করোনা ভাইরাস

মাস্ক নিয়ে পেঁয়াজের মতো ব্যবসা হচ্ছে কি না, তদারকির আদেশ হাইকোর্টের

সিন্ডিকেট করে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের দাম যেন না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মজুদদার ও সিন্টিকেট ব্যবসায়ী ধরতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করতে হবে। দাম বাড়ালে বা মজুদ করলে কঠিন শাস্তমূলক ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়, সেটিও করতে বলেছেন আদালত।

করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে আজ সোমবার (৯ মার্চ ) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

একইসঙ্গে বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার নষ্ট থাকায় ক্ষোভ জানিয়ে আদালত প্রত্যেক বিমান, স্থল ও নৌবন্দরে পর্যাপ্ত স্ক্যানারের ব্যবস্থা করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করতেও বলা হয়েছে। করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদেরর জন্য প্রয়োজনীয় পোশাকের মজুদ বাড়াতেও বলেছে হাইকোর্ট।

আদালত আরও বলেছেন, করোনাআক্রান্ত দেশ থেকে যারা আসবেন তাদের স্বাস্থ্য সনদ না থাকলে ফেরত পাঠাতে হবে। প্রবাসে যেতে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তাদের জন্য দ্রুত স্বাস্থ্য সনদের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসানের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এখন মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতাও তৈরি হয়েছে। সে সুযোগে এটা নিয়ে বাজারে কোনো ধরণের ব্যবসা হয় কিনা পেঁয়াজের মতো, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট ব্যবহার করতে হবে। কেউ যেন বেশি দাম না নিতে পারে। মজুদ না করতে পারে।

এ সময় আদালতে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, এটার ব্যাপকতা যে কত তা সরকারও অনুভব করেছেন। কিছু স্টেপ ওনার নিয়েছে। মাস্ক নিয়ে বলবো। ১০ টাকার মাস্ক ১২০ টাকা নিচ্ছে। এটা নিয়ে একটা ডাইরেকশন দেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে ফ্রি দিতে পারেন। তখন আদালত বলেন, ১০ বা ১৬ কোটি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। একটা হতে পারে, যারা কোনো রকমভাবে সন্দেহের মধ্যে বা আক্রান্ত হয় বা হাসপাতালে যায় তাদের ব্যবস্থা করা যায় কিনা এটা হয়তো বাস্তব।

এরপর মওদুদ আহমদ বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের পোশাকের বিষয়টি দেখতে হবে। এটা সরকারের স্টকে কত আছে?। তখন আদালত বলেন, প্রতিবেদনে বলা আছে রোগ প্রতিরোধী পোশাক পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিদিনকার সংসবাদ সম্মেলন নিয়ে আদালত বলেন, আইইডিসিআর এর একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রেস ব্রিফিং করেন। ওনার বক্তব্য আরও পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সারা পৃথিবীর কথা বলেন। মনে হয় আমাদের দেশেও ধেয়ে আসছেন। এটা যেন কোনোভাবে মানুষর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। কারণ মানুষ যথেষ্ট সচেতন। মানুষের কাছে মোবাইল আছে। মানুষের কাছে সব খবর যায়। এগুলো ওনাদের দরকার নেই। ওনারা কি করছেন, মানুষ কিভাবে সচেতন হবে এবং কি করা দরকার সে বিষয়গুলো মানুষকে জানানো দরকার। আর সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটা জানানো দরকার।

গণমাধ্যমে সচেতনতা বিষয় প্রচারের বিষয়ে আদালত বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এমনভাবে সচেতনতামূলক প্রচার করতে হবে যেন মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।

দেশের মানুষ বিদেশে যাওয়া এবং দেশের নাগরিকসহ বিদেশিদের দেশে আগমণের বিষয়ে আদালত বলেন, আমাদের দেশের অনেকে বিদেশি থাকেন। শ্রমিকরা বিভিন্ন দেশে যায়। তাদের সার্টিফিকেট দেওয়ার দরকার হলে যেন সমস্যা না হয়। সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আর যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের ক্ষেত্রেও সার্টিফিকেট আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এয়ারপোর্টগুলোতে।

আদালত বলেন, বিষয়টি নজরে রাখলাম। আগামী ৫ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হলো।

এর আগে, সোমবারের মধ্যে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা জানতে চান হাইকোর্ট। সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে- এ মর্মে প্রকাশিত সংবাদ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আদালতের নজরে নিয়ে এলে উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

এগুলো হলো- এক. স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা জানাতে বলেছেন।

দুই. সারা বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয় নাই। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা ভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) গ্রহণ করতে হবে।

তিন. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরগুলোতে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানে সরঞ্জামগেুলো পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা, যদি না থাকে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেন।

এ আদেশ অনুসারে প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৩১ জনে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চীনে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। নতুন করে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৯ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮০ হাজার ৭৩৫ জন। বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮ জন। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬২ হাজার ২৭৬ জন।

এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১০৪টি দেশ ও অঞ্চলে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে চীনের পরে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে ৩৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে। এরপর রয়েছে ইরান। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫১, যুক্তরাষ্ট্রে ২২, ফ্রান্সে ১৯, স্পেনে ১৭, জাপানে ৭, ইরাকে ৬, যুক্তরাজ্যে ৩, নেদারল্যান্ডসে ৩, হংকংয়ে ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৩, সুইজারল্যান্ডে ২, মিশরে ১, তাইওয়ানে ১, থাইল্যান্ডে ১, সান মারিনোতে ১, আর্জেন্টিনায় ১ ও ফিলিপিন্সে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডায়ামন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।