সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির লোগো এবং ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান (জিসাদ)

ব্যারিস্টার আসিফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রীসহ ৪ আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী সাবরিনা শহীদ নিশিতাসহ চারজনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রোববার (১৫ নভেম্বর) জামিনের এই আদেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুর এ এস এম শহিদুল্লাহ মজুমদার, শ্বাশুরি রাশেদা শহীদ ও শ্যালক সায়মান শহীদ নিশাত।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চার আসামি ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনে ছিলেন। রোববার তারা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিন চান।

তাপস কুমার পাল বলেন, মামলার মূল নথি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখা থাকায় তা তলব করে আগামী ২২ নভেম্বর জামিন বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করা হয়। সেই পর্যন্ত আসামিরা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

এর আগে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী কলাবাগান থানাকে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর গত ২১ অক্টোবর আসামিরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান। এ সময় তাদের ১৫ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলাবাগান থানাধীন কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১৬৩ নম্বর বাসা থেকে লাফিয়ে পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলামের ছেলে ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ।

তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৩৩ বছর। এ মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। এটি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, সাবরিনা শাহিদ নিশিতাকে প্রেম করে বিয়ে করেন আসিফ। এই বিয়ে মেনে নেয়নি তার পরিবার। এ কারণে বাবাসহ পরিবার মিরপুরে থাকলেও স্ত্রীকে নিয়ে কাঁঠালবাগান শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই।

ঘটনার দিন আসিফের শ্যালক সায়মান নিশাদ সাংবাদিকদের জানান, আসিফ ও সাবরিনার সঙ্গে মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া হতো। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস উত্তরায় একটি রিহ্যাবেও ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে আসিফ নয়তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন।

সংকটাপন্ন অবস্থায় আসিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আসিফ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো না, তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। পরে এখানে এসে আসিফকে মৃত দেখতে পাই।

ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ বাগবাড়ী এলাকার অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে। শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬-৯০ মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি কামারখন্দ) আসনের এমপি ছিলেন। আসিফ ব্যারিস্টারি পাস করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছিলেন।

পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন এবং সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস কাজল এক বিবৃতিতে আসিফ ইমতিয়াজের মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান। তার একদিন পরই এই মামলা দায়ের করা হয়।