চট্টগ্রামে উৎসব মুখর পরিবেশে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন চলছে

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন১৮’।

আজ রোববার (১১ই ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে আইনজীবী সমিতি অডিটরিয়ামে। নির্বাচন কমিশনার আখতার কবির চৌধুরী জানান, এবার নির্বাচনে ৩ হাজার ৭শ ১৫ জন ভোটার।

প্রার্থীদের প্রত্যেকেই জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কে এগিয়ে থাকছে সে ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের কেউই আগাম ভবিষ্যৎবাণী করতে নারাজ।

সকাল থেকে কোর্ট হিল প্রবেশমুখী একমাত্র রাস্তায় দাড়িয়ে ভোটারদের কাছে প্রচারনা ও ভোট কামনা করছে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা। এসময় রাস্তায় গাড়ী চলাচলে বাধা ও যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন ১৮’ এর সুস্পষ্ট নিষেধ লঙ্ঘন করে এবারের নির্বাচনে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষানবীশ আইনজীবী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছেন। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাজমুল আহসান খান ল’ইয়ার্সক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, “সোনালী ব্যাংকক চত্বর থেকে লাল বিল্ডিং পর্যন্ত এরিয়াকে আমরা সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আমার এই এলাকাতে কোন শিক্ষানবীশ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগ দিব।”

নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ” সুষ্ঠ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আশা করি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহন করতে পারব।”

আইনজীবী ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভোট চাচ্ছেন সভাপতি পদপ্রার্থী তিন প্যানেলের তিনজন। তাদের কাছে নির্বাচন কেমন হচ্ছে এবং কোন ধরনের অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, “এখনো পর্যন্ত সবকিছু সুন্দর হচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট আছি।”

প্রায় দেড় দশক ধরে তিন প্যানেলে বিভক্ত হয়ে আইনজীবীরা সমিতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এবার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি নামের আরেকটি সংগঠন প্যানেল দিয়েছে।

তবে, কার্যনির্বাহী পদসহ সবগুলো পদে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ।

অপরদিকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল ভাবধারায় বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবী সংসদ সম্পাদকীয় পদের সবকটিসহ একটি নির্বাহী সদস্যপদে প্রার্থী দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এবার প্রথম প্যানেল ঘোষণা করে মাঠে রয়েছে। এ সংগঠনটি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জন প্রার্থী দিয়েছে।

নির্বাচনে ১৯ পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাজমুল আহসান খান আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার অমর প্রসাদ ধর। তম্মধ্যে সভাপতি পদে ৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ জন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে ৩ জন করে, সহ-সাধারণ সম্পাদক, ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক ও অর্থ সম্পাদক পদে ৪ জন করে, পাঠাগার সম্পাদক ও তথ্য- প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৩ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাহী সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ২২ জন।

কয়েকটি সংগঠনের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি, নির্বাচনপূর্ব নানা নাটকীয়তায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও প্যানেল আধিক্যের কারণে এবার নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ বেশ জটিল হয়ে ওঠেছে বলে মনে করেন সাধারণ আইনজীবীরা।তবে, ভোটারদের মতে সভাপতি পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর। এরা হলেন ঐক্য পরিষদের এএসএম বদরুল আনোয়ার, সমন্বয়ের শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সমমনা’র চন্দন দাশ। এ পদে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির প্রার্থী কামাল সাত্তার চৌধুরী অন্যদের ভোট ব্যাংকে হানা দিয়ে কিছু ভোট নিজের ব্যাংকে টানতে পারে ।

অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে সমন্বয়ের উত্তম কুমার দত্ত, ঐক্যের মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সমমনার নুরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিকের জহীর উদ্দীন মাহমুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমন্বয়ের টিকেটে গেল নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু হানিফ ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মুকিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সম্পাদকীয় অন্যান্য পদের প্রার্থীরা হলেন : সিনিয়র সহ-সভাপতি সমন্বয়ের মোহাম্মদ ছুরত জামাল, ঐক্যের মো. ইছহাক, সমমনার মো. মাফুজুর রহমান চৌধুরী। সহ-সভাপতি সমন্বয়ের মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ঐক্যের মো. নুরুদ্দিন আরিফ চৌধুরী, সমমনার একেএম রুহুল আমিন। সহ-সাধারণ সম্পাদক সমন্বয়ের মোহাম্মদ ইয়াছিন খোকন, ঐক্যের মুহাম্মদ কবির হোসাইন, সমমনার সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিকের নারায়ন প্রসাদ বিশ্বাস।

অর্থ সম্পাদক পদে সমন্বয়ের মঈনুল আলম চৌধুরী টিপু, ঐক্যের মোহাম্মদ শফিউল হক চৌধুরী সেলিম, সমমনার হামিদ আলী চৌধুরী, গণতান্ত্রিকের মো. মোশারেফ হোসেন। পাঠাগার সম্পাদক পদে সমন্বয়ের জিকো বড়–য়া, ঐক্যের মো. নুরুল করিম এরফান, সমমনার ভাস্কর রায় চৌধুরী। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে সমন্বয়ের রুবেল পাল, ঐক্যের হাসনা হেনা, সমমনার আক্তার বেগম, গণতান্ত্রিকের মোহাম্মদ মনির হোসেন। তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে সমন্বয়ের মো. রাশেদুল আজম রাশেদ, ঐক্যের মো. হেলাল উদ্দিন আবু, সমমনার মোহাম্মদ ফারুক মাহমুদ।

নির্বাহী সদস্য, সমন্বয় পরিষদ : ফারহানা রবিউল লিজা, মুহাম্মদ বরকত উল্লাহ খান, মোহাম্মদ আফজাল হোসাইন, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদুন্নবী শিমুল, রুপম রায়, সাহেদা বেগম, সঞ্জীব কুমার ধর, সেলিনা আক্তার ও ইয়াসিন মাহমুদ তানজিল।

ঐক্য পরিষদ : এইচএস সোহরাওয়ার্দী, মো. এনামুল হক, মো. হাসান কায়েস, মো. লোকমান, মো. ওমর ফারুক, মো. সরোয়ার হোসাইন লাভলু, মোহাম্মদ আলী ইয়াছিন, মোহাম্মদ এহছানুল হক, মোহাম্মদ ইয়াছিন, মুহাম্মদ আকিব চৌধুরী।

নির্বাহী সদস্যপদে সমমনা সংসদের মো. এনামুল ইসলাম ও গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির উত্তম বিশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী/চট্টগ্রাম প্রতিনিধি