বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি: হতে চান জজ-ম্যাজিস্ট্রেট?

১২তম বিজেএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। অনলাইনে আবেদন করা যাবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বিশেষ আয়োজনে লিখেছেন ১০ম বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম ফরিদ উদ্দীন ও ১১তম বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম রিমি সাহা।

১২তম বিজেএস নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। নেওয়া হবে ৫০ জন। উত্তীর্ণ হওয়ার পরে দেশের বিভিন্ন আদালতে নিয়োগ দেওয়া হবে সহকারী জজ হিসেবে। ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনার সময় তাঁরা বিবেচিত হবেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া যাবে www.bjsc.gov.bd/blog-detail-fullwidth.php?blog=17 ev goo.gl/aAf7zQ লিংকে। অনলাইনে কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে (www.bjsc.gov.bd) আবেদন করতে হবে। আবেদন করা যাবে ৫ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

আবেদনের যোগ্যতা
যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক বা দ্বিতীয় শ্রেণির এলএলএম ডিগ্রি থাকলেই আবেদন করা যাবে সহকারী জজ পদে। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকলেও আবেদন করা যাবে। বিদেশি ডিগ্রি থাকলে ইকুইভেলেন্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে। ১ মার্চ ২০১৮ তারিখে সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৩২ বছর।

পরীক্ষার ধরন
প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ), লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলিতে থাকবে ১০০ নম্বর। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও আইন বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর।

লিখিত পরীক্ষায় দিতে হবে ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, গণিত ও দৈনন্দিন বিজ্ঞান, দেওয়ানি মামলাসংক্রান্ত আইন, অপরাধসংক্রান্ত আইন, পারিবারিক আইন, সাংবিধানিক আইন ও জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ও সাক্ষ্য আইন, ভুমি, চুক্তি, রেজিস্ট্রেশন, সম্পত্তি হস্তান্তর ও অন্যান্য আইন, শিশু, নারী, পরিবেশ ও আইনগত সহায়তা প্রদান আইন এবং দুর্নীতি দমন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মানবপাচার প্রতিরোধ ও অর্থঋণসংক্রান্ত আইন বিষয়ে পরীক্ষা হবে। উত্তীর্ণ হলে ডাকা হবে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায়। তিনটি পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে পাস ধরা হবে। তবে বিজেএস পরীক্ষায় পাস নম্বর তোলা মানেই সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নয়। ভালো নম্বরধারীরাই নিয়োগ পেয়ে থাকেন।

প্রিলিমিনারিতে টিকতে হলে

১১তম বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী রিমি সাহা জানান, নবম, দশম ও এগারোতম প্রিলিতে আইন থেকেই ৬০-৮০টি প্রশ্ন এসেছিল। বাকি প্রশ্নগুলো এসেছে সাধারণ বিষয় থেকে। সব মিলে ১০০ নম্বর। তাই প্রিলির জন্য জোর দিতে হবে আইনের বিষয়ের ওপরেই। সাধারণ জ্ঞানের জন্য দৈনিক সংবাদপত্র, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক সাময়িকী পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে বেশি প্রশ্ন আসে। বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণেও নজর দিতে হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সিলেবাস অনুসরণ করলেই হয়ে যাবে। গণিত ও ইংরেজির জন্যও তাই।

তিনি বলেন, ‘আইনের ধারাগুলো পড়ে যা বুঝতাম তা-ই বিশ্লেষণ করে নোট রাখতাম। এভাবে প্রিলির আগে গুরুত্বপূর্ণ সব আইন পড়া শেষ করেছিলাম। প্রতিটি ধারা লেখার পরে কিছু জায়গা ফাঁকা রাখতাম। এ বিষয়ে কোনো মামলা পেলে তা টুকে রাখতাম। এতে করে সংশ্লিষ্ট ধারার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মামলার বিষয়টিও জানা হয়ে যেত। বাজারে বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে প্র্যাকটিস করেছি।’

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
জুডিশিয়াল পরীক্ষার সিলেবাস পাওয়া যায়। এটি সংগ্রহ করে পড়তে হবে। রিমি সাহা জানান, দেওয়ানি মামলাসংক্রান্ত আইনের পরীক্ষা হবে এক দিনে। তাই একসঙ্গে পড়তে হবে লিমিটেশন অ্যাক্ট, স্পেসিফিক রিলিভ অ্যাক্ট, সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ও স্যুাট ভ্যালুয়েশন অ্যাক্ট। দেওয়ানি আইন থেকে পড়তে হবে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম, ডিগ্রি, আপিল, সমন জারি, অর্ডার, জুরিসডিকশন, আরজি, ইন্সপেকশন, ইনহেরিট্যান্স পাওয়ার টু দ্য কোর্ট, রিসিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।

অপরাধসংক্রান্ত আইনের পরীক্ষা হবে একসঙ্গে। থাকবে ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, স্পেশাল আইন, আর্মস অ্যাক্টস, দ্রুত বিচার আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টস। ফৌজদারি কার্যবিধিতে পড়তে হবে ফার্স্ট ইনফোরশেন রিপোর্ট, চার্জশিট, আমলযোগ্য অপরাধ, আমল অযোগ্য অপরাধ, জবানবন্দি, ইনকোয়ারি, ইনভেস্টিগেশন, অ্যারেস্ট ইউথআউট ওয়ারেন্ট, জেরাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। দণ্ডবিধিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, আঘাত সম্পর্কিত ধারাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ব্যতিক্রম ধারাগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

পারিবারিক আইনগুলোতে পড়তে হবে মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ও যৌতুক নিরোধ আইন। মুসলিম আইনে বিভিন্ন ধরনের জুডিশিয়াল ডিসিশন দেখতে হবে, বিয়ে, তালাক, দান, অসিয়ত, গার্ডিয়ানশিপ বিষয়গুলো পড়তে হবে।

সাংবিধানিক আইন, জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ও সাক্ষ্য আইন বিষয়ে এক দিনে পরীক্ষা হবে। পড়তে হবে ফান্ডামেন্টাল রাইট, রুল অব ল, সেপারেশন অব পাওয়ার, অ্যাফেক্টস অব ভায়লেশন অব ফান্ডামেন্টাল রাইট। প্রতিটি আইনের ধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলার রায় পড়তে হবে।

বাংলা, গণিত ও ইংরেজির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুসারে পড়তে হবে।

রিমি সাহা জানান, লিখিত পরীক্ষায় সময় কম পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। উত্তরে কোন ধরনের রেফারেন্স আনা যাবে, কোন আইনের কোন ধারাটি লেখা যাবে তার একটি বায়োগ্রাফি মনে মনে আঁকতে হবে। তারপর বিশ্লেষণসহ সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে হবে।

মৌখিক পরীক্ষা
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সব সময় যে আইন থেকেই প্রশ্ন করবে এমনটি না-ও হতে পারে। পরীক্ষার্থীর আইনসংক্রান্ত জ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, মানসিক দক্ষতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, বাচনভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি বিষয় যাচাই করা হতে পারে।

বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেল ২০১৬ অনুসারে ৩০৯৩৫-৬৪৪৩০ টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হবে। একজন সহকারী জজ জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ পর্যন্ত হতে পারেন।

বড় সিলেবাস দেখেই খেই হারাবেন না

বড় সিলেবাস দেখে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলে জানিয়ে ১০ম বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারীফরিদ উদ্দীন বলেন, আমার বিশ্বাস, একটি চাকরিকে টার্গেট করে পড়াশোনা করলে সাফল্য আসবেই। বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির কথা ভুলে যান। আপনার ধ্যান-জ্ঞান হবে শুধুই সহকারী জজ হওয়া। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, একেক সময় একেক ধরনের পড়াশোনা করি। ফলে আমরা Jack of all trades, master of none. আজ থেকে আপনি জুডিশিয়ারির সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকুন। আমি নিশ্চিত, আপনি এবারই জজ হবেন অথবা পরেরবার কিংবা তার পরেরবার। জজ আপনি হবেনই। হওয়াটাই বড় কথা।

বিশাল বড় সিলেবাস দেখে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলে। ভাবছেন, আগে পড়া নেই, এই কয় দিনে এত বড় সিলেবাস কিভাবে শেষ করব? আগে খুব বেশি পড়া আমারও ছিল না। জজ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এবং বিশাল বড় সিলেবাস দেখে this is the last time বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ধরেই নিলাম, আপনার ভালো প্রস্তুতি নেই। কিন্তু আপনি তো আইনের ছাত্র। আইনের বইগুলোতে কোথায় কী আছে আপনার জানা। আজ থেকেই শুরু করুন। A good beginning is half done. ভাবছেন, আপনার রেজাল্ট খারাপ? অথবা আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিখ্যাত নয়? ভাইভা বোর্ডে আপনাকে বাদ দিয়ে দেবে! চাকরি হয় যোগ্যতায়। রেজাল্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ফ্যাক্টর নয়। আমার এলএলবিতে সেকেন্ড ক্লাস, এলএলএমে ফার্স্ট ক্লাস। এই রেজাল্ট নিয়ে কোনোদিন হীনম্মন্যতায় ভুগিনি। জানতাম, আমি কী করতে পারি। আর খোঁজ নিয়ে দেখুন, ভালো চাকরি কিন্তু ব্যাকবেঞ্চাররাই বেশি পায়! আপনার ভেতর যে স্ফুলিঙ্গ আছে, সেটার স্ফুরণ ঘটানোর দায়িত্ব আপনারই।

এত কথা কেন বললাম? বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী আগেই ধরে নেয় যে তার হবে না। যুদ্ধ শুরু করার আগেই হেরে যায়। বিশ্বাস করুন, ১০০ শতাংশ প্রিপারেশন নিয়ে কেউ পরীক্ষা দিতে পারে না। যে বিশাল সিলেবাসে পরীক্ষা হয়, তা শেষ করার বা শেষ করেও মনে রাখার সাধ্য কারো নেই। সুতরাং আপনি পাস করবেন—এটা ধরেই আগান। আপনি আপনার সাধ্যের আরো একটু বেশি চেষ্টা করুন। তাতেই সই।

একটা কমন প্রশ্ন, ‘কিভাবে পড়াশোনা করলে জজ হতে পারব?’ আগে প্রিলির প্রশ্নের ধরন কেমন হবে, সেটি একটা ধাঁধার মতো ছিল। এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে আইন থেকে ৬০ থেকে ৮০টি প্রশ্ন হবে। বাকি প্রশ্নগুলো করা হবে ইংরেজি, বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, গণিত, বিজ্ঞান থেকে। প্রিলিতে ৫০ পেলেই আপনি পাস। প্রিলির নম্বর যেহেতু যোগ হয় না এবং ৫০ পেলেই পাস, সেহেতু প্রিলিতে আপনি ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়ার জন্য পড়বেন না। আমি যেটা করেছি সেটা হলো, আমার পছন্দের কিছু সাবজেক্ট ভালো করে পড়েছি। পছন্দের তালিকায় সেসব সাবজেক্ট রেখেছিলাম, যেগুলো রিটেন ও ভাইভায় কাজে লাগবে। প্রিলির প্রশ্ন নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কোথা থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। একটা খাতায় সেই সব টপিক লিখে সেগুলো বিভিন্ন বই থেকে পড়ে ফেলেছি। যেসব বিষয় ভুলে যেতে পারি, সেগুলো নোট করেছি। প্রিলির প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০-৩০ মার্কের যে সাধারণ বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে, সেগুলো কমন ফেলা কঠিন। আপনার বেসিক ভালো হলে এমনিতেই পারবেন। তাই এ বিষয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামিয়ে আইন ভালো করে পড়ুন। সিপিসি, সিআরপিসি, অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট, স্পেসিফিক রিলিফ অ্যাক্ট, পেনাল কোড, সাংবিধানিক আইন, মুসলিম ও হিন্দু আইন, ভূমি আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন—মোটামুটি এই বিষয়গুলো থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। একটি বা দুটি সহায়ক বই কিনে পড়ে শেষ করতে হবে।

আমার মনে হয়েছে, সাধারণ বিষয়াবলির জন্য প্রিলি ডাইজেস্টই যথেষ্ট। অনেকেই বলেন, শুধু ডাইজেস্ট পড়লে হবে? কিন্তু ৯০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী ডাইজেস্ট পড়েই শেষ করতে এবং সব মনে রাখতে পারে না। কারণ এতে প্রচুর তথ্য থাকে। প্রিলিতে ম্যাথ খুব বেশি আসে না। সাধারণ সূত্রের প্রয়োগ সংবলিত ম্যাথগুলো করে রাখা ভালো। সাম্প্রতিক বিষয় পড়ে মাথা নষ্ট না করাই শ্রেয়। তবে চোখ-কান খোলা রাখা উচিত। বাংলা-ইংরেজির জন্য এখন থেকেই প্রিপারেশন নিলে রিটেনে ভালো করা যাবে। ইংরেজি গ্রামারের জন্য আমার পছন্দের বই ছিল জাকির হোসেনের A passage to the English language, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইনের ইন্টারমিডিয়েট গ্রামার বই। তবে এই বইগুলো যতটা না পড়েছি, তার থেকে বেশি পড়েছি ইংলিশ নিউজ পেপার, নেটে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন আর্টিকল। গ্রামার নিয়ে কোনো প্রশ্নের উদ্ভব হলে বা কোনো শব্দের অর্থ জানার দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গে নেটে সার্চ দিয়ে বের করে পড়েছি। বাংলার জন্য সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, মুনীর চৌধুরী ও হায়াত মামুদের ব্যাকরণ বই ফলো করেছি।

এবার আসি রিটেনে। ১০০০ মার্কের পরীক্ষা হয়, ৬০০ মার্ক আইনের ওপর আর ৪০০ মার্ক সাধারণ বিষয়াবলির ওপর। লিখিত পরীক্ষায় কোনো বিষয়ে ৩০-এর কম পেলে ফেল আর সব বিষয় মিলিয়ে ৫০ শতাংশ মার্কস পেলে পাস। ৬০০ নম্বরের আইনের জন্য প্রায় ৫০টি আইন পড়তে হয়, বুঝতে হয়, মনে রাখতে হয়—যা আসলেই ভয় উদ্রেককারী। এত বিশাল সিলেবাস দেখে অনেকেই হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোই পরীক্ষায় আসে, যা একটু চিন্তা করলে কমন ফেলা যায়। আমি রিটেনে একটা প্রশ্নও ছেড়ে আসিনি। ১০০০ মার্কের উত্তর করেছিলাম। অযথা বড় করে উত্তর লিখিনি। কাঠখোট্টা না আবার বাগাড়ম্বরও না। অনেকের স্বভাব আছে পৃষ্ঠা ভরানো। রচনা ২০ পেজ না লিখলে তাদের মন ভরে না। আমার যুক্তি হচ্ছে, একটা বিষয় সম্পর্কে যতটুকু লিখলে সেটা পরিষ্কারভাবে পরীক্ষককে বোঝানো যায়, ততটুকুই লিখব। প্রশ্নের নম্বর কম হলে কম লিখব।

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিক থেকে প্রশ্ন আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে অতীতের বিষয়গুলো টেনে আনা হয়। যেমন—ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার বিবাদে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণ কী? ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ইতিহাস আলোচনা করে এই সমর্থনের যৌক্তিকতা বিচার করুন। এ বিষয়ে বাজারের যেকোনো একটা লিখিত ডাইজেস্ট পড়লেই হবে।

গণিতের জন্য আগের বিসিএস ও বিজেএস পরীক্ষার সব প্রশ্ন বুঝে বুঝে সমাধান করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানের জন্য দৈনন্দিন জীবনে যেসব বিজ্ঞানের বিষয় চোখে পড়ে, সেখান থেকেই প্রশ্ন আসে। ইংরেজি ও বাংলার জন্য আগে যেসব বইয়ের কথা বলেছি, সেখান থেকে গ্রামার বা ব্যাকরণ, সাহিত্য পড়তে পারেন।

সাধারণ বিষয়াবলিতে সময় কম দিয়ে আইন পড়েছি বেশি। ক্লাসে যে বই পড়েছি, সেই বই থেকেই নতুন করে পড়েছি। বেয়ার অ্যাক্ট সামনে নিয়ে মিলিয়ে পড়েছি। নোট করেছি। ছোট স্পেশাল লগুলো বেয়ার অ্যাক্ট থেকে পড়লেই হবে। কিন্তু সাংবিধানিক আইন, মুসলিম/হিন্দু আইন, সিপিসি, সিআরপিসিসহ বেশ কিছু আইন বিস্তারিত পড়তে হবে এবং লেখার সময় কিছু কেস রেফারেন্স দিতে হবে।

এবার ভাইভা প্রসঙ্গ। আমার কাছে যা মনে হয়েছে, আপনি ভাইভা বোর্ডে কী পারলেন না পারলেন, সেটা যতটা না বড় বিষয়, তার থেকে বিবেচ্য বিষয় হলো, আপনি এই পদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন কি না।

কিছু কিছু কমন প্রশ্ন প্রিলি, রিটেন, এমনকি ভাইভায়ও করা হয়। যেমন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও মুক্তিযুদ্ধ, মামলা দায়েরের পদ্ধতি, সময়সীমা, বিচারপ্রক্রিয়া, আপিল, রিভিউ, রিভিশন।

সব শেষে একটা কথা, আপনার পরিশ্রম অর্থহীন, যদি আপনি সুস্থ শরীরে পরীক্ষা দিতে না পারেন। শুভ কামনা।  সূত্র : কালেরকণ্ঠ