একাধিক পদে লোকবল নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল (লোগো)

বার কাউন্সিল পরীক্ষাজট: তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় ৪৫ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টামফোর্ড থেকে এলএলবি পাস করেন খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান ২০১৫ সালে। ২০১৭ সালে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুরু করেন বার কাউন্সিলে ‘পেশাগত সনদ’ অর্জনের লড়াই। কিন্তু তার রেজিস্ট্রেশনের দেড় বছর পার হলেও বার কাউন্সিলের সেই পরীক্ষা হয়নি এখনও।

শুধু ইমরান নন, রেজিস্ট্রেশন করে সনদের জন্য অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন প্রায় ৪৫ হাজার ‘শিক্ষানবিশ আইনজীবী’। তাদের মধ্যে অনেকের আবার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। এর অন্যতম কারণ গত বছরের ২১ জুলাই বার কাউন্সিলে যে ব্যাচের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তার লিখিত পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল এখনও প্রকাশ করতে পারেনি বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ।

বিধি অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তারা নিম্ন আদালতে সরাসরি মামলা পরিচালনা করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য প্রথম ধাপে একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে শিক্ষানবিশ আইনজীবী নূ্যনতম ছয় মাস কাজ করার পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে হয় তাকে। ওই পরীক্ষায় যারা পাস করেন, তারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পরে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর আইনজীবী তালিকাভুক্তির চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। আইন পেশা পরিচালনার জন্য দেশে বার কাউন্সিলই সনদ প্রদানকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুলাই সর্বশেষ বার কাউন্সিলের নৈর্ব্যক্তিক (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩৪ হাজার ৩৮৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৮৪৬ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হন। পরে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার সাত মাস পরও প্রকাশ হয়নি পরীক্ষার ফলাফল। এরই মধ্যে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত হয় বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। এ পর্যায়ে আগের ব্যাচের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর এ বছর নতুন ব্যাচের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে কি-না, তা নিয়ে আবেদনকারী শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার খাতা উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বিচারকরা মূল্যায়ন করে থাকেন। প্রতিটি খাতা দুই বার করে মূল্যায়ন করা হয়। এখনও তাদের কাছ থেকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ জন্য ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি।’

এবারের বার কাউন্সিল নির্বাচনেও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বিজয়ী হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর নতুন ব্যাচের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে কি-না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনি জটিলতায় গত চার বছরে মাত্র একটি ব্যাচের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। এখন আর দেরি করার সুযোগ নেই। এ বছরই নতুন ব্যাচের পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নতুন কমিটি কার্যক্রম শুরু করলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বার কাউন্সিল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার খোঁজ নিতে প্রার্থীরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন। গত বছর নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষা দিয়ে যারা উত্তীর্ণ হননি, এমন প্রার্থীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫৪৩ জন। তাদের সঙ্গে গত তিন বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাও নতুন ব্যাচে এনরোলমেন্ট পরীক্ষা দিতে আবেদন করেছেন। সব মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজারেরও বেশি। পরীক্ষা হতে যত বিলম্ব হবে, রেজিস্ট্রেশনকারীর সংখ্যাও তত বাড়বে। পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে রেজিস্ট্রেশন করা প্রার্থীদেরও নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পূরণেই এলএলবি পাস করার পর হাজারো শিক্ষার্থী এনরোলমেন্ট পরীক্ষা দিতে অপেক্ষায় রয়েছেন। অথচ বছরের পর বছর পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় রাখা হচ্ছে তাদের। পরীক্ষা গ্রহণের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অন্য কোনো পেশা বেছে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে পরিবার থেকে।’ সমকাল