পাকিস্তানের প্রথম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিচারক ইউসুফ সালিম

পাকিস্তানের প্রথম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিচারক ইউসুফ সালিম

 

চোখে দেখতে না পেলেও হৃদয়ে লালন করেছিলেন বিচারক হওয়ার স্বপ্ন। নিজের চেষ্টায় আর বিধাতার ইচ্ছায় সেই স্বপ্ন পূরণ হলো ইউসুফ সালিমের। পাকিস্তানে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন দৃষ্টিহীন এই মেধাবী তরুণ। দেশটিতে এই প্রথম দৃষ্টিহীন কেউ বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেলেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বিচারকের আসনে বসার পথটা সহজ ছিল না ইউসুফ সালিম নামে ওই তরুণের। অন্য সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু অন্ধ হওয়ার কারণে বিচারক হওয়ার স্বপ্নটা ধূলিসাৎ হতে যাচ্ছিল তার। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসারের হস্তক্ষেপে চাকরিতে নিয়োগ পান তিনি।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন ইউসুফ। অত্যন্ত মেধাবি ইউসুফ অসাধারণ ফলাফল করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক পান। পড়াশুনা শেষ করে অংশ নেন পাকিস্তান জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায়। লিখিত পরীক্ষায় সাড়ে ছয় হাজার প্রার্থীর মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করেন ইউসুফ সালিম। মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইউসুফসহ ২১ জনকে মনোনীত করা হয়। কিন্তু অন্ধ হওয়ার কারণে বাদ পড়ে যান তিনি।

গত ২২ এপ্রিল তাকে নিয়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ খবর জানতে পেরে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি সুয়োমুটো রুল জারি করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি কেউ অন্য সব দিক থেকে থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন হন তাহলে শুধু অন্ধত্বের কারণে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া যাবে না।

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের জারি করা সুয়োমুটোতে বলা হয়, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী অনুচ্ছেদ ৯, ১৪, ২৫ এবং জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কনভেনশন অনুষায়ী তার চাকরি পাওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে। পাকিস্তানের ১৯৮১ সালের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, তিন শতাংশ সরকারি চাকরি প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত।

লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনা ও মৌখিক মতামত জানানোর নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার।

অবশেষ ইউসুফের স্বপ্ন সত্যি হয়। গত শনিবার লাহোর হাইকোর্ট থেকে ‘সিভিল বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট’ পদে যোগদান করার নিয়োগপত্র পান ইউসুফ।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিচারক হওয়ার অনেক নজির থাকলেও পাকিস্তানে ইউসুফ সালিমই প্রথম।