গাম্বিয়ার মামলার খরচ জোগাতে ওআইসি’র সদস্য দেশকে চিঠি

রোহিঙ্গা হত্যায় মিয়ানমারের ৭ সেনার ১০ বছরের কারাদণ্ড

রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ৭ সেনা সদস্যকে কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমার। সেনা সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাখাইন প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার দায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হচ্ছে।

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সামরিক-বৌদ্ধতন্ত্রের প্রচারণায় রাখাইনে ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গা-বিদ্বেষ। ২০১৭ সালের আগস্টে অভিযান জোরদার করার আগের কয়েক মাসের সেনাপ্রচারণায় সেই বিদ্বেষ জোরালো হয়। এরপর শুরু হয় সেনা-নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় ৬ লাখ ৯২ হাজার মানুষকে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম ইনদিনে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা ১০ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের রাখা হয় গণকবরে। ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানে নেমেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। ডিসেম্বরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর অভিযোগ আনা হয় দাফতরিক গোপনীয়তা ভঙ্গের আইনে। ফেব্রুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ রয়টার্সকে জানায়, ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে রয়টার্সের সাংবাদিকদের দাফতরিক গোপনীয়তা ভঙ্গের সঙ্গে ওই তদন্ত সম্পর্কহীন বলে দাবি করা হয়। সেই তদন্তের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত ৭ সেনাকে কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ২০০ জঙ্গির একটি দলে ছিল হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ১০ রোহিঙ্গা। তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালালে বৌদ্ধ গ্রামবাসী তাদের তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করে। আর সেনারা গুলি চালায়। সেনাপ্রধান প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ফেইসবুক পাতায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ১০ রোহিঙ্গার হত্যাতাণ্ডে সহযোগিতা ও জড়িত থাকার অভিযোগে ওই সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, হত্যাকাণে।ড সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৪ সেনাকে সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারাগারে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও কঠোর পরিশ্রমের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩ সেনাকে বাহিনী থেকে প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাদের পদের অবনয়ন ঘটানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে একই পরিমাণ সাজা এবং শ্রমের আদেশ। বিবৃতিতে জানানো হয়, ঘটনায় জড়িত পুলিশ ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে।

সেনা সদস্যদের সাজা ঘোষিত হলেও রয়টার্সের সেই দুই সাংবাদিক দাফতরিক গোপনীয়তার আইন লঙ্ঘনের দায়ে এখনও আটক রয়েছেন। জানুয়ারি থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের যুগে প্রণীত ওই আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি চলছে। অভিযুক্ত হয়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা ঘোষিত হতে পারে।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের এক পর্যায়ে এসে পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা আবাস আর গ্রামগুলো বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। এক পর্যায়ে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও অব্যাহত থাকে জাতিগত নিধন। এরপর সামরিকায়নকে জোরালো করতে অবশিষ্ট ঘরবাড়িও নিশ্চিহ্ন করা হয়। ঘোষণা দেওয়া হয় জমি অধিগ্রহণের। শুরু হয় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এএফপির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ফরাসি বার্তা সংস্থার খবর থেকে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাশূন্য বাফারজোন প্রতিষ্ঠা করতে সেখানে বৌদ্ধদের অর্থায়ন ও সেনা মদতে সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রত্যাবাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ধাপে ধাপে এইসব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে সামরিকতায় নির্মিত বৌদ্ধতন্ত্র আর ‘মিয়ানমার ন্যারেটিভস’ নামের প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করে।