প্যারাডাইস পেপারসে প্রকাশিত খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির চিত্র ও বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন করে বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার এবং মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচারের তথ্য দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের জনগণের সম্পদ আর লুটপাট ও পাচার করতে দেওয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্ম তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের পয়সা জনগণকে ফেরত দেওয়ার যেসব আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে তার ব্যবস্থা হবে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশীয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সকল সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৫৬ পৃষ্ঠার প্রশ্নের উত্তরে ১৫৩ পৃষ্ঠাতেই স্থান পেয়েছে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থের বিবরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে ২০১২ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর পাচারকৃত ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার সে দেশ থেকে ফেরত আনা হয়েছে। তারেক রহমান দেশের বাইরে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন। তারেক এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার বিনিময়ে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে পাচার করেছেন। এ ব্যাপারে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকার এফবিআইও তদন্ত করেছে। এর সূত্র ধরে এফবিআই এর ফিল্ড এজেন্ট ডেব্রা ল্যাপ্রিভোট ২০১২ সালে ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা হয়। একইভাবে লন্ডনের ন্যাট ওয়েস্ট ব্যাংকেও প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে খালেদা জিয়ার ছেলেদের টাকার সন্ধ্যান পাওয়া গেছে যা এখনো তদন্তাধীন। এর মধ্যে অন্যতম হলো: বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি, সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় খালেদা জিয়া তিন নম্বর হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। খালেদা জিয়া প্রকাশিত এ সকল সংবাদের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারাডাইস পেপারসে নতুন করে প্রকাশিত নামের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নাম। প্রকাশিত এ নথিতে তালিকায় শীর্ষেই আছে খালেদা পুত্রদের নাম। এছাড়া নতুন প্রকাশিত ২৫ হাজার নথিতে বের হয়ে আসছে আরও রাঘব বোয়ালদের নাম ও তাদের অর্থ পাচারের নানান তথ্য।
প্যারাডাইস পেপারসে দেখা যায়, তারেক জিয়া ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। এছাড়াও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ওয়ান গ্রুপের তিনটি কোম্পানি খোলা হয় ট্যাক্স হেভেনে। তারেক জিয়ার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো বারমুডার বিভিন্ন কোম্পানিতে ২০০৫ সালে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। কোকোর মৃত্যুর পর এই বিনিয়োগ তার স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নামে স্থানান্তরিত হয়। অবৈধভাবে ট্যাক্স হেভেনে জিয়া পরিবারের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।