চন্দন কান্তি নাথ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কুমিল্লা

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কার্যকর উপায়

চন্দন কান্তি নাথ :

জননী  নাটক দেখছিলাম। ১৯৯১ সনে Swiss Development Corporation এর আর্থিক অনুদান এ হুমায়ূন আহমেদ এর রচনায় নাটকে জননীর সংসারে ভালো ঘর নাই, ভালো খাবার নাই, বড় মেয়ের চিকিৎসা নাই, মেয়েদের শিক্ষা নাই। এটা বাংলাদেশের চিত্র ও ছিলো। কিন্তু  সরকার গুলোর প্রচেষ্টার কারণে বিশেষ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রূপকার  তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, বিদ্যুৎ এ স্বয়ং সম্পূর্ণ, অনেকের ভালো বাড়ি আছে, গুচ্ছ গ্রাম, একটি বাড়ি একটি খামার, বস্তি বাসির বাড়ি ইত্যাদি প্রকল্পে হাজার মানুষ মাথা গুঁজে ঠাঁই পেয়েছে, মাথা পিছু আয় বেড়েছে, ৩৩ তম বিসিএস এ ৬০০০ হাজার, ৩৯ তম ৭০০০ হাজার ডাক্তার এই দুই বিসিএসই ১৩,০০০ হাজার ডাক্তার এবং হাজার হাজার নার্স নিয়োগ, ২৫০০০ হাজার প্রাইমারী স্কুল সরকারিকরণ সহ, পোশাক শিল্পে তথা গার্মেন্টস এ বিশ্বের অন্যতম রপ্তানি কারক দেশ হওয়া, ১৬ কোটি মানুষের ১৬ কোটি মোবাইল ব্যবহার, ৯ কোটি মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহার, যোগাযোগ এর ব্যাপক উন্নতি, হাজার কোটি টাকা remittance আসা, পদ্মা সেতু, কর্নফুলি টানেল সেতু, পায়রা বন্দর, ঢাকা- চট্টগ্রাম চার লাইন রাস্তা, ১০০ টা EPZ সহ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উন্নতি হয়েছে এবং হচ্ছে। কিছু দিন আগেও কুমিল্লা হতে ঢাকা যাতায়াতে ৭-৮ ঘন্টা লাগত কিন্তু এখন সর্বোচ্চ ২ ঘন্টাতে  যাতায়াত করা যায়।

কিন্তু দুশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা পেয়েছি আমাদের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা। সেখানে দেওয়ানি  মামলা নিষ্পত্তি হতে লাগে ১৫ – ২০ বছর বা তারও বেশি সময় লাগে। দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করার জন্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার  বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আইন মন্ত্রীগণ ২০১২ ও ২০১৭ সনে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির জন্যে দুটি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।

আর স্বল্প খরচে ন্যায়বিচার হচ্ছে  আদালতের বাইরে “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি”। আগে এটা বাধ্যতামূলক ছিলো না। ২০১২ সনে “May” এর স্থানে “Shall” করা হয়। ২০১২ সনের সংশোধনে উক্ত আইন কে কার্যকর করা হয়নি। ২০১৬ সনের ১৭ ই জানুয়ারি এটার কার্যকারিতা দেয়া হয়। ২০১৭ সনে জেলা Legal Aid Officer কে ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

অনেকে মনে করেন আদালতের বাইরে “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি” মানে আপোষ মীমাংসা, পক্ষদের মিলিয়ে দেয়া, win win situation মাত্র, বিচারের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু, ন্যায় বিচার এর পরিপন্থী কিছু, হারার ভয় থাকা ইত্যাদি। ব্যাপার টা তা নয়। এটা আসলে বিকল্প উপায়ে  বিরোধ নিষ্পত্তি।

আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। অনেক মামলাতেই বিচার যখন পাওয়া যায়, ন্যায়বিচারের তখন আর কোনো প্রয়োজন বা প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। আমাদের আনুষ্ঠানিক আদালত বা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সময়মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচার সম্পন্ন করা দুরুহ। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায়ও বিরাজ করছে দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।বরং মানুষ মরে যায়, অথচ দেওয়ানি মামলা চলে কয়েক পুরুষ ধরে।  আর এব্যবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন করা হয়।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি মানে মামলা বা বিরোধ নিষ্পত্তির  ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতি ব্যবহার না করা। এটা আদালতের বাইরে “বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি” পদ্ধতির ব্যবহার। এটা হতে পারে conciliation (পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি ) বা mediation (তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বা arbitration (arbitrator দ্বারা arbitration award এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি)। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বলতে আমাদের দেওয়ানি আইনে mediation (তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বা arbitration (arbitrator দ্বারা  arbitration award এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি) বুঝানো হয়েছে । mediation এমন ভাবে হবে যাতে পক্ষদের কোন অসুবিধা অনুভব না হয়। ৮ ৯ (ক) ধারাতে ও তাই বলা হয়েছে। তাতে আছে “Mediation”…….flexible, informal, non-binding, confidential, non-adversarial and consensual dispute resolution process ……..”এখানে non-binding কথা থাকলেও ৮ ৯ (ক)(১২) অনুসারে এরুপ চুক্তি এর বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিশন (No appeal or revision shall lie )হবে না বলা হয়েছে। অথচ প্রচলিত উপায়ে বেশ কয়েক বছর পর ডিক্রী হলে প্রথমে আপিল পরে রিভিশন, পরে আবার আপিল এবং রিভিও এই চক্র চলতে থাকে।

অধিকার এর জন্যে চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন, দলিল সংশোধন, চুক্তি রদ, দলিল বিলোপন, ঘোষণামূলক ডিক্রি, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এর  জন্যে আদালতে দেওয়ানি সংক্রান্ত মামলা হয়। একজন client যখন কোনো বিজ্ঞ আইনজীবী এর কাছে যান তখন তিনি নিশ্চয়ই তাঁর client কে বলেন আপনার মামলায় এই এই কারণে merit আছে আর আপনি মামলায় জেতার সম্ভাবনা ও আছে। অথবা বলেন আপনার মামলায় merit কম। এরূপ আদালতের বাইরে অনেক সিনিয়র আইনজীবী আছেন, Legal Aid Officer, সাবেক জজ বা জেলা জজ, প্রাতিষ্ঠানিক নিস্পত্তিকারি আছেন যারা আইনে অভিজ্ঞ এবং তাঁরা সহজে আইন মোতাবেক বিরোধ নিষ্পত্তি করে দিতে পারবেন। যে নিস্পত্তি সহজে ,কম সময়ে, টেকসই নিস্পত্তি হবে যার ভিত্তিতে পক্ষরা একটা ডিক্রি ও পাবে। মামলাটিও বিকল্প উপায়ে নিষ্পত্তি হবে। আবার বিচারক ও যখন মামলা পড়েন, আর্জি, জবাব, কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন এবং পড়েন আর প্রাসঙ্গিক আইন জানেন কিংবা জানা না থাকলে সহজে দেখে নিয়ে question of fact কিংবা question of law এর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে একটা সিদ্ধান্তে এসে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন।

দেওয়ানি কার্যবিধির নতুন সংযোজিত ৮৯ক (১) ধারা তে আদালতকে পূর্ন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যাতে মামলায় লিখিত বক্তব্য পেশ হবার পর আদালত নিজে অবশ্যই মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন, না হয় Legal Aid Officer কে প্রথমে অথবা দ্বিতীয়ত পক্ষগুলোর নিয়োজিত উকিলের কাছে অথবা তৃতীয়ত উকিল নিয়োগ করা না থাকলে পক্ষ বা পক্ষগুলোর কাছে অথবা চতুর্থত স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে পরমর্শক্রমে জেলা জজ প্রণীত প্যানেলের মধ্য থেকে একজন মধ্যস্থতাকারীর কাছে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য অবশ্যই পাঠাবেন।

আবার মামলার পক্ষগুলোর উকিলদের কাছে বিরোধ পাঠানো হলে তারা মক্কেলদের সম্মতিক্রমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন নিরপেক্ষ উকিল যেমন একজন অবসরপ্রাপ্ত জজ অথবা জেলা জজ প্রণীত নামের প্যানেল থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী কিম্বা উপযুক্ত অপর যেকোন ব্যক্তিকে বা একাধিক ব্যাক্তি কে নিয়োগ করবেন। তবে রাষ্ট্রের অফিস এ কর্মরত কাউকে নিযুক্ত করা যাবে না।

আমাদের দেশে বিকল্প নিষ্পত্তি নতুন। সাধারণ clients এমনকি বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে ও এ বিষয়ে দ্বিধা আছে যে এতে তাঁদের ফি এরূপ নিষ্পত্তিতে কমে যাবে। তাঁদের clients কমে যাবে। কিন্তু এটি ও সত্য নয়। বিজ্ঞ আইনজীবীরা সাধারণভাবে যেভাবে ফি নির্ধারণ করেন এখানেও তাই চাইতে পারবেন। আইনে আছে – তাঁরা তাঁদের mediator এর ফি ও নিজেরা নির্ধারণ করতে পারবেন। তাঁদের সমস্যা হলে আদালত সকলের বক্তব্য শ্রবণ করে ফি নির্ধারণ করে দিতে পারবেন এবং তা পক্ষ দের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু আদালত বা  Legal Aid Officer নিষ্পত্তি করলে কোনো ফি নিবেন না। এরই মধ্যে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আর ৮৯ (ক) (৩) ধারায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আছে।

পক্ষগুলো এ ধরনের নিষ্পত্তির ব্যাপারে কাকে নিয়োগ করেছেন মধ্যস্থতার জন্য মামলাটি পাঠানোর তারিখ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের আদালতকে জানাতে হবে এবং ব্যর্থ হলে আদালত জেলা জজ এর প্যানেল থেকে একজনকে ৭ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিবেন এবং আদালতকে জানানোর তারিখ থেকে  অথবা আদালত হতে শুরুতে Legal Aid Officer বা অন্য কেউ নিযুক্ত হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে যদি না আদালত এই মোকদ্দমাটির মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়িয়ে দেন। Legal Aid Officer বা মধ্যস্থতাকারী মধ্যস্থতা ও কার্যক্রমের ফলাফল সম্পর্কে আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন এবং ফলাফল যদি মামলার বিরোধ বা বিরোধগুলোর আপোষ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে আপোষ রফার শর্তাবলি একটি চুক্তির আকারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সেই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো স্বাক্ষর করবে এবং মধ্যস্থতাকারী (যদি Legal Aid Officer মধ্যস্থতাকারী হলে তিনি ও সাক্ষর করবেন) ও উকিলরা তা সত্যায়িত করবেন। অতঃপর আদালত সেই চুক্তির ভিত্তিতে আদেশ বা ডিক্রি জারী করবেন। অতঃপর আদালত সেই চুক্তির ভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে দেওয়ানি কার্যবিধি এর আদেশ ২৩ অনুসারে আদেশ বা ডিক্রি প্রস্তুত করবেন (shall, within seven days from receiving the said report, pass an order or a decree in accordance with relevant provisions of Order XXIII of the Code)। আদালত নিজে mediate করলেও অনুরূপ রিপোর্ট প্রস্তুত করবেন এবং দেওয়ানি কার্যবিধি এর আদেশ ২৩ অনুসারে আদেশ বা ডিক্রি  প্রস্তুত করবেন।

মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে এবং আদালত নিজে মধ্যস্থতা না করলে যে পর্যায়ে মধ্যস্থতা শুরু হয়েছিল সেই পর্যায় থেকে শুনানীর মধ্য দিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর হবে যেন মধ্যস্থতার কোনো সিদ্ধান্তই কখনও নেয়া হয় নি। আদালত নিজেই যদি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে তার মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে মধ্যস্থতা করার এখতিয়ার সম্পন্ন অপর একটি আদালত মামলার শুনানী গ্রহণ করবে। এমন মধ্যস্থতার কার্যক্রম গোপন থাকবে এবং মধ্যস্থতা চলাকালে করা হয়েছে বা অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন যেকোন যোগাযোগ বা সংলাপ প্রকাশ না করার বিশেষ অধিকার হিসেবে গণ্য হবে এবং একই মামলার পরবর্তী কোনো শুনানীতে বা অপর কোনো কার্যক্রমে সেগুলো উল্লেখ করা যাবে না ও সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আগেই বলা হয়েছে এধরনের আপোষ নিষ্পত্তি অনুযায়ী আদালতের দেয়া কোনো আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে কোনরকম আপীল করা বা পর্যালোচনার আবেদন করা যাবে না। মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোনো মামলার নিষ্পত্তি বা আপোষ করা হলে আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কোর্ট ফির টাকা ফেরত দেয়ার আদেশ দেবেন।

অনুরূপভাবে দেওয়ানি কার্যবিধির ৮৯খ ধারার বিধানে বিরোধ বা বিরোধগুলো সালিশের কাছে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়ানি আদালত অবশ্যই মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিবেন। এমন একটি দরখাস্ত সালিশি আইন, ২০০১-এর ৯ ধারার অধীনে একটি সালিশ চুক্তি বলে গণ্য হবে। কোনো ধরনের সালিশ না হলে কিম্বা সালিশ ব্যর্থ হলে ইতোপূর্বে প্রত্যাহূত মামলাটি নতুন করে রুজু করার অধিকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর থাকবে। আপীল মামলার ক্ষেত্রেও অনুরূপ মধ্যস্থতার ব্যবস্থা ধারা ৮৯ (সি) তে বলা হয়েছে (An Appellate Court shall mediate in an appeal or refer the appeal for mediation….. the provisions of section 89A shall be followed with necessary changes (mutatis mutandis) as may be expedient.)

আবার এমনকি ইতিমধ্যে যে মামলা ২০১২ এর আগে আপিল এ pending আছে তাও উপরোক্ত বিধান মোতাবেক বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধান মতে নিষ্পত্তি করা যাবে। ব্যর্থ হলে পুনরায় আগের পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে।

উন্নত দেশগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবহার করে মামলার পরিমাণ ৩/৪ মাসে আশানুরূপভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু কিছু আইনজীবী ও বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা এসব মামলা জিয়িয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করেন। মনে করেন মামলা কমে যাবে কিন্তু বিকল্প পদ্ধতি তে মামলা নিষ্পত্তি হলে আইনজীবীদের মামলা কমবে না বরং বাড়বে। কেনো না নিষ্পত্তি বাড়লে মানুষ আরো বেশি আদালতমুখি হবেন। এটা মনে রাখতে হবে যে, বিদ্যমান মামলা জট খুলতে হলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দারস্ত হতেই হবে। বিচারকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব না। তবে পক্ষগণ বিকল্প নিষ্পত্তিতে আগ্রহী না হলে cost সংক্রান্ত ৩৫ ধারার বিধান এবং শুনানি সংক্রান্ত অর্ডার ১৭ এর cost এর বিধান  ও মামলা দীর্ঘ না করতে পারার অন্য সব বিধান এর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

মামলার ভারে জর্জরিত আদালতের কার্যতালিকায় প্রতিদিনই জমা হচ্ছে আরো নতুন নতুন মামলা। প্রতিদিনই বেড়ে চলছে মামলার সংখ্যা। উপরোক্ত উপায়ে আইন অনুসারে mediation, arbitration হলে, ৮৯ ধারার বিধান মোতাবেক mediator প্যানেল হলে এবং বিচারক, আইনজীবী আদালতের কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করলে, আইনের বিধান যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা তদারকি হলে, আইনজীবী ও বিচারক সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলে এবং সর্বোপরি বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ কিংবা তিন গুন করে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত আলাদা হলে ADR এর মাধ্যমেই দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একটি  কার্যকর উপায় হিসেবে পরিগণিত হবে।

চন্দন কান্তি নাথ : সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কুমিল্লা।