বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও উচ্চ আদালতের এক বিচারকের ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বার কাউন্সিলের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২১ আগস্ট আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আজ রোববার (৭ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেছেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলে- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। জুম্মন সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। বার কাউন্সিলের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু।
এর আগে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই আবেদন দায়ের করা হয়।
আপিলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে সে সময় ব্যারিস্টার অনিক আর হক জানান, আবেদনে জুম্মানকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশের বৈধতা ও দুই আইনজীবীর জরিমানা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার পরও জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল একই বছরের ৮ নভেম্বর খারিজ করেন হাইকোর্ট।
এছাড়াও এ মামলার দুই রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দেন আদালত। তাদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
আদালত তার রায়ে বলেন, এই ধরনের রিট দায়ের করার জন্য রিটকারীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণে জরিমানার আদেশ হওয়া উচিত। কিন্তু তাদের (দুই রিটকারী) বয়স ও প্র্যাকটিসের টোকেন (জরিমানা) স্বরূপ ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হলো।
জুম্মানের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে জুম্মানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তানিয়া আমীর।
হাইকোর্টের এ আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতির কক্ষের সামনে রাখা একটি বক্সে সাধারণ আইনজীবীরা টাকার কয়েন জমা শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে কবিতাটি শেয়ার করার জন্য আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছিল, বক্সের গায়ে সেই কবিতা সেঁটে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীরা বক্সে এক টাকা করে কেন জমা দিচ্ছেন জানতে চাইলে ব্যারিস্টার অনিক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের দুজন সতীর্থ আইনজীবীক একশ এক টাকা দুশ টাকা করে জরিমানা করেছিলেন। আমরা মনে করি একটা রিট পিটিশন দায়ের করার জন্য কোনো আইনজীবীকে যদি জরিমানা করা হয়, সেটি শুধু ওই দুজনের না সব আইনজীবীর ওপরই বর্তায়। তাই আমরা সবাই মিলে সেটি পরিশোধ করছি।
২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর বিচারপতি তারিক উল হাকিম আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং কয়েকদিন দায়িত্বপালন শেষে অবসরে যান।
পরবর্তীতে রিট আবেদনটির ওপর জারি করা রুল বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়।
আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।
পরে ২১ ও ২৮ নভেম্বর এবং গত ১১ ও ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের মোট চারটি বেঞ্চ ওই রিট শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি তারিক উল হাকিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বিভাগ রিটটি শুনতে সম্মতি প্রকাশ করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ গত ১৯ সেপ্টেম্বর জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
তাই রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকী সহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।