অ্যাডভোকেট পার্থ প্রতিম বড়ুয়া

টর্ট আইনের প্রাথমিক ধারনা

পার্থ প্রতিম বড়ুয়া :

পৃথিবীর সকল আইনের উৎস বলা হয় রোমান আইনকে। টর্ট আইনের উত্পত্তি লাভ করেছে রোমান আইন থেকেই। পরবর্তী সময়ে টর্ট আইন প্রসার লাভ করে বৃটেনে। ‍স্বাভাবিকভাবেই টর্ট আইনের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায় ইংল্যান্ডে।

প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন রাষ্ট্রের নাগরিক। একজন নাগরিক হিসেবে তার কিছু আইননানুগ অধিকার রয়েছে যা সে অবশ্যয় ভোগ করার অধিকারী। যখন কোন ব্যক্তি বেআইনীভাবে কারো সেই অধিকার হস্তক্ষেপ করে তখনই তাকে টর্ট বলা যাবে। এর জন্য অবশ্য ভুক্তভোগী ব্যক্তি টর্ট ‍আইন অনুসারে প্রতিকার পেতে পারেন।

মূলত ল্যাটিন শব্দ Tortum থেকে টর্ট (Tort) শব্দের উৎপত্তি। আভিধানিক অর্থে টর্ট বলতে অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধন বুঝায়। ইংরেজী ভাষায় Tort কে  wrong বলা হয়। যখন কোন ব্যক্তি তার দায়িত্ব বা কর্তব্য থেকে সরে গিয়ে অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে টর্ট (Tort) বলা হয়।

বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী স্যালমন্ড এর মতে, টর্ট হচ্ছে চুক্তি বা বিশ্বাসভঙ্গ ব্যতিত এমন এক ধরনের দেওয়ানী অপরাধ যার প্রতিকার হচ্ছে অনির্ধারিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ।

টর্ট আইনের উদ্দেশ্য মূলত, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। তবে উল্লেখ্য যে, এই আর্থিক ক্ষতিপূরনের নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। এক্ষেত্রে ক্ষতির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আদালত আর্থিক ক্ষতিপূরনের নির্দেশ প্রদান করে বিবাদী পক্ষকে। সুতরাং টর্ট আইনের মূল উদ্দেশ্য হল ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য যেসব প্রতিকার রয়েছে যেমন- নিষেধাজ্ঞা,অপসারন ইত্যাদি প্রদান করা।

অপরাধীকে অপরাধে নিরুৎসাহিত করা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করা হলো টর্ট আইনের উদ্দেশ্য। এ প্রতিকার কেবলমাত্র কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় সংগঠন, সংস্থা, পৌরসভার বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য।

উদাহারণ ১- রহিম, করিমকে মারধর করে করিমের পা ভেঙ্গে দেয়। ফলে করিম এক মাস কর্মস্থলে যেতে পারে না। এতে রহিমের যদি জেল হয় তাতে করিমের কোন লাভ হবে না। এক্ষেত্রে রহিম করিমকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে পারে।

উদাহারণ ২- ‘ক’ নামক একজন ডাক্তার ‘খ’ নামক রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ‘খ’ এর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। ফলে ‘খ’ টর্ট আইন অনুসারে এর প্রতিকার পেতে পারে।

বাংলাদেশে টর্ট জাতীয় কাজের বা কর্তব্যচুত্যির জন্য নিচের কয়েকটি আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়-

১. গুরুতর দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫।

২. সেচ আইন ১৮৭৬।

৩. ত্রান আইন ১৮৭৭।

৪. সুখাধিকার আইন ১৮৮২।

৫. কৃষি ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা উন্নয়ন আইন ১৯২০।

৬. মহিলাদের ক্ষতিপূরণ আইন ১৯২৩।

৭. ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশান অধ্যাদেশ ১৯৮৩। 

পার্থ প্রতিম বড়ুয়া : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।