সংশোধন করে বিজিএমইএ’কে ফের মুচলেকা দিতে হবে

‘বহুতল ভবন ভাঙতে এবারের পর আর সময় চাইবে না’- বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দাখিল করা এমন মুচলেকায় কিছু অস্পষ্টতা থাকায় তা সংশোধন (মোডিফাই) করে ফের সোমবারের (০২ এপ্রিল) মধ্যে দিতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার (২৮ মার্চ) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এ মামলায় হাইকোর্টের অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিজিএমইএ’র বোর্ড অব ডিরেক্টরসদের পক্ষ থেকে একটি মুচলেকা দাখিল করা হয়েছিলো। সেখানে বলা হয়েছিলো, বোর্ড অব ডিরেক্টরস আর সময় চাইবে না। যদি চায় তাহলে তারা দায়ী হবে। তখন কোর্ট প্রশ্ন তুলেছেন যে, বিজিএমইএ’র বোর্ড অব ডিরেক্টরস ৬ মাস ১ বছর পর নাও থাকতে পারে। সে বিষয়টার কোনো ব্যাখ্যা নাই। আরেকটা বিষয় হলো আপনারা বলেছেন, ভবন ছেড়ে দিবেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা ছিলো ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙতে হবে। সে বিষয়েও কিছু বলা নাই। তখন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে নতুন করে মুচলেকা দেওয়ার কথা বলেন তাদের আইনজীবী। সেই মুচলেকায় বলা থাকবে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আর সময় চাওয়া হবে না। সময় শেষ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিএমইএ নিজেরাই ভাঙবে। আদেশ না মানলে বিজিএমইএ দায়ী থাকবে। সোমবার মুচলেকা দাখিল করতে বলা হয়েছে। আশা করি আদালত সোমবার সময়ের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

আর সময় চাইবেনা এমন মুচলেকা দিতে বিজিএমইএকে মঙ্গলবার আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মতো আরও একবছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ২৫ মার্চ এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগ।

গত বছরের ৮ অক্টোবর বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনেরভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।

পরে একই বছরের ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কতো সময় লাগবে- তা ৯ মার্চের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে ভবন ভাঙার রায় বহাল ও ভবন ভাঙতে গত বছর ১২ মার্চ ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে ছয়মাসের সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।