বিচারহাইকোর্টে হাজির হয়ে এক কিশোরী বললেন, ‘আমি ধর্ষণের শিকার, বিচার চাই’পতি সিনহার নামে মিথ্যা মামলা: ব্যারিস্টার হুদার বিষয়ে আদেশ মঙ্গলবার
উচ্চ আদালত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা তদন্তে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণের নির্দেশ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্তসংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ প্রতিপালন না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই আইনে দায়েরকৃত মামলার তদন্তে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, এই মামলাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন মামলায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আইনের বিধান অনুসরণ না করে আইনে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট সাইবার ট্রাইব্যুনাল হতে কোনো অনুমোদন না নিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে।

সেজন্য এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া, কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মহাপুলিশ পরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হলো।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, (১) তদন্তকারি অফিসার (ক) কোনো অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করবেন, (খ) দফা (ক) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে তিনি তার নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ১৫ দিন বৃদ্ধি করতে পারবেন, (গ) দফা (খ) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে তিনি এর কারণ লিপিবদ্ধ করে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করবেন এবং ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন, (২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তদন্তকারী অফিসার কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে ট্রাইব্যুনাল তদন্তের সময়সীমা যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবেন।

বিদ্যমান আইনের এই ধারা প্রতিপালন না করার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছে, গত ৯ মার্চ এই মামলার এজাহার দাখিল করা হলেও অদ্যাবধি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারার বিধান অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এমনকি আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৬০ ও ১৫ দিন অতিক্রান্ত হলে পরবর্তী তদন্ত অব্যাহত রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেটাও প্রতিপালন করছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর সাইবার ট্রাইব্যুনালে সরাসরি মামলা দায়ের হয়েছে ১ হাজার ৮২টি। এসব মামলার মধ্যে ৪৪৭টি মামলা তদন্তের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা দেড় শতাধিক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে।

উল্লেখ্য, যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলানগর থানায় ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি সাইফুজ্জামান শিখর।
একদিন পর ১০ ও ১১ মার্চ হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাজলের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়।

মামলা হওয়ার পর ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুলের ‘পক্ষকাল’ অফিস থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হন। তাই ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন।

পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।

ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফটো সাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এসব মামলায় কারাগারে থেকে জামিন চান কাজল। জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুল শুনানিকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে আদালত। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক লিখিত প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪০ ধারায় তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি যেসব নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য বলা হয়েছে, তা অনুসরণ করছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা।