সংসদ এবং আইনমন্ত্রী
সংসদ এবং আইনমন্ত্রী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ শুনানি শিগগিরই: আইনমন্ত্রী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বহুল আলোচিত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর ‘শিগগিরই’ শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

আজ মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপনের পর বাছাই কমিটিতে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনাকালে ওই রিভিউ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্ট রুলসের ‘এরর অ্যাপারেন্ট অন দ্য ফেইস অব দ্য রেকর্ড’ গ্রাউন্ডে এই রিভিউ চেয়েছি। এ মামলায় রিভিউয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট মেরিটও আছে। মামলাটি শুনানির জন্য আমরা ইতোমধ্যে আপিল বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আপিল বিভাগ শিগগিরিই এই মামলাটি শুনে দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।”

এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ শুনানির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান।

গত বছরের ৩০ জুন সংসদে বাজেট পসের প্রক্রিয়ার সময় ‍মুজিবুল হক চুন্নুরই এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, মহামারীকাল কাটলে রিভিউ শুনানি শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন।

পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলেও তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সেই পরিবর্তন আসে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে। তাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ।

ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হলে ২০১৬ সালের ৫ মে হাই কোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেয়। ফলে হাই কোর্টের রায়ই বহাল থাকে।

ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেওয়া হয়।

সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা বিদেশে গিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এসকে সিনহা ২০১৭ সালে বিদেশে যাওয়ার পর ওই বছর ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।