মামলা জট (ছবি -প্রতীকী)

চট্টগ্রামের ২১ আদালতে নেই বিচারক, ঝুলছে ৩০,০০০ মামলা

চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলে ৯০টি আদালত রয়েছে। যা চট্টগ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য অপ্রতুল। এর মধ্যে ২১টি আদালতে বিজ্ঞ বিচারক নেই। যেখানে ঝুলে আছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মামলা। ফলে বছরের পর বছর চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিচারপ্রার্থীরা। এর মধ্যে অনেক মামলা আছে যার বাদী ও সাক্ষী পর্যন্ত বেঁচে নেই। অন্যদিকে আসামির মৃত্যুর পরও ঝুলছে বহু মামলা। যেগুলো মাসে একবার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয় ঠিকই। কিন্তু শুনানি হয় না। নয়তো শুনানির দিন বিচারক থাকে না, না হয় বাদী বা সাক্ষী আসে না। ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থী, সাক্ষী এমনকি আসামি পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলাগুলো বিভাগীয় বিশেষ আদালত, বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালত, শ্রম আদালত, নারী ও শিশু আদালত, পারিবারিক আদালত, দেওলিয়া আদালত, ৩য় অতিরিক্ত জেলা আদালত, ৪র্থ অতিরিক্ত জেলা আদালত, ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা আদালত, ৭ম অতিরিক্ত জেলা আদালত, দায়রা জজ আদালত, ১ম মহানগর দায়রা জজ আদালত, ২য় মহানগর দায়রা জজ আদালত, ৩য় মহানগর দায়রা জজ আদালত, ৪র্থ মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং ২য় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া সন্দ্বীপ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, পটিয়া চৌকির অধীনে চন্দনাইশের সহকারী জজ আদালত, পটিয়া চৌকির অধীনে চন্দনাইশের সহকারী জজ আদালত, পটিয়া চৌকির অতিরিক্ত আদালতের সহকারী জজ আদালত, সাতকানিয়া চৌকির অতিরিক্ত আদালতের সহকারী জজ আদালত, সাতকানিয়া চৌকির লোহাগাড়া আদালতের সহকারী জজ, বাঁশখালী চৌকির সহকারী জজ আদালতেও এমন অসংখ্য মামলা রয়েছে। যেগুলো নিয়ে বাদী, সাক্ষী এমনকি আসামি পক্ষও প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ২১টি আদালতে বিচারক শূন্যতায় বিচারপ্রাথীদের চরম ভোগান্তিকে দায়ী করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ পরিচালক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিচারকশূন্যতার কারণে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠীর হয়রানি ও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠীকে বিচারক না থাকায় শুধুমাত্র হাজির হয়ে তারিখ পরিবর্তনে বিদায় নিতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলে ৯০টি আদালত রয়েছে। যা চট্টগ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য অপ্রতুল। এর মধ্যে ২১টি আদালতে বিজ্ঞ বিচারক নেই। যেখানে ঝুলে আছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মামলা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১৮টি মামলার বিচার ঝুলে আছে। সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দায়ের করা এসব মামলার বিচার শুরু করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম আদালতে আত্মঘাতী হামলার মামলাটিও ঝুলে আছে সাক্ষীর অভাবে। বারবার সমন দেয়ার পরও পুলিশসহ মামলার সাক্ষীরা আদালতে আসছে না। জঙ্গিদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কঠোর অবস্থান হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এতে করে জঙ্গি দমনে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে আদালত অঙ্গনে সংশয় দেখা দিয়েছে।

২০১২ সাল থেকে সন্ত্রাস দমন আইনে চট্টগ্রামে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক হিযবুত ও জেএমবি সদস্য আসামি। তাদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে বলেও জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সন্ত্রাস দমন আইনে অনুমোদনের অপেক্ষায় ২১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় করা তিনটি, এর বাইরে অন্য ১৮টি মামলার মধ্যে চারটি মামলা জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে। ১৪টি মামলা হিজবুত তাওহীদের বিরুদ্ধে।

চান্দগাঁও থানায় ২০১৫ সালে জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা এবং ২০১৪ সালে হিযবুত সদস্যদের বিরুদ্ধে করা অন্য একটি মামলা পরিচালনায় এ বছর অনুমোদন মিলেছে। বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোর বিচার শুরু করতে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম দেওয়ানি ও শ্রম আদালতে এমন কিছু মামলা রয়েছে যেগুলো দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছরেও শেষ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলা ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে সমপন্ন করার কথা থাকলেও কোনো কোনো মামলা বছরের পর বছর বিচারাধীন রয়েছে। একই অবস্থা অন্য আদালতগুলোতেও। ফলে দিন দিন সৃষ্টি হচ্ছে মামলার জট। মানবজমিন