স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবরক্ষক আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানম

আবজাল দম্পতির সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিল আদালত

সদ্য সাময়িক বরখাস্তকৃত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবরক্ষক আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের সব সম্পদ জব্দ/ক্রোকেরই নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ নির্দেশ দেন বলে গণমাধ্যমকে জানান দুদকের উপ পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় দুদকের পক্ষ থেকে কোর্টে তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশের আবেদন করা হয়। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট তার সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে।’

আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম (কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক স্টেনোগ্রাফার) এবং আবজাল হোসেনের দুই ভাই ফরিদপুর টিবি হাসপাতালের ল্যাব সহযোগী বেলায়েত হোসেন ও লিয়াকত হোসেন এবং আবজালের তিন শ্যালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাখালী অফিসের গাড়িচালক রফিকুল ইসলাম, একই অফিসের উচ্চমান সহকারী বুলবুল ইসলাম ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এরপরই দুদক এইসব সম্পত্তি জব্দ/ক্রোক ও স্থগিতাদেশ চায় আদালতের কাছে।

এদিকে আবজালের ভাই ও শ্যালকরা মঙ্গলবার দুদকে হাজির না হয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ হাজার টাকার বেতন পেলেও ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আর রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে–বিদেশে আছে বাড়ি–মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, আবজাল হোসেন গত এক বছরে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২৮ বারেরও বেশি সপরিবার সফর করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পর্টার স্ট্রিট মিন্টুতে যে বাড়ি কিনেছেন, তার দাম দুই লাখ ডলারেরও বেশি।

এ অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

দুদকে আবজালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের তদন্ত করছেন উপ-পরিচালক শামসুল আলম।

এদিকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে বরখাস্ত করা হয়।

আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।