অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন

ভিআইপিদের করোনা চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা অতি উৎসাহী মনোবৃত্তি নয়তো?

দেবব্রত চৌধুরী লিটন:

নভেল করোনাভাইরাসে কোনো ভিআইপি (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে খবর প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্য‌ম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকিরের বরাতে এই তথ্য জানা যায়। খবরে জানা যায় ডা. আবু ইউসুফ ফকির গতকাল ২১ এপ্রিল এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আইসিইউ সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে ভিআইপিদের চিকিৎসা করানো হবে। ভিআইপিদের মধ্য যাদের ক্ষেত্রে আইসিইউ দরকার হবে, তাদের গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে। অ্যাপোলো হাসপাতালেও আমরা এখন কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালেই আপাতত ভিআইপিদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। চিকিৎসকরা আক্রান্ত হলেও এখানে দেওয়া হবে চিকিৎসা।

দেশের প্রথম সারির একাধিক পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হলে সরব হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অনেকেরই নিউজ ফিডে দেখা যায় এ নিয়ে আলোচনা। সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য করোনা চিকিৎসায় পৃথক ব্যবস্থা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী কতটা যুক্তিযুক্ত এ নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হয়। অনেকেই ভিআইপিদের করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষ সুবিধাসহ আলাদা হাসপাতাল সংবিধান লংঘনের সামিল বলেও মন্তব্য করেন।

দেখা যাক বাংলাদেশের সংবিধান এ বিষয়টি নিয়ে কি বলা আছে- বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ (১) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’ সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনগণের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।’ ১৯ (১) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।’ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ২৮ (১) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।’

তাছাড়া গতবছরের ৩১ জুলাই দেশের উচ্চ আদালত পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন- ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ ভিআইপি নয়, বাকিরা সবাই রাষ্ট্রের চাকর।’ কাজেই এ আলোচনার শেষ প্রান্তে বলা যায় সংবিধানের উপরে উল্লেখিত অনুচ্ছেদ গুলোর লংঘন করে নভেল করোনাভাইরাসে কোনো ভিআইপি (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা করে বিশেষ হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা খুব একটা যৌক্তিক কাজ হবেনা।

কেউ যদি বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয় তাহলে বিশেষ এই আয়োজন পুরোপুরিভাবেই ভেস্তে যাওয়া অমুলক নয়। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পাশাপাশি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে দেশকে করোনা মুক্ত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে চলছেন। এরকম পরিস্থিতিতে ভিআইপিদের করোনা চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা বাড়াবাড়ি নয়তো?

ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হলে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সরকারের অনেক অর্জন। কারো কারো অতি উৎসাহী মনোবৃত্তি সরকারের ভাল কাজকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিতে পারে বলে সংশয় থেকেই আমার এ লেখার সুত্রপাত।

লেখক: আইনজীবী, জজ কোর্ট, সিলেট।