এসপি জাহাঙ্গীর ও নুসরাত জাহান

নুসরাত হত্যাকাণ্ড : ফেনীর এসপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য ফেনী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।

সোহেল রানা বলেন, ফেনীর এসপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। দ্রুতই তাঁকে পুলিশের একটি ইউনিটে সংযুক্ত করা হবে। এই সংযুক্ত করা মানে বদলি নয়, সংযুক্ত মানেই তাঁর শাস্তি প্রক্রিয়া শুরু।

এআইজি সোহেল রানা বলেন, কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী (নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা) তাঁর বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে—এমন সংবাদ দিলে ওই ভবনের ছাদে যান নুসরাত। সেখানে বোরকা ও নেকাব পরা চার-পাঁচজন তাঁকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

গত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত।

পরের দিন ১১ এপ্রিল বিকেলে জানাজা শেষে নুসরাতকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুড়িয়ে হত্যার আগে নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, যৌন হয়রানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলার পর ২৭ মার্চ নুসরাতকে থানায় ডাকেন ‍ওসি মোয়াজ্জেম। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি ঘটনা নিয়ে নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করেন, যা পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

এদিকে নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এ ছাড়া নুসরাত হত্যা মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অন্তত চারজনের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ডিআইজি এস এম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের ওই তদন্ত দল ৩০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।