অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে

বিচার রাষ্ট্রের একটি মূল্যায়িত সেবা

কুমার দেবুল দে

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল ক্যালেন্ডারটা প্রায়শই উকিল হিসাবে দেখতে হয়। যদি একটু খেয়াল করে দেখি তাহলে দেখতে পাই আদালতের মোট কর্মদিবস (Working Days) বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ১৮৫ দিনেরও কম, তার উপরে রাজনৈতিক অবরোধ বা হরতাল কর্মসূচী থাকলে তা আরও কমে আসে কারন এইদিন গুলোতে সাধারণত কোর্ট বসেনা। তারমানে বন্ধের দিন থাকে ১৮৬ দিনেরও বেশী যদিও ভ্যাকেশনে কিছু বেঞ্চ সীমিত সময়ের জন্য সীমিত দিনের জন্য বসে, আমাদের মতে তা খুব বেশী কর্মক্ষম নয় এবং অবকাশকালীন বিচারকদের মধ্যেও একটা অবকাশ অবকাশ ভাব লেগে থাকে, প্রায় দরখাস্তেই তারা বলে থাকেন ‘এইটা রিগুলার বেঞ্চে করেন’।

যাহোক এইসব আমার আলোচ্য বিষয়ও নয় চিন্তার বিষয়ও নয়। আমার চিন্তা অন্যখানে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিচারকদের যোগ্যতা যেমন দরকার বিচারকদের সংখ্যাটা আরও বেশী দরকার। আপনারা কি জানেন হাইকোর্টে ষোল কোটি মানুষের জন্য বর্তমানে কয়জন বিচারপতি আছেন? মাত্র ৭৮ জন। আপীল বিভাগে কতজন আছে আপনারা জানেন? মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ মাত্র ৪ জন। অথচ ২০১৪ সালেও হাইকোর্ট বিভাগে প্রায় ১০০ জন ও আপীল বিভাগে ৯ জন বিচারপতি ছিল, অবসর জনিত বা পদত্যাগ জনিত কারনে তা নেমে এসে এখন বর্তমান সংখ্যায় এসে দাঁড়িয়েছে, এই বছরেও কয়জন অবসরে যেতে পারেন। মামলার সংখ্যা আদালতে যেমন বাড়ছে আইনজীবীদের হাতে রেডি করার পরে জমে আছে এই সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়, বেঞ্চের অভাবে জমা দেয়া যাচ্ছেনা অথচ বিচার প্রাপ্তি সকল নাগরিকেরই অধিকার। দেশের উচ্চ আদালতে যে বিচারক সংকট আছে তা আমাদের মত আইনজীবীরা তেমনি দেশের সকল বিচারপ্রার্থী বা সাধারন জনগনও বোঝে শুধু বুঝলোনা বিচারক নিয়োগকারীরা। প্রায় ৩ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিচারক নিয়োগ হয় না যার কারনে এই আদালতের বেঞ্চ গঠনেও কোন পরিবর্তন নাই। বর্তমান বেঞ্চ গুলোর বেশীরভাগই তিন বছর আগে গঠিত তারা মামলা শুনছেন বেঞ্চ গঠিত হওয়ার পরপরই যেগুলো জমা নিয়েছিলেন, আমি বিশেষত চুড়ান্ত শুনানীর কথা বলছি, নতুন মামলা শুনানির সুযোগ হচ্ছে না। এইসবের জন্যই বিচারক স্বল্পতা ও বিচারক নিয়োগ না হওয়াই একমাত্র কারণ।

বিচার বা ন্যায় বিচার জনগনের অধিকার কারন বিচার রাষ্ট্রের কোন স্বেচ্ছা সেবা নয়, বিচার সম্পর্কে সংবিধান, আইন বা প্রচলিত ধারনাগুলো যাই বলুক না কেন। আমি বলি বিচার রাষ্ট্রের একটি মূল্যায়িত সেবা (Valued Service) এবং জনগন তা কোর্ট ফি এর আদলে টাকা দিয়ে কিনে নেয়।

লেখক- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যকরী সদস্য।