সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ইউনিসেফের সমঝোতার মেয়াদ বৃদ্ধির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ইউনিসেফের সমঝোতার মেয়াদ বৃদ্ধি

বাংলাদেশে শিশুদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শিশু আদালতকে আরও শিশুবান্ধব করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ আদালত এবং ইউনিসেফের মধ্যে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে গতকাল বুধবার (২০ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যমান এ চুক্তির মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শিশুদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ইউনিসেফের ইতিপূর্বে হওয়া সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ বাড়াতে ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। নীতিগত প্রভাব ও শিশুদের জন্য বরাদ্দ তদারকির জন্য জাতীয় ও বিচারিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, শিশুদের ন্যায়বিচারের জন্য শুধু নীতিকে সমর্থন করলে হবে না। বরং সমস্যাগ্রস্ত ও বিপথগামী শিশুদের জন্য এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে পরিবার বা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকার সময়ে কাছ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে তাদের সমস্যা থেকে দূরে রাখা যায়।

বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, জুভেনাইল বিচারপদ্ধতি কার্যকর মূল্যায়িত হতে পারে, যদি তা বেশির ভাগ শিশুকে অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। শিশুদের এমনটা ভাবতে দেওয়া যাবে না, যাতে তাদের ধারণা হয়, ‘যা-ই করি রেহাই পাব’। জুভেনাল বিচারপদ্ধতি তাদের এভাবে ভাবতে বিরত রাখবে। প্রাথমিকভাবে আচরণ পরিবর্তন ও অপরাধ কমানোর দিকে নজর দিয়ে সামগ্রিকভাবে একটি কার্যকর জুবেনাল বিচারপদ্ধতি গড়ে তোলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, ‘যে শিশু পরিবারহীন হয়ে পথে থাকে, সে-ও আমাদের শিশু। তাদের উৎসাহ ও পরম যত্ন দরকার। যে অবস্থায় তারা থাকে এবং যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়, সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। যদি আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণে সফল হই, তাহলে তারা ভবিষ্যতে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবে।’

দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, কোনো শিশুই খারাপ হয়ে জন্মায় না। বড় হতে হতে সে খারাপ হয়। জুবেনাল বিচারপদ্ধতির কর্তৃত্বপরায়ণ ধারণা আদালতে শিশুকে শিশু হিসেবেই দেখে। শিশু অপরাধীকে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর মতো বিবেচনা করলে হবে না, এটি একটি সাধারণ ধারণা। এর অর্থ আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুদের ক্ষেত্রে কোনো ফৌজদারি রেকর্ড, কারাগার পাঠানো হবে না। বিদ্যমান আইন অনুসারে শিশু আদালতের পরিবেশ, আসনবিন্যাস, সজ্জা এবং শিশু আদালতের কার্যক্রম হবে অনানুষ্ঠানিক ও শিশুবান্ধব।

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ইউনিসেফের সমঝোতার মেয়াদ বৃদ্ধির চুক্তি স্বাক্ষর

শিশু অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের এ দেশীয় প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার, কমিটির সদস্য ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বক্তব্য দেন। হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দা হাফসা ঝুমার সঞ্চালনায় ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন।

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, “ইউনিসেফ আর আমরা খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আগের থেকে পরিস্থিতি এখন আরও উন্নতির দিকে। আশা করি শিশুদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের সময় সংশ্লিষ্ট সবাই আরও সচেতন হবে।”

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের কান্ট্রি প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, “শিশু আইন ২০১৩ শিশুদের অধিকার রক্ষায় একটি অন্যতম আইনি দলিল। তবে এই আইনের কার্যকর প্রয়োগের ওপরই মূলত এর সাফল্য নির্ভর করছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।” শিশুদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ইউনিসেফ ইতোমধ্যে ১৬টি পাইলট প্রজেক্ট পরিচালনা করেছে উল্লেখ করে এডুয়ার্ড ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইউনিসেফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য ও শিশু আদালতগুলোকে শক্তিশালী করতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউনিসেফের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়, যার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এর আগে আজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ বৃদ্ধি করে নতুন স্মারক স্বাক্ষর হয়।

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম