অ্যাডভোকেট মোকাররামুছ সাকলান

করোনা সংক্রমন এড়াতে সুপ্রীম কোর্টে এফিডেভিট হতে পারে যেভাবে

মোকাররামুছ সাকলান:

সাধারনত হাইকোর্ট বা আপীল বিভাগে কোন দরখাস্ত বা আবেদনপত্র জমা দিতে হলে তা এফিডেভিট করে জমা দিতে হয়। হাইকোর্ট বা আপীল বিভাগে এই ধরনের এভিডেভিট করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন আলাদাভাবে এভিডেভিট কমিশনার নিয়োগ দিয়ে থাকেন। যে আবেদনকারী কোন দরখাস্ত জমা দিতে চান তিনি বা তার পক্ষে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে এভিডেভিট কমিশনারের সামনে উপস্থিত হয়ে বলতে হয় যে তিনি দরখাস্তে যেসব ঘটনা লিখেছেন তা তার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য। এছাড়া দরখাস্তের সাথে তিনি যে কাগজপত্র জমা করেছেন তা সঠিক এবং সত্য।

সাধারন সময়ে এভিডেভিট কমিশনারের কাছে বেশ ভিড় থাকে যার ফলে কোন কোন সময়ে একটি এভিডেভিট সম্পন্ন করতে দুইদিন লেগে যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমনের জন্য হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের এভিডেভিট শাখায় যে ধরনের ভিড় থাকে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে তা সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। যে কোনভাবেই সুপ্রীম কোর্টের এভিডেভিট শাখা কোভিড-১৯  ভাইরাস সংক্রমনের জন্য অত্যাধিক ঝুকিপূর্ন একটা জায়গা। আদালতের কার্য সংশ্লিস্ট কাজে যারা নিয়োজিত থাকেন কিংবা আইনজীবী সহকারী বা মামলায় বিচারপ্রার্থির পক্ষে হাইকোর্টের এভিডেভিট শাখায় গিয়ে এভিডেভিট করা আর স্বেচ্ছায় নিজের জন্য ঝুঁকি  টেনে আনা একই কথা। তাহলে প্রশ্ন জাগে এভিডেভিট করা না গেলে কি আদালতের কার্যক্রম কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমন না থামা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে? অথবা আইনে কি কোন বিধান নাই যে, আদালতের বাইরে এই এভিডেভিট এর কাজটি করা যাবে? কিংবা এভিডেভিট করা কি বাধ্যতামূলক?

The Oaths Act, 1873 এর ৪ ধারা অনুযায়ী দেশের সকল আদালতকে Oath এবংAffirmation গ্রহন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।  The Oaths Act, 1873 এর ৫ ধারা অনুযায়ী যে সব ব্যাক্তি কোন আদালতে স্বাক্ষ্য দেন বা কোন ঘটনার সম্পর্কে বর্ননা দেন তাদের কাছ থেকে Oath এবং Affirmation নেওয়া হয়। Oath এবং Affirmation সম্পর্কিত বক্তব্যকেই এভিডেভিট বলা হয়। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ১৩৯ ধারা এবং ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে ৫৩৯ ধারা অনুযায়ী এভিডেভিট করা হয়ে থাকে। এছাড়া রিট মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট রুলস এর চতুর্থ অধ্যায় অনুযায়ী এভিডেভিট করা হয়ে থাকে। হাইকোর্টে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী আপীল ছাড়া অন্য যেকোন দরখাস্ত যেমন রিভিশন, রিভিউ পিটিশন বা জামিনের দরখাস্ত কিংবা রিট পিটিশন জমা দিতে হলে এভিডেভিট করা বাধ্যতামূলক।

সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগের জন্য দুইটি রুলস আছে। এই দুই রুলস অনুযায়ী দুই বিভাগের এভিডেভিট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। হাইকোর্ট রুলসের সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২১ নভেম্বর ২০১২ তে।  আর আপীল বিভাগের রুলসের সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল। দুইটি রুলসে এভিডেভিট করার জন্য আলাদা নিয়ম আছে।

আপীল বিভাগের রুলসের  Order III, বিধি ৭ নং এ বলা আছে- “Affidavits for the purposes of any cause, appeal or matter before the Court may be sworn before a Notary Public or any authority mention edin section 139 of the Code or before the Registrar of this Court, or before a Commissioner generally or specially authorized in that behalf by the Chief Justice.

অর্থাৎ নোটারি পাবলিক কিংবা রেজিস্টার জেনারেল বা প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে কোন কমিশনার আপীল বিভাগের এভিডেভিট করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে The Notaries Ordinance, 1961 এর ৮(ই) ধারা অনুযায়ী একজন নোটারি পাবলিক যে কোন ব্যাক্তির কাছ থেকে এভিডেভিট গ্রহন করতে পারেন।

আবার অন্যদিকে হাইকোর্ট রুলস অনুযায়ী হাইকোর্টে নিয়োজিত এভিডেভিট কমিশনার কর্তৃক এভিডেভিট হতে হবে। অর্থাৎ হাইকোর্ট রুলসে দেখা যায় যে নোটারি পাবলিক কর্তৃক এভিডেভিট করার বিষয়টি সরাসরি বলা হয় নাই।  কিন্তু হাইকোর্ট রুলসের চতুর্থ অধ্যায়ের ৩১ বিধিতে বলা আছে Deponet এর Oath/Affirmation হতে হবে The Oath Act 1873 অনুযায়ী। হাইকোর্ট রুলসের ২য় অধ্যায়ের বিধি 2(IXA)  এ রেজিস্টারের কার্যাবলিতে বলা আছে “to appoint a Commissioner for the Purpose of administering oath/affirmation of an affidavit made outside the Court Building and to fix the cost to be deposited by the concerned party”

অর্থাৎ দেখা যায় হাইকোর্ট বিভাগের Register যদি মনে করেন তবে তিনি আদালতের বাইরে এভিডেভিট করার জন্য Commissioner নিয়োগ দিতে পারেন।

দেওয়ানী কার্যবিধি আইন ১৯০৮ এর ধারা ১৩৯ এ বলা আছে- “In the case of any affidavit under this Code- (a) any Court or Magistrate, or (b) any officer or other person whom 1[the Supreme Court] may appoint in this behalf, or (c) any officer appointed by any other Court which the Government has generally or specially empowered in this behalf, may administer the oath to the deponent.”

আবার ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৫৩৯ ধারায় বলা আছে- “Affidavits and affirmations to be used before High Court Division or any officer of such Court may be sworn and affirmed before such Court or the Clerk of the State or any Commissioner or other person appointed by such Court for that purpose, or any Judge, or any Commissioner for taking affidavits in any Court of Record in Bangladesh.”

দেওয়ানী কার্যবিধি আইন ও ফৌজদারী কার্যবিধি আইন উভয় বিশ্লেষন করলে দেখা যায় আদালত সংশ্লিস্ট ব্যক্তি ছাড়া আদালতের আদেশে অন্য যেকোন ব্যক্তির মাধ্যমে এভিডেভিট করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত যদি মনে করেন তবে কোন আইনজীবী বা নোটারি পাবলিক হিসাবে যেসব আইনজীবী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত তারা উভয়েই আদালতের পক্ষে এভিডেভিট এর কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

যেহেতু সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রুলসে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এভিডেভিট করার বিধান রয়েছে সেহেতু কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমন দেশব্যপী নিয়ন্ত্রণ করার আগ পর্যন্ত হাইকোর্ট এবং আপীল উভয় বিভাগে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এভিডেভিট করার সাধারন আদেশ দেওয়া যেতে পারে। আইনগত ভাবে এই ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে সুপ্রীম কোর্টে বিচার প্রার্থিদের ব্যক্তিগত ভাবে উপস্থিত হওয়ার আবশ্যক তা থাকবে না। বিচার প্রার্থিদের ভোগান্তি কমে আসবে। উচ্চ আদালতে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে। সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে।

লেখক- অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।