বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস- ২০২৩। আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল ১০টায় আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ (১৪, আব্দুল গনি রোড) থেকে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৫, কলেজ রোড) পর্যন্ত একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
দেশে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সহায়তা দেয় সরকারের একটি সংস্থা। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এই সেবা পাওয়া যায়।
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত) সারা দেশে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ ব্যক্তি বিনা মূল্যে সরকারি আইনি সহায়তা পেয়েছেন।
অসহায়, দরিদ্র, অসচ্ছল মানুষ যাতে বিনা মূল্যে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা–পরামর্শ নেন, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিবছরের ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ বিনা মূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’। আর্থিক অসচ্ছল ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে বিনা মূল্যে দেওয়া কার্যক্রমগুলোর মধ্যে আইনি পরামর্শ, আদালতে মামলা পরিচালনা, শ্রমিক সহায়তা, বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি ও তথ্যসেবা রয়েছে। এ বছর দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, অসচ্ছলতা, অজ্ঞতা ও নানাবিধ আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতার কারণে দেশের গরিব-দুঃখী ও সহায়-সম্বলহীন জনগণ অনেক ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০–এর মাধ্যমে সমাজের হতদরিদ্র ও অসচ্ছল জনগোষ্ঠী বর্তমানে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা পাচ্ছে, যা বিচারব্যবস্থায় সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণকে বিনা খরচে সরকারি আইনগত সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যা সারা দেশের আদালতসমূহে মামলাজট হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান’ আইন করা হয়। এই আইন অনুসারে, ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা গঠন করা হয়। তবে জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবসহ নানা কারণে সূচনাকাল থেকে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল স্থবির।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জন্য পৃথক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি জেলা আদালতে সংস্থার কার্যালয় স্থাপন করা হয়।
এখন দেশের ৬৪ জেলায় স্থায়ী লিগ্যাল এইড (আইনি সহায়তা) কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে লিগ্যাল এইড কমিটি। সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ৮২ হাজার ৫৮৮টি মামলা বা বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে (এডিআর) মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, গত ১৪ বছরে প্রায় ৯ লাখ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারী, পুরুষ ও শিশুকে বিনা মূল্যে আইনি সেবা দেওয়ার এই কার্যক্রম বড় একটি অর্জন।