নির্বাচনের বছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ জুন) দুপুর পৌনে একটার দিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
এর আগে অর্থমন্ত্রী প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদ অধিবেশন কক্ষে যান। পরে অনুমতি নিয়ে প্রথমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশ করেন। এরপর শুরু করেন ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন।
এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.৩ শতাংশ। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপিরি ১৮ শতাংশ। এবারের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা; যার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)।
আর অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।
বাজেটে ব্যয়ের প্রায় ৭৩ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা আদায়ের কথা বলো হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তব সম্মত। কারণ মানুষ কর পরিশোধে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী।
বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা; আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে বলে সংসদে সম্পূরক বাজেটের বক্তৃতায় বলেছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মতো।
এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা ধার করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আমলে ১৪ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসক) ৪৬টি বাজেট পেশ করেছেন।
সেই হিসেবে এবার ৪৭তম বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত। যা ২৮ জুন সংসদে পাস হবে।
তিন মেয়াদে সর্বোচ্চ বারোটি বাজেট দেওয়ার রেকর্ডটি এতোদিন ছিল প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের। এবার নিজের ১২তম বাজেট পেশ করে সাইফুর রহমানের সেই রেকর্ডে ভাগ বসাচ্ছেন ৮৫ বছর বয়সী মুহিত। আর আওয়ামী লীগ সরকারের এটা ১৮তম বাজেট।
এবার ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ১০৩ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।