দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে, মেঝে ফেটে চৌচির। হঠাৎ কেউ প্রবেশ করলেই আঁতকে উঠবে। না, পরিত্যক্ত ভৌতিক কোনো ভবনের বর্ণনা নয়, এটি আদালত ভবন।
বরগুনার পাথরঘাটায় ভাড়া করা জরাজীর্ণ এমনই এক বিদ্যালয় ভবনে দীর্ঘ বছর ধরে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন বিচারক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিন চৌকি আদালত পরির্দশনে এসে আদালত ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে গত ১১ অক্টোবর বরগুনা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত একটি আদেশে ভাড়ায় ভবনে পরিচালিত আদালত ভবন ছেড়ে বিকল্প ভবন নির্ধারণ করে বিচারকাজ পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে বলা হয়, ‘বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন সম্প্রতি পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিদর্শনে বর্তমান আদালত ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেখতে পান। একটি স্থানীয় বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে আদালত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আদালতের অবকাঠামো এতটাই নাজুক যে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
‘এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে আপনাকে বিকল্প ভবন নির্ধারণ করে আদালত পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। ব্যর্থতায় বর্তমান ভবনে আদালত কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।’
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চলছে। জরাজীর্ণ এ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে বিচারক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। বিগত কয়েক বছর ধরে নিজস্ব ভবনের জন্য দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি বিচারক, বিচারপ্রার্থীসহ আইনজীবীরা।
জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে পাথরঘাটায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গঠন করা হয়। ওই সময় উপজেলা পরিষদের মধ্যে এ আদালতের নিজস্ব ভবন ছিল। বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ায় ২০০৮ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরপরও ওই ভবনে কয়েক বছর বিচারকাজ পরিচালনা করা হয়।
২০১৪ সালের মার্চ থেকে পাথরঘাটা সরকারি কে এম পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে আদালতের কার্যক্রম চলছে। এ ভবনটিরও ছাদের পলেস্তারা প্রায়ই খসে পড়ে।
এমনকি ভবনটির বারান্দার পলেস্তারার নিচ থেকে বিষধর গোখরা সাপের সাতটি বাচ্চা ও প্রায় ৪০টি ডিমের খোসা উদ্ধার করা হয়। এখনও ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম।