মোঃ শহিদুল্লাহ মানসুর

সব খুন হত্যা কিন্তু সব হত্যা খুন নয়

মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর: হত্যা বলতে কোন ব্যক্তি অন্য আরেক ব্যক্তিকে অবৈধ অজুহাত ও বিচার বহির্ভূতভাবে, আক্রোশের কারণে বা অন্যের প্ররোচনায় পূর্বকল্পিত ও বেআইনিভাবে জীবন নেয়াকে বুঝায়। প্রাচীন থেকে বর্তমান কাল, প্রায় সব সমাজই হত্যাকে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে আসছে এবং শাস্তির বিধানও প্রায় একই রকমের, হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিকে প্রতিরোধ, পুনর্বাসন বা অক্ষম করা বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে কঠোর শাস্তি প্রদান করে আসছে।

আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী জেল বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা বিশেষ ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করে আসছে। বাংলাদেশেও হত্যার বিধান একই ধরনের হলেও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে হত্যাকে ২ (দুই) ভাগেভাগ করা হয়েছে; খুন ও নিন্দনীয় নরহত্যা। যা “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ২৯৯ ও ৩০০ ধারায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে দুই অপরাধের শাস্তিতেও অনেকটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিন্দনীয় নর হত্যা (culpable homicide) হত্যা মানেই খুন মনে হলেও সব সময় হত্যা হলেই যে খুন হবে তা নয়।

সাধারণত কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোকে হত্যা বললেও হত্যাটিতে যদি “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ২৯৯ ধারায় উল্লেখিত উপাদানসমূহ বিদ্যমান থাকে তবে তখন হত্যাটিকে নিন্দনীয় নরহত্যা বলা হয়। “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ২৯৯ ধারা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায়;

 কোন কাজের দ্বারা মৃত্যু ঘটে।
 সরাসরি মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্য না থাকলেও মৃত্যুর সমুহ সম্ভাবনা জানা থাকে।
 দেহের কোন অংশে আঘাত করলে মৃত্যু ঘটতে পারে জেনেও এমনভাবে আঘাত করা ফলস্বরুপ উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
 এমন কোন কাজ যা করলে মৃত্যু ঘটতে পারে, তা জানা শর্তেও সেই কাজ করে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘাটানো।

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি উক্ত উপাদানের সমন্বয়ে কোন হত্যাকান্ড ঘটায় তাহলে তা নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণ: ঝোপের একপাশে রফিক ও করিম বন্দুক নিয়ে মজা করছিল এবং অন্য পাশে ফারুক বসে ছিল। রফিক জানে যে, ফারুক অন্য পাশে আছে, কিন্তু করিম তা জানে না। ঝোপের দিকে গুলিবর্ষণ করা হলে, ফারুকের যেন মৃত্যু হয় সেই উদ্দেশ্যে বা মৃত্যু হতে পারে বলে জানা সত্ত্বেও, রফিক গুলিবর্ষণ করার জন্য করিমকে অনুরোধ করে। করিম অনুরোধ রক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করে ফলে ফারুকের মৃত্যু হয়। এইক্ষেত্রে করিম কোন দোষে দোষী নাও হতে পারে, কিন্তু রফিক নিন্দনীয় নরহত্যার অপরাধ করেছে।

খুন (Murder): সকল খুনই নিন্দনীয় নরহত্যা তবে সব নিন্দনীয় নর হত্যা খুন বলে বিবেচিত হয়না। “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ৩০০ ধারা বিশ্লেষণ করলে খুনের ক্ষেত্রেও কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায়। উপাদানগুলোর সমন্বয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো হলে তা নিন্দনীয় নরহত্যা নয়, বরং খুন বলে গন্য করা হয়-

 এমন কোন কাজ যা মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যেই করা হয় এবং মৃত্যু ও সংঘটিত হয়।
 এমন দৈহিক জখম, যে জখমে মৃত্যু ঘটাতে পারে বা সম্ভাবনা থাকে তা জানা সত্ত্বেও সে ধরণের জখম করে মৃত্যু ঘটানো।
 এমন দৈহিক জখম, যার স্বাভাবিক পরিনতি মৃত্যু ঘটানোর জন্য যথেষ্ট তা জানা সত্ত্বেও সে ধরণের জখম করে মৃত্যু ঘটানো।
 এমন কোন কাজ, যে কাজে কারো মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা থাকে তা জানা সত্ত্বেও ঝুঁকি নেওয়ার অজুহাতে সেই কাজ করে, অন্য ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো।

উদাহরণ: খুনের ব্যখ্যায় বেশ কয়েকটি উদাহরণের প্রয়োজন, রফিক ইচ্ছাকৃতভাবে করিমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাকে উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করে ফলে করিমের মৃত্যু হয়। রফিক খুন করেছে। আবার রফিক জানে যে, করিম এমন রোগে ভুগতেছে যে, যেকোন আঘাতেই তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। এটা জানা সত্ত্বেও রফিক, মৃত্যু ঘটাবার উদ্দেশ্যেবা এমন আঘাত যার স্বাভাবিক প্রকৃতিমৃত্যু বা যথেষ্ট, সে ধরণের আঘাত করে এবং করিমমৃত্যুবরণ করে। রফিকএখানে খুনের অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। আবার কোন ব্যক্তি বিনা-অজুহাতেমিছিলে বা জনতার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে এবং সেখানে উপস্থিতকোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে, গুলিবর্ষণকারী ব্যক্তি খুনের দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত হবে, যদিও তাঁর বিশেষ কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার কোন পূর্বপরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য ছিল না।

ব্যতিক্রম: ১৮৬০” এর ৩০০ ধারায় কতগুলো ব্যতিক্রম আছে, যেখানে হত্যা খুন হিসাবে বিবেচিত না হয় নিন্দনীয় নরহত্যা বিবেচিত হয়। ব্যতিক্রমগুলো হলোঃ

১. আকস্মিক উত্তেজনার কারণে হত্যা: কোন ব্যক্তি আকস্মিক উত্তেজনায় মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যদি উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিকে অথবা ভুলক্রমে বা উদ্দেশ্যহীন ভাবে অন্যকোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তবে তা নিন্দনীয় নরহত্যা বিবেচিত হবে তবে,

• সেচ্ছায় বা নিজে নিজে উত্তেজিত হয়ে হত্যা করলে তা খুন বলে বিবেচিত হবে।
• সরকারী কর্মকর্তার আইনগত কাজে বাধা দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে হত্যা করলে তা খুন বলে বিবেচিত হবে।
• এমন উত্তেজনা যেটা আত্মরক্ষার জন্য না হয়ে বরং নিজে আক্রমণ করার জন্য উত্তেজিত হয়ে হত্যা করলে তা খুন বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণ: রফিক আকস্মিক ও মারাত্মক উস্কানির মাধ্যমেকরিমকে উত্তেজিত করে। করিম উত্তেজনার ফলেরফিককে উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করে। করিমের কাছাকাছি ফারুক দাড়িয়ে ছিল, কিন্তু সেটি করিমের জানা ছিল না এবং ফারুককে হত্যা করার ইচ্ছাও করিমের ছিল না অথবা হত্যা হতে পারে এমন ধারনাও করিমের ছিল না কিন্তু রফিকের উদ্দেশ্যে যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে তা ফারুকের গায়ে লাগার ফলে ফারুকের মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে করিম খুন হয় নি, কেবল নিন্দনীয়নরহত্যানরহত্যা করেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তার আইনগত কাজে বাঁধা দিতে বা নিজে নিজে বা অপরপক্ষকে আক্রমণের জন্য উত্তেজিত হয়ে কাউকে হত্যা করলে তা খুন বলেই বিবেচিত হবে।

২. দেহ ও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে: যদি কোন ব্যক্তি তাঁর দেহ আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই (সরল বিশ্বাসে), ক্ষতি কমানোর উদ্দেশ্যে, আইনুযায়ী প্রদত্ত বল প্রয়োগের ক্ষমতা অতিক্রম করে, বল প্রয়োগ (আঘাত) করে এবং আক্রমণকারী বা ক্ষতি সাধনকারীর মৃত্যু ঘটে তবে তা নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণ: রফিক ধারালো ছুরি দিয়ে করিমকে আঘাত করার চেষ্টা করে। করিম পিস্তল দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে রফিককে দমাতে চেষ্টা করলেও রফিক আগ্রাসীভাবে আঘাত করার চেষ্টা করে। করিমের সামনে অপর কোনভাবে আঘাত হতে আত্নরক্ষা করার উপায় নেই বলে বাধ্য হয়ে সরল বিশ্বাসে গুলি করে, এতে রফিকের মৃত্য হয়। এখানে করিম খুন করে নাই, শুধু নিন্দনীয় নরহত্যা ঘটিয়েছে। কেননা রফিক ছুরি দিয়ে আক্রমণ করলেও করিম আগ্নেয়স্ত্র ব্যবহার করে যা ছুরি তুলনায় বেশি ভয়ানক।

৩. সরকারী কাজ করার ক্ষেত্রে: কোন সরকারী কর্মকর্তা বা সরকারী কর্মকর্তাকে সহায়তাকারী কোন ব্যক্তি, আইনগত ও অতিপ্রয়োজনীয় কোন কাজ করতে গিয়ে সৎ বিশ্বাসে অইনগত ক্ষমতা অতিক্রম করে বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটালে উক্ত মৃত্যু নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণ: রফিক ও তাঁর সহকারী কোন সরকারি ও জনগুরুত্বপূর্ন কাজ করতে গেলে করিম ছুরি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। রফিক পিস্তল দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে করিমকে দমাতে চেষ্টা করলেওকরিমকে দমাতে পারে নি। রফিক আত্মরক্ষা করার জন্য গুলি করে,যদিও গুলি করার প্রয়োজন ছিল না বা পরিস্থিতি হয় নি, এতে করিমের মৃত্য হয়। এখানে রফিক খুন করে নাই, কিন্তু নিন্দনীয় নরহত্যা ঘটিয়েছে।

৪. আকস্মিক কলহে মৃতুর ক্ষেত্রে: আকস্মিক কলহের জেরে, পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া কাউকে হত্যা করা হলে এবং উক্ত হত্যা অসঙ্গত বা নির্মম বা অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে না করলে তা নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এক্ষেত্রে কোন পক্ষ থেকে কলহ বা আগ্রমণ শুরু হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

উদাহরণ: রফিক ও করিম রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। হটাৎ তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির শুরু হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়েই উত্তেজিত হলে রফিক ধারালো ছুরি দিয়ে করিমকে আঘাত করে। এতে করিমের মৃত্য হয়। এখানে রফিক খুন করে নাই, শুধু নিন্দনীয় নরহত্যা ঘটিয়েছে।

৫. মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়া: আঠার বছরের অধিক বয়স্ক কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর ঝুঁকি আছে জেনেও অন্য কারো প্ররোচানায় কোন কাজ শুরু করেন এবং উক্ত কাজ করতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয় তবে উক্ত প্ররোচনাকারী ব্যক্তি নিন্দনীয় নরহত্যার অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবেন।

উদাহরণ: রফিক ইচ্ছাকৃতভাবে করিমকে কোন কাজ করতে প্ররোচনা দেয় যা করলে করিমের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি, এখানে করিমের বয়স আঠারো বছরের বেশি। এক্ষেত্রে করিম প্রাপ্তবয়স্ক সুতরাং তার নিজের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে এবং সে জেনে বুঝেই ঝুঁকি নিতে পারে বা না নিতেও পারে; সুতরাং যদি করিম ঐ কাজ করে এবং তাঁর মৃত্যু হয় তবে রফিক নিন্দনীয় নর হত্যার অপরাধ করেছে।

শাস্তি: “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ২৯৯ ও ৩০০ ধারার দুটি অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রানহানি ঘটলেও শাস্তির ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান; ১. “দণ্ডবিধি ১৮৬০” এর ৩০৪ ধারা অনুযায়ী, ২৯৯ ধারায় বর্ণিত নিন্দনীয় নরহত্যার শাস্তি, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যেকোন মেয়াদের কারাদণ্ড যা ১০ বছর পযর্ন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে। ২. দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২ ধারা অনুযায়ী, ৩০০ ধারায় বর্ণিত খুনের শাস্তি, মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।

কেস “ল” (নিন্দনীয় নরহত্যা)

১. এই মামলায় কোর্ট মন্তব্য করেন যে, আমি মনে করি না যে এখানে হত্যার কোনো উদ্দেশ্য ছিল; আমি এটাও মনে করি না, যে শারীরিক আঘাত হয়েছে তাঁর সাধারণ প্রকৃতি মৃত্যু হতে পারে। আমি মনে করি, উক্ত আঘাত মৃত্যুর কারণ নয়।………………এই কারণে আমার মতামত, বন্দীকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত না করে বরং নিন্দনীয় নরহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা উচিত। (Para 8 and 9, Reg vs Govinda on 18 July, 1876)

২. এই মামলায় কোর্ট, যে প্রশ্নগুলি উত্থাপন করেন তা হলো- (১) মৃত ব্যক্তির শারীরিক আঘাতগুলি অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছিল কিনা; এবং যদি তা হয়, (২) উক্ত আঘাতের সাধারণ প্রকৃতি মৃত্যুর কারণ হিসাবে যথেষ্ট ছিল কিনা।…………………এ মামলায় উভয় আদালতেই প্রমাণ হয়েছে যে আসামিরা যে অপরাধ করেছে তা খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট নয়। (Para 12, Kesar Singh & Anr vs. State Of Haryana on 29 April, 2008)

কেস “ল” (খুন/ Murder)

১. প্রকৃত নিয়ম হলো, দুর্ঘটনার কারণে বা অবহেলার ফলে আঘাত নয়, যেখানে শক্তভাবে ধারণা করা হয় যে, আঘাতটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছিল, যদিও এই অনুমানটি অন্যান্য পরিস্থিতিতেও খণ্ডন বা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, যেমন, অভিযুক্তের উদ্দেশ্য, আক্রমণের প্রকৃতি, আক্রমণের সময় ও স্থান, নিহতের অবস্থান ও অবস্থা, জখমের সংখ্যা, বলপ্রয়োগের পরিমাণ বা কত জোরে আঘাত করা হয়েছে, ইত্যাদি। (Para 14, Behari And Ors. Vs. State on 29 April, 1952)

২. সম্ভাব্য শব্দের অর্থ সম্ভবত এবং এটি “হয়ত বা হতেও পারে” থেকে পৃথক করা হয়েছে। যখন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সম্মুখ বা তাঁর চেয়েও বেশি কিন্তু এখনো ঘটেনি, তখন আমরা বলতে পারি ঘটানাটি “সম্ভবত” ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে, সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আদালতকে অভিযুক্তের অবস্থানে দাঁড় করাতে হবে এবং তারপর বিচারককে এই আইনের দ্বারা মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এমন জ্ঞান ছিল কিনা তা বিচার করতে হবে। (Para 14, Thomas vs. State of Kerala on 22 March, 1991)

মন্তব্য: আপাতদৃষ্টিতে হত্যা মানেই খুন মনে হলেও আইনের ধারা দুটি বিশ্লেষণ করলে নিন্দনীয় নরহত্যাও খুনের মধ্যে উপাদানেও শাস্তিতে সূক্ষ্ম পার্থক্য পাওয়া যায়। যেকোন হত্যায় মূল অপরাধ হলো নিন্দনীয় নরহত্যা, খুন একটি শাখা মাত্র। সকল খুনের মাঝেই নিন্দনীয় নরহত্যা বিদ্যমান কিন্তু সকল নিন্দনীয় নরহত্যা মাঝে খুন থাকে না। দোষীমন (Guilty Mind) যে হত্যায় উপস্থিত থাকে সেখানে হত্যাকে খুন বলে বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ কেউ যদি জেনে, বুঝে, ইচ্ছাকৃত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তবে তা খুন বলে বিবেচিত হয়।

পরিশেষে নিন্দনীয় নরহত্যা এবং খুনের মাঝে যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, বিচার ও বিশ্লেষণ করে দেখলে দুটি অপরাধই প্রাণনাশক। উভয় ক্ষেত্রেই রক্ত নিয়ে উন্মত্ততা, অনবরত চোখের জল, দীর্ঘস্থায়ী শূন্যতা, হাহাকার ও পরিবার তথা সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা নষ্টকারী অপরাধ।

মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর: শিক্ষার্থী; আইন বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি