ ও জায়েদ) স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় নিপুণের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ওঠে।