গ্রেফতার (ছবি - প্রতীকী)
গ্রেফতার (ছবি - প্রতীকী)

প্রশ্নফাঁসের মামলায় ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মামলায় ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেফতার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে।

আজ বুধবার (২৬ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

রাজধানীর শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত রোববার (২৩ জুন) ঢাবির প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে ৪৭ জন জামিনে আছেন। বাকি ৭৮ জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ৭৮ জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

এর আগে, গত রোববার (২৩ জুন) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১২৫ জনের বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর একজন গণমাধ্যমকর্মীর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দিন মধ্যরাতে দু’টি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। অভিযানে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় রাফি নামে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় ওই দিনই (২০ অক্টোবর, ২০১৭) শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে প্রশ্নফাঁস চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো।

২০১৫ ও ২০১৬ সালের পর দুই বছর ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিল তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ আরও কয়েকজন।

সে সময় ধারাবাহিক অভিযানে মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মূলত দুইভাবে প্রশ্নফাঁস চক্রটি কাজ করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যেই ছাপাখানা থেকে ছাপা হতো, চক্রের সদস্যরা সেই প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতো। এরপর পরীক্ষার আগের রাতে সেসব প্রশ্নের সমাধান বের করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করানো হতো। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হতো।

ছাপাখানা থেকে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সবাই চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে তাদের বেগ পেতে হয়। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রটির মাস্টারমাইন্ড ছিল বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিল ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও তাজুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন, ইব্রাহিম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মাসুদ রহমান তাজুল, রিমন হোসেন, মহিউদ্দিন রানা, আইয়ুব আলী বাধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, জাহাঙ্গীর আলম, মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, অনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মো. বাবুল, টি এম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ ছোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসামী, বনি ইসরাইল, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, বায়েজিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মলি­ক, প্রসেনজিত দাস, আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহাম্মেদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আব্দুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পী, মশিউর রহমান সমীর, আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ-উর-রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম সম্রাট, আবির হাসান হৃদয়, মোর্শেদা আক্তার, সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন, শাহ মেহেদী হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহম্মেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, লাভলুর রহমান লাভলু, ইছাহাক আলী ইছা, আব্দুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিনা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রনয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, রাকিবুল হাসান, এম. ফাইজার নাঈম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা লিয়ানা তালুকদার, মোহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নূর সাইয়ারা নোশিন, মাসুদ রানা, ইখতেখার আলম জিসান, রাকিব হাসান, খালিদ হাসান, আজলান শাহ ফাহাদ, সৌভিক সরকার, রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলম সিদ্দিকী সম্রাট, হাসিবুর রশিদ, আফসানা নওরিন ঋতু, মারুফ হাসান খান, তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাদৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমা তুজ জোহরা মীম, শ্বাষত কুমার ঘোষ শুভ, রাসেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, সাদেকুল ইসলাম সুমন, আব্দুল্লাহ, খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, হাসিবুর রহমান রুবেল এবং মাকসুদুর রহমান শুভ।