সাব্বির এ মুকীম
সাব্বির এ মুকীম

“বন্টনে” নিয়ে অবশ্যপাঠ্য সাম্প্রতিক মাইল ফলক রায়

সুপ্রীম কোর্ট অনলাইন বুলেটিন এর ১৪ এসসিওবি (২০২০) হাইকোর্ট সংখ্যার ৫৩ নং পষ্ঠা হতে “বন্টন” বিষয়টি নিয়ে যে রায়টি ছাপা হয়েছে তা এই বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সবচে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যপাঠ্য রায় হিশেবে আমি চিহ্নিত করি। এপ্লাইড জুরিসপ্রুডেন্স এর এক অন্যতম বাংলাদেশী উদাহরণ এই রায়টি। আইন নিয়ে বলা হয় ”Law is common sense”, সে প্রেক্ষিতে জুরিপ্রুডেন্স কে নিয়ে বলা যায় ”Jurisprudence is sense of law”। আমি মনে করি এই রায়টি বাংলাদেশী স্কুল অব জুরিসপ্রুডেন্সে একটি মাইল ফলক রায়। আমার বিবেচনায় জুডিশিয়াল ক্রাফটম্যানশিপ এর এক অনন্য উদাহরণ হিশেবে ই রায় কে চিহ্নিত করেছি।

বিগত ১লা জুন ২০২০ তারিখে মোঃ আক্রম আলী গং বনাম খশরু মিঞা গং শিরোনামের মহামন্য হাইকোর্ট ডিভিশনের ২০০৬ সনের ৩১৭৯ নং সিভিল রিভিশন এ প্রচারিত রায়টি বিচারপতি মোহাম্মাদ খুরশীদ আলম সরকারে এর একক বেঞ্চে প্রদান করা হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, বাক-স্বাধীনতা, নাছিরের বিয়ের বৈধতা গয়রহঃ এর মতো চকচকে বিষয় নয় বলেই ঢাকার আইনী আলোচনায় “বন্টন” বেশ ম্লেচ্ছ কিন্তু কিন্তু জনগণের দৈনন্দিন যাপিত বিচারিক জীবনে “বন্টন” খুবই কষা স্বাদের তিক্ত নিয়মিত অভিজ্ঞতা। ঢাকা ব্যতীত বাকী দেশে এমনকী ঢাকা এর কোনো এক সময়ও, দেওয়ানী উকিলদের নিয়ে পরিহাস এর পরিবেশ তৈরী হবার সবচে বড়ো প্রচ্ছন্ন নিয়ামক হলো ”বন্টন” মামলার অপব্যবহার।

বাংলাদেশে খুঁজলে কোনো বিচারিক স্তরে ১৮০০ সনের অনিষ্পন্ন মামলা যদি পাওয়া যায়, তবে তা বন্টনের মামলা হওয়ার সম্ভাবনাই সিংহভাগ। তাই যাঁরা আইনের ছাত্র হয়েও আইন সম্পর্কে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে সবসময়ই অপ্রতুল বলে বিবেচিত করেন কেবল এবং কেবল মাত্র তাঁদের জন্য এই রায়টি অবশ্য পাঠ্য মর্মে আমি অনুভব করি। বিজ্ঞ আদালতের আলোচ্য রায়টি নিয়ে প্রশংসা করার যোগ্যতা আমার নাই। এই লিখিত বর্ণণায় রায়টি আমি যেভাবে পাঠ করেছি তার বিবরণ উকিল ফর্ম্যাটে ব্যাক্ত করছি মাত্র। তাই ১মেই আমরা জেনে নেই এই আলাপের কাঠামোটা কিভাবে সাজানো।

বিবরণ কাঠামো

এই লিখিত পাঠে আমরা ১মে পড়বো আলোচ্য রায়ে বিচার্য বিষয় গুলো কি কি ছিলো। খুব সংক্ষেপে প্রতিটি বিচার্য্য বিষয় ভিত্তিক উত্তর এর রায়ে অবস্থান দেখিয়ে আমরা বিচারিক আদালতে উপস্থাপিত মূল মামলার ঘটনা প্রবাহে চলে যাবো। বিচারিক আদালেতে দাবী- পাল্টা দাবী পাঠ শেষ আমরা দেখতে পাবো বিচারিক আদালত কি সিদ্ধান্ দিলেন। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ সহ আপিল আদালতের ঘটনা প্রবাহ লিখবো । এভাবে আমরা আলোচ্য রিভিশন দায়েরেরে ইতিহাসটুকু জেনে নিয়ে রিভিশনে পক্ষ-বিপক্ষ’র নিযুক্তীয় আইনজীবী উপস্থাপিত যুক্তিতর্ক গুলো সম্বন্ধে জানবো। রিভিশনের রায়ে বিজ্ঞ আদলত যেসব আইন, বিধি ও বিধান এবং পূর্বনজীর সমূহ আলোচনা করেছেন তার তালিকা করে আমরা চলে যাবো বিচার্য্য বিষয় সমূহের আইনগত প্রেক্ষিতগুলোতে রিভিশন আদালতের সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি আলোচনায়। তার সাথে আমরা জেনে নেবো সেই বিচার্য্য বিষয়গুলোবে আলোচ্য মামলার ঘটনার আলোয় কি কি সিদ্ধান্তাবলীতে বিজ্ঞ আদালত উপনীত হয়েছেন। এই বুদ্ধিবৃত্তিক ভ্রমনের চুড়ান্ পর্যায়ে এসে আমরা জেনে নেবো এই রিভিশনে বিজ্ঞ আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত কি ছিলো। আমরা শেষ করবো রায়ের শেষে বিজ্ঞ আদালত প্রদত্ত কিছু সাধারণ প্রস্তাবনা এবং বিজ্ঞ আদালতের উপসংহার নির্দেশনাগুলোর সাথে। বিবৃত মতেই আমরা শুরু করবো আলোচ্য রিভিশন রায়ের বিচার্য বিষয়গুলো নিয়ে।

বিচার্য বিষয়

বিচার্য বিষয় মানেই হলো কোন কোন পয়েন্টে রায় প্রদান করা হবে তা ১মেই ঠিক করে নেয়া। আলোচ্য রায়ের ৮ম অনুচ্ছেদে মোট ৭টি বিচার্য্য বিষয় নির্ধারণ করে সেসবের উত্তর খোঁজা হয়। বিচার্য বিষয়গুলো নীচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:-

১ নং বিচার্য্য বিষয়

কোনো (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা “বন্টন”, “স্বত্ত্ব, “অন্যান্য” (ইংরেজী ভাষায় পার্টিশন স্যুট, টাইটেল স্যুট, আদার ক্লাস স্যুট) গয়রহঃ নামে নাম করণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে কীনা এবং ভুল নামকরণের ফলে কোনো মোকাদ্দমা রক্ষনীয়তা হারায় কীনা?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ১৩ অনুচ্ছেদের ৬ষ্ঠ ও ৭ম লাইনে এবং ১৪ অনুচ্ছেদের শেষ ৩ লাইনে।]

২ নং বিচার্য্য বিষয়

যদি কোনো দেওয়ানী মোকাদ্দমা প্রাসংগিক প্রার্থনা না করলে বা ভুল প্রার্থনা করা হলে খারিজ হবে কীনা?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ১৯ অনুচ্ছেদের শেষ ৪ লাইনে তথা শেষ বাক্যে।]

৩ (এ) নং বিচার্য্য বিষয়

বন্টনের মামলায় বাদীকে স্ব্ত্ব চাইতেই হবে কীনা তথা বন্টনের মামলায় সঠিক প্রার্থনা কি রকম?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৩৮ অনুচ্ছেদের প্রথম ৭ লাইনে তথা প্রথম বাক্যে।]

৩) (বি) নং বিচার্য্য বিষয় ও ৩) (সি) নং বিচার্য্য বিষয়

(বি) বন্টনের মোকাদ্দমার আরজীর তপসিলে বাদী ও বিবাদীর কমন পূর্ববর্ত্তির সকল সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কীনা?

(সি) যৌথ-প্রজা বা জয়েন্ট টিনেন্ট, সহ-মালিক বা কো-ওউনার, সহ-প্রজা বা কো-টিনেন্ট এদের সকলের অবস্থান কি একই তথা বন্টনের মোকাদ্দমায় কোন কোন মূল বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হয়?

[এ প্রশ্ন ২টির উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৫৫ অনুচ্ছেদে ]

৪ নং বিচার্য্য বিষয়

কোন কোন নীতির ভিত্তিতে একটি (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা কে “রিমান্ডে প্রেরণ” করা হয়?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৭৩ অনুচ্ছেদে ]

৫ নং বিচার্য্য বিষয়

“বিরুদ্ধ দখল” এর সংশ্লিষ্ট আইনগুলো কি কি?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৭৬ অনুচ্ছেদে ]

উপরের ৪নং ও ৫নং ব্যাতীত বাকী ৫টি আইনগত বিচার্য্য বিষয়ের উত্তরের আলোকে রায়ের ৫৬ অনুচ্ছেদে আলোচ্য মামলার ঘটনাবলীর আলোকে আরও ২টি বিচার্য্য বিষয় গ্রহন করা হয়।

(i) সাফিয়া বিবি অপাপর বেনালিশী সম্পত্তি রেখে মারা গেলেও নালিশী কেবল ১টি দাগে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে বন্টনের মামলা চলে কীনা এবং এই বিষয়টি নির্ধারণে দেখতে হবে নালিশী ভূমিতে বিবদমান পক্ষগুলো জয়েন্ট টিনেন্ট নাকী কো-ওউনার নাকী টিনেন্ট-ইন-কমন?

[এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৫৭ অনুচ্ছেদে ]

(ii)যদি দেখা যায় নালিশী ১টি দাগের ভূমি নিয়ে বন্টনের মামলা চলে এবং তা বন্টন করলে প্রার্থীদের অসুবিধা হবে না তবে পরের বিচার্য্য বিষয় হলো এখানে হচপচ বিধান প্রয়োগ করতে হবে কীনা?

বিচার্য বিষয়গুলো জানার পর আমাদের সময় হয়েছে কি নিয়ে মামলাটা শুরু হলো তা জানা।

রায়ের পিছনের দাবী-প্রবাহ

মূল মামলা

মূল মামলা শুরু হয় যখন সিলেটের বিশ্বনাথ থানার বিজ্ঞ জেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে ২০০০ সনে ৬১ নং স্বত্বের মোকাদ্দমা দায়ের করে বাদী নালিশী ৪১ শতক ভূমির মধ্যে বন্টন মূলে ১৪.০১ শতক ভূমি বন্টনের অংশ পাওয়ার দাবীতে বিজ্ঞ আদালতে বন্টনের আদেশ প্রার্থনা করেন।

বাদীর মালিকানা বিবরণ হলো:

নালিশী সাবেক ৫৭ দাগের সংশ্লিষ্ট ৩৫৪ নং এস. এ. খতিয়ানে মালিক ছিলেন সাফিয়া বিবি। সাফিয়া বিবি ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে মারা যান। বাদী সাফিয়া বিবির ১পুত্র ওকন্যাদের থেকে খরিদ সুত্রে মালিকানা দাবী করে। বাদীর মতে বিবাদীরা সাফিয়া বিবির অন্য ৩ ছেলে হতে খরিদ সুত্রে নালিশী বূমিতে মালিক দখলকার হয়ে তাদের প্রাপ্য হতে অতিরিক্ত ভূমি দখল করে। তাই বাদী বন্টনের এই মোকাদ্দমা করেন।

১ নং বিবাদী লিখিত জবাব দাখিল করে বলেন:-

জনৈক ইদ্রিস আলীর স্ত্রী সাফিয়া বিবি তাঁর দেনমোহর হিশেবে এবং স্বামীর মৃত্যুর পরে স্বামীর ওয়ারিশ সুত্রে নালিশী ভূমি পান। পরে ইদ্রিস আলী ও সাফিয়া উভয়ের মৃত্যুতে এই দম্পত্তির ওয়ারিশদের মধ্যে আপোষ মতেই মৌখিক বন্টন হয়। আপোষ মতেই নালিশী ভূমিতে ওই দম্পত্তির মেয়েরা কোনো সম্পত্তি পান নাই কিন্তু বেনালিশী ভুমি পেয়েছেন। তাই নালিশী ভূমি হস্তান্তরের কোনো অধিকার ওই মেয়েদের ছিলো না। উপরি উপর, ওই ২ মেয়ে ১নং বিবাদী বারাবের একটি “না-দাবী”দলিল সম্পাদন করে নালিশী ভূমিতে তাদের কোনো দাবী নাই মর্মে ঘোষণা করেছে। রেজিষ্ট্রার্ড দলিল মূলে বিবাদী নালিশী ভূমি পেয়ে যথাযথভাবেই দখলে আছে। শুরু হয় বিচারিক আদালতের কার্যক্রম।

বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত

বিচার কার্যক্রমে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত বাদী পক্ষে ৫জন এবং বিবাদী পক্ষে ৫জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। বিগত ৩০শে অক্টোবর, ২০০১ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত বাদী কে ১১.৬২ শতক ভূমির ছাহাম প্রদান করে প্রাথমিক ডিক্রি দেন। রায়ে বিজ্ঞ আদালত বলেন, যে বিবাদী সাফিয়া বেগমের ওয়ারিশদের মধ্যে পারিবারিক আপোষ বন্টন প্রমান করতে ব্যর্থ হওয়ায় সাফিয়া বেগমের ২মেয়ে নালিশী ভূমিতেও অংশ পাবে। এ রায়ে স্ক্ষুব্ধ হয়ে ১নং বিবাদী এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেন।

আপিল আদালতের সিদ্ধান্ত

বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১নং বিবাদী সিলেটের বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে ২০০২ সনের ৯নং দেওয়ানী আপিল দায়ের করেন। বিজ্ঞ জেলা জজের নির্দেশ মোতাবেক সিলেটে বিজ্ঞ ২নং যুগ্ম জেলা জজ উক্ত আপিল টি শুনে বিগত ১০ ই এপ্রিল ২০০৬ তারিখে আপিলটি মঞ্জুরক্রমে মামলাটি বিচারিক আদালতে আপিল আদালতের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক পুনরায় বিচার করতে নির্দেশ প্রদান করে রিমান্ডে প্রেরণ করেন।

আপিল আদালতের পর্যবেক্ষণ

আপিল আদালতের মতে সাফিয়া বেগমের মেয়েরা নালিশী ভূমিতে কোনো অংশ পান নাই। নালিশী তপসিলে আরও কিছু যৌথ সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৪৫ ডিএলআর ৪৫১ পৃষ্ঠার সিদ্ধান্ত মতেই বিবাদী তার দখলীকৃত বাড়তি অংশ “বিরুদ্ধ দখল” জনিত স্বত্বে দাবী করতে পারে। বিজ্ঞ আপিল আদালত মনে করেন, উচ্চ আদালতের যে স্দিধান্তের আলোকে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত বন্টনের মামলায় সকল যৌথ সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত না করার ব্যাতিক্রমী নীতির প্রয়োগ করেছেন তা আসলে আলোচ্য মামলায় প্রয়োগযোগ্য নয়। বিজ্ঞ আপিল আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মূল মামলার বাদী আলোচ্য রিভিশন দায়ের করেন। রিভিশন শুনানীতে উভয় পক্ষ তাদের স্ব স্ব নিযুক্তীয় আইনজীবীর মাধ্যমে যার যার যুক্তি উপস্থাপন করেন।

রিভিশনে পক্ষ-বিপক্ষ’র নিযুক্তীয় আইনজীবী উপস্থাপিত যুক্তিতর্ক

বাদী- রিভিশন আবেদনকারীর যুক্তি (আলোচ্য রায়ের ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদ):  

(১) বাদী ও ১নং বিবাদীর মধ্যে নালিশী ভূমি ব্যাতিত আর অন্য কোনো সম্পত্তিতে কমন ইনটারেস্ট নাই। বোদী ও বিবাদীর কমন ইন্টারেস্ট যে সম্পত্তিতে নাই তা বন্টনের মামলায় প্রাসংগিক নয় মর্মে কিছু পূর্বনজীর দেয়া হয়। যথা: ৫২ ডিএলআর ৩৪, ৮ ডিএলআর ৬৪৫।

(২) বিজ্ঞ আপিল আদালত অপ্রাসংগিকভাবে “বিরোধ দখল’ এর অবতারণা করেছেন যা বিবাদীর প্লিডিংসে নাই। এর মাধ্যমে বিজ্ঞ আপিল আদালত থার্ড কেস তৈরী করেছেন। এ প্রেক্ষিতে কিছু কিছু পূর্বনজীর দেয়া হয়। যথা: ৪১ ডিএলআর ৪৬৭, ৫ এডিসি ৪৪, ৪২ ডিএলআর ৩৩৫।

(৩) আলোচ্য মামলায় ৪৫ ডিএলআর এর উল্লেখিত সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয় কারন আলোচ্য ঘটনা এবং ৪৫ ডিএলআর সিদ্ধান্তের ঘটনা একেবারেই আলাদা।

(৪) মামলা বিচারিক আদালতে রিমান্ডে প্রেরণের আদেশ যথাযথ হয়নি। এ প্রেক্ষিতে কিছু কিছু পূর্বনজীর দেয়া হয়। মামলার নথী পর্যালোনাক্রমে বিজ্ঞ আপিল আদালতই তাঁর পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন। যথা: ৫৫ ডিএলআর(এডি) ২০, ৫৪ ডিএলআর ৫০৭, ৩০ ডিএলআর ১৭৯, ৪১ ডিএলআর ৩৩৬।

(৫) আপিল আদেম দেওয়ানি কার্যবিধির ৪১ আদেশ ২৩ বিধি মোতাবেক হয়নি। ( এ বিধিতে প্রাথমিক কারণে আপিল মঞ্জুর করতঃ মামলা রিমান্ডে প্রেরণ সংক্রান্ত বিধান দেয়া আছে)

বিবাদী- রিভিশন প্রতিপক্ষ’র যুক্তি (আলোচ্য রায়ের ৭ম অনুচ্ছেদ):  

(ক) সাফিয়া বেগমের সন্তানের সকলের জ্ঞানগোচর মতেই আপোষে নালিশী ভূমি পেয়ে নালিশী ভুমি বিবাদী বরাবরে হস্তান্তর করেছে।

(খ) সাফিয়া বেগমের সকল ত্যাজ্যবিত্ত মোকাদ্দমার তপসিলে আনা দরকার ছিলো।

(গ) যেহেতু বিবাদীগন নালিশী ভূমিতে বাদীর স্ব্ত্ব অস্বীকার করে তাই বাদীর স্বত্ব ঘোষণা প্রার্থণা করা দরকার ছিলো।

(ঘ) ”বন্টন” এর মোকাদ্দমা নয়, বরং বাদীর স্বত্বের মোকাদ্দমা করা দরকার ছিলো।

প্রতিপক্ষ পক্ষে যেসব পূর্বনজীর দেয়া হয়। যথা: ৩৭ ডিএলআর(এডি) ২১৬, ৩৬ ডিএলআর ২৯০, ৩৪ ডিএলআর ১২৭।

পক্ষ-প্রতিপক্ষ’র পাল্টাপাল্টি যুক্তি বিবেচনা করে বিজ্ঞ রিভিশন আদালত রায়ের ৮ম অনুচ্ছেদে আলোচিত বিচার্য্য ৭টি বিষয় নির্ধারণ করেন। বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করার পর প্রাসংগিক আইন, বিধি, বিধান এবং পূর্ব নজীর বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞ আদলত রায় লেখেন।

রিভিশন রায়ে আলোচনাকৃত আইন, বিধি ও বিধান এবং পূর্বনজীর সমূহ:  

আলোচ্য রায়ে বিজ্ঞ আদালত যেসব আইন, বিধি ও বিধান আলাপ তোলেন তার তালিকা বিচার্য্য বিষয় মোতাবেক নীচে দেয়া হলো:-

১ নং বিচার্য্য বিষয়

কোনো (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা “বন্টন”, “স্বত্ত্ব, “অন্যান্য” (ইংরেজী ভাষায় পার্টিশন স্যুট, টাইটেল স্যুট, আদার ক্লাস স্যুট) গয়রহঃ নামে নাম করণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে কীনা এবং ভুল নামকরণের ফলে কোনো মোকাদ্দমা রক্ষনীয়তা হারায় কীনা?

আলোচনাকৃত আইন গয়রহ:-

(১) দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮

ধারা ৯, ধারা ১৬, ধারা ৫৪,

আদেশ ৪,

আদেশ ৬

আদেশ ৭

বিধি ২, বিধি ৩, বিধি ৭,

(২) সিভিল কোর্টস এক্ট ১৮৮৭

(৩) ম্যানুয়াল অব প্র্যাকটিক্যাল ইনসট্র্যাকশন ফর দ্য কনডাক্ট অব সিভিল কেইজেস, ১৯৩৫

(৪) সিভিল রুলস এন্ড অর্ডার্স

অধ্যায় ২

বিধি ৪৭, বিধি ৪৮, বিধি ৪৯

অধ্যায় ৩৩

বিধি ৭৫২, বিধি ৭৫৭, বিধি ৭৬৯

২ নং বিচার্য্য বিষয়

যদি কোনো দেওয়ানী মোকাদ্দমা প্রাসংগিক প্রার্থনা না করলে বা ভুল প্রার্থনা করা হলে খারিজ হবে কীনা?

আলোচনাকৃত আইন গয়রহ:-

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮

ধারা ৯, ধারা ১৬, ধারা ৫৪,

আদেশ ৪,

আদেশ ৬

আদেশ ৭

বিধি ১, বিধি ৭

আলোচনাকৃত পূর্বনজীর সমূহ:-

(১) রিচার্ড রস স্কিনার বনাম কুনওয়ার ননিহাল সিং (১৯১৩) এল আর ৪০ আই এ ১০৫

(২) কেদার লাল শীল বনাম হরি লাল শীল, এআইআর ১৯৫২ এসসি ৪৭

৩ (এ) নং বিচার্য্য বিষয়

বন্টনের মামলায় বাদীকে স্ব্ত্ব চাইতেই হবে কীনা তথা বন্টনের মামলায় সঠিক প্রার্থনা কি রকম?

আলোচনাকৃত আইন গয়রহ:-

(১) দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮

ধারা ৫৪,

আদেশ ২০

বিধি ১৮

আদেশ ২৬

বিধি ১৩, বিধি ১৪

(২) পার্টিশন এক্ট, ১৮৯৩

ধারা ২, ধারা ৩, ধারা ৪

(৩) সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২

ধারা ৪৪, ধারা ৪৫, ধারা ৪৬, ধারা ৪৭

(৪) স্যুট ভ্যলুয়েশ এক্ট, ১৮৮৬

ধারা ৩, ধারা ৮, ধারা ৯, ধারা ১১

(৫) কোর্ট ফি আইন, ১৮৭০

ধারা ৭, ধারা ৮(বি), ধারা ১১, ২য় তপসিলের ১৭ অনুচ্ছেদ

(৬) দ্য এস্টেট পার্টিশন এক্ট, ১৮৯৭ (রহিতকৃত)

(৭) সুনিদৃষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭

ধারা ৩৯, ধারা ৪০, ধারা ৪১, ধারা ৪২, ধারা ৪৩, ধারা ৪৪, ধারা ৫২, ধারা ৫৩, ধারা ৫৪, ধারা ৫৫, ধারা ৫৬, ধারা ৫৭

(৮) রেজিষ্ট্রেশন এক্ট, ১৯০৮

ধারা ১৭

(৯) তামাদি আইন, ১৯০৮

১ম তপসিলের ১২৭ অনুচ্ছেদ

(১০) প্রজাস্ব্ত্ব আইন, ১৯৫০

ধারা ৮৯, ধারা ১১৬, ধারা ১১৭, ধারা ১৪৩(বি),

৩) (বি) নং বিচার্য্য বিষয়

বন্টনের মোকাদ্দমার আরজীর তপসিলে বাদী ও বিবাদীর কমন পূর্ববর্ত্তির সকল সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কীনা?

এবং

৩) (সি) নং বিচার্য্য বিষয়

যৌথ-প্রজা বা জয়েন্ট টিনেন্ট, সহ-মালিক বা কো-ওউনার, সহ-প্রজা বা কো-টিনেন্ট এদের সকলের অবস্থান কি একই তথা বন্টনের মোকাদ্দমায় কোন কোন মূল বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হয়?

আলোচনাকৃত আইন গয়রহ:-  

প্রজাস্ব্ত্ব আইন, ১৯৫০

ধারা ২(২৭),

ব্ল্যাক ল ডিকশনারি-

পার্টিশনের সংজ্ঞা, টিনেন্সির সংজ্ঞা, জয়েন্ট টিনেন্সির সংজ্ঞা, টিনেন্সি-ইন-কমন এর সংজ্ঞা

হ্যান্ডবুক অব ইক্যুইটি জুরিসপ্রুডেন্স, জেমস ইটন, ১৯২৩-

পার্টিশন এর সংজ্ঞা

কোটিনেন্সি এন্ড পার্টিশন, এ সি ফ্রিম্যান, ১৮৮৬,-

জয়েন্ট টিনেন্সির সংজ্ঞা, টিনেন্সি-ইন-কমন এর সংজ্ঞা

প্রিফেইস টু এস্টেইটস ইন ল্যান্ড এন্ড ফিউচার ইন্টারেস্টস- থমাস এফ বারগেইন এন্ড পল জি হাস্কল-

জয়েন্ট টিনেন্সির সংজ্ঞা, টিনেন্সি-ইন-কমন এর সংজ্ঞা

আলোচনাকৃত পূর্বনজীর সমূহ:-

জোবেদা খাতুন বনাম হামিদ আলী ৪০ ডিএলআর (এডি) ১০১

৪ নং বিচার্য্য বিষয়

কোন কোন নীতির ভিত্তিতে একটি (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা কে “রিমান্ডে প্রেরণ” করা হয়?

আলোচনাকৃত আইন গয়রহ:-

(১) দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮

ধারা ১০৭, ধারা ১১৫, ধারা ১৫১, ধারা ৩০, ধারা ৩১, ধারা ৩২

আদেশ ১৯

(২) বাংলাদেশের সংবিধান

অনুচ্ছেদ ১০৯

(৩) স্বাক্ষ্য আইন, ১৮৭০

ধারা ১৬৫

উপরে তালিকাকৃত আইন, বিধি, বিধান, পূর্ব নজীর বিশ্লেষণক্রমে আইনগত প্রেক্ষিত হতে বিচার্য বিষয় সমূহে বিজ্ঞ আদলতের আদেশ এবং আদেশের পেছনে বিজ্ঞ আদালতের যুক্তিগুলো রায়ে লিপি করা হয়।

বিচার্য্য বিষয় সমূহে রিভিশন আদালতের সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

১ নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

১ নং বিচার্য্য বিষয় ছিলো কোনো (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা “বন্টন”, “স্বত্ত্ব, “অন্যান্য” (ইংরেজী ভাষায় পার্টিশন স্যুট, টাইটেল স্যুট, আদার ক্লাস স্যুট) গয়রহঃ নামে নাম করণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে কীনা এবং ভুল নামকরণের ফলে কোনো মোকাদ্দমা রক্ষনীয়তা হারায় কীনা?

এ প্রশ্নের ১ম অংশ নিয়ে বিভিন্ন আইন ও বিধি বিধান বিস্তারিত চর্চা করে আলোচ্য রায়েরে ১৩ অনুচ্ছেদের ৬ষ্ঠ ও ৭ম লাইনে বিজ্ঞ আদালত উপসংহার টেনে লিখেন যে কোনো মামলার প্রকৃতি অনুসারে মামলার নাম কি হবে তা কোনো আইনে বলা নাই। এ প্রশ্নের ২য় অংশ নিয়ে ১৪ অনুচ্ছেদের শেষ ৩ লাইনে বিজ্ঞ আদালত লিখেন যে ভুল নামকরণ মোকাদ্দমা কে অরক্ষণীয় করে তোলে না।

২ নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

২ নং বিচার্য্য বিষয় ছিলো যদি কোনো দেওয়ানী মোকাদ্দমা প্রাসংগিক প্রার্থনা না করলে বা ভুল প্রার্থনা করা হলে খারিজ হবে কীনা?

রায়ের ১৯ অনুচ্ছেদের শেষ ৪ লাইনে তথা শেষ বাক্যে দুটি শর্ত দিয়ে লেখা হয় (১) বাদীর প্লিডিংসে কোনো যে প্রতিকার চাওয়ার চিহ্নও নাই এবং (২) বিবাদী কোনো ভাবেই সে প্রতিকার চাওয়া নিয়ে অবগত থাকে তবে সেই প্রতিকার বিজ্ঞ আদালত বাদী কে তা দিতে পারেন না।

তবে এই ১৯ অনুচ্ছেদের ই ১ম লাইনে ৩ লাইনে তথা ১ম বাক্যে বিজ্ঞ আদালত লেখেন যে, যখনই কোনো আদালতের সামনে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উপস্থাপন করা হবে, আদালতের প্রাথমিক দায়িত্বই হবে মামলার সারমর্ম অনুধাবন করা- সেজন্য বিজ্ঞ আালত কেবল পক্ষগণের দেয়া বিবরণ ই নয় চাইলে উপস্থাপিত প্রমাণাদিও আমলে নিতে পারবেন।

তার পরের বাক্যেই বিজ্ঞ আদালত যে মত দেন তার সংক্ষেপ হলো প্রতক্ষ্যভাবে বাদী কোনো কোনো প্রতিকার না চাইলেও বিজ্ঞ আদালত সে প্রতিকার বাদী কে দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সে প্রতিকার সম্বন্ধে অন্যপক্ষ অবগত কীনা তা নিশ্চিত করতে হবে । একই সাথে অন্যপক্ষ অবিচারের শিকার হবে না সে বিষয়ে তীক্ষ্ণ খেয়াল রাখতে হবে।

রায়ের ৩৯ অনুচ্ছেদের ১ম বাক্যে বিজ্ঞ আদালত সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন, বাদি আরজীতে সঠিক প্রার্থনার না করলেও মোকাদ্দমার কার্যকর নিষ্পত্তির জন্য ই বিচার্য্য বিষয় উপযুক্তভাবেই গঠন করে নেয়া বিজ্ঞ আদালতের দায়িত্ব।

বিজ্ঞ আদালতের ভাষ্য মতে শুধু এবং কেবল মাত্র প্রার্থনা না করা কীংবা ভুল প্রার্থনা করার কারণেই মামলা খারিজ করা বাধ্যতামূলক নয়।

৩(এ) নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

৩ (এ) নং বিচার্য্য বিষয় ছিলো বন্টনের মামলায় বাদীকে স্ব্ত্ব চাইতেই হবে কীনা তথা বন্টনের মামলায় সঠিক প্রার্থনা কি রকম?

বন্টনের মামলায় ছাহাম চাওয়ার পাশাপাশি বাদী কে স্ব্ত্ব ঘোষণাও চাইতে হবে। রায়ের ৩৮ অনুচ্ছেদের প্রথম ৭ লাইনে তথা প্রথম বাক্যে ৩(এ) নং বিচার্য্য বিষয় নিয়ে এই উত্তর ই লিখেছেন বিজ্ঞ রিভিশন আদালত।

২য় বাক্যে বিজ্ঞ আদালত ইংরেজী ”শ্যাল” শব্দটি ব্যবহার করে বন্টনের মামলায় ইস্যু গঠনে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত কে কমসে কম ৩টি বিচার্য্য বিষয় নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যথা

(১) নালিশী ভূমিতে বাদীর কোনো স্বত্ব বা স্বার্থ তথা ভাগ আছে কিনা?

(২) বাদী প্রার্থনা মোতাবেক বন্টন এবং পৃথক দখল এর প্রতিকার পায় কিনা?

(৩) কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় নালিশী ভূমি সুনিদৃষ্ট চিহ্নিতভাবে বন্টন করা হবে?

পরের তথা আলোচ্য রায়ের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়, বাদী যদি স্বত্বের প্রতিকার না ও চায় তবুও বিজ্ঞ বিচারিক আদালত বিচার্য্য বিষয় গঠনের সময় সে সংক্রান্ত বিচার্য্য বিষয় কে গঠনে অন্তর্ভুক্ত করনে।

রায়ের ৩৯ অনুচ্ছেদে বিজ্ঞ আদালত আরও ২টি অনুসিদ্ধান্ত প্রদান করেন।

(১) যদি কোনো বিবাদী বন্টনের মামলায় ছাহাম চায় এবং দেখা যায় বাদীর ছাহাম এবং বিবাদীর ছাহাম এর তায়দাদ মূল্যদ্বয়ের যোগফল বিজ্ঞ আদালতের আর্থিক এখতিয়ার লংঘন করে, তবে বিজ্ঞ আদালত নতুন ভাবে উদ্ভুত যোগফল তায়দাদ মূল্যের আলোকে উক্ত মামলা শোনার আর্থিক এখতিয়ার আছে কীনা সেসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আগে গ্রহন করবেন এবং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগাবেন।

(২) আরজীতে কোন আইনে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে তা স্পষ্ট করে লিপি থাকা বাঞ্চনীয়। তবে আরজীতে এই লিপি না থাকলে কেবল তা লিপি না থাকার কারণে মামলা খারিজ হবে না।

৩(বি) নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

৩) (বি) নং বিচার্য্য বিষয় ছিলো বন্টনের মোকাদ্দমার আরজীর তপসিলে বাদী ও বিবাদীর কমন পূর্ববর্ত্তির সকল সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কীনা?

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৫৫ অনুচ্ছেদের শেষ ৪ লাইনে। সে ৪ লাইনে লেখা আছে,

১ম ত বন্টনের মামলায় পক্ষ-বিপক্ষর যৌথ মালিকানাধীন সকল সম্পত্তি তপসিলে অন্তর্ভুক্ত করাটা শুধু মাত্র সুবিধার জন্য এবং তা কেবল মাত্র ইক্যুইটি জন্যই করা হয়।

২য় ত বন্টনের মামলায় যেসব সম্পত্তি বাদী ও বিবাদীর একই সাথে স্বার্থ (কম্যুনিটি অব ইন্টারেস্ট) ও দখল (ইউনিটি অব পজেশন) আছে কেবলমাত্র সেসব সম্পত্তিই অত্যাবশ্যকভাবে তপসিলে রাখতে হবে।

৩) (সি) নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

যৌথ-প্রজা বা জয়েন্ট টিনেন্ট, সহ-মালিক বা কো-ওউনার, সহ-প্রজা বা কো-টিনেন্ট এদের সকলের অবস্থান কি একই তথা বন্টনের মোকাদ্দমায় কোন কোন মূল বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হয়?

এ প্রশ্নের উত্তর ৮টি নীতির আলোকে রায়ের ৫৫ অনুচ্ছেদে বিস্তারিতভাবে দেয়া হয়। সে ৮টি নীতি হলো:-

(১) মুসলিম আইনে জয়েন্ট টিনেন্সি বলে কিছু নাই, তা আছে কেবল হিন্দু আইনে। মুসলিমরা কেবল হয় কো-ওউনার হবেন নয়তো নয়তো টিনেন্ট-ইন-কমন।

(২) কো-ওউনার এর সম্পত্তি সংক্রান্ত বন্টনের মামলার ক্ষেত্রে বিষয়গতভাবে হিন্দু-মুসলিম কোনো তফাৎ নেই।

(৩) ১ দাগে ও বন্টনের মামলা চলে যদি কো-ওউনার বা কো-টিনেন্ট হয় এবং বন্টন হলে অন্যদের অসুবিধা হবার সম্ভাবনা না থাকে।

(৪) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্টনের হবার আগ পর্যন্ত মুসলিম আইনে প্রাপ্য অংশ মোতাবেক যেকোনো দাগের বা যে কোনো প্রকারের ওয়ারিশি ভূমি থেকে যেকোনো ভাগীদার তার অংশ অনুপাতে প্রাপ্য সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন।

(৫) তবে যদি বাকী সকল কো-ওউনার স্মতি জ্ঞাপন করেন তবে যেকোনো দাগের বা যে কোনো প্রকারের ওয়ারিশি ভূমি থেকে যেকোনো ভাগীদার তার প্রাপ্য পুরো অংশের পরিমান বিক্রয় করতে পারবেন। তবে হয় বিক্রয় দলিলে স্বাক্ষী হিশেবে থেকে অথবা সে সম্মতির ঘোষণা সম্বলিত রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বাকী সকল কো-ওউনারদের এই সম্মতি প্রকাশ করতে হবে।

(৬) যদি ৫নং দফার মর্ম মোতাবেক কোনো সম্মাত ছাড়াই ১দাগে সম্পত্তি বিক্রয় হয় যা বিক্রয় কারীর উক্ত দাগে আনুপাতিক হারে প্রাপ্য অংশ হতে বেশী তবে সে ক্ষেত্রে হচপচ রুল প্রয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে,

(ক) মৃত ব্যাক্তি (যার সম্পত্তি বন্টন হবে) মোট কতটুকু সম্পত্তি রেখে মারাগেছে!

(খ) প্রত্যেক ওয়ারিশ কতটুকু করে সম্পত্তিপায়!

(গ) কোনো ওয়ারিশ কি তার প্রাপ্য হতে অতিরিক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করে ফেলেছে কিনা!

(ঘ) কো-ওউনারদের মধ্যে এমন কোনো মৌখিক বোঝাপড়া ছিলো কীনা যে টাকা বা কোনো ধরণের সুবিধা বা ১ বা ১আধিক দাগের জমির বিনিময়ে অন্য ১বা ১আধিক দাগের কোনো কো-ওউনার তার প্রাপ্য অংশর দাবী পরিত্যাগ করেছে!

(ঙ) উদ্ভত পরিস্থিতির উত্তোরণের পথ কি কি!

(৭) বন্টনের মামলায় পক্ষ-বিপক্ষর যৌথ মালিকানাধীন সকল সম্পত্তি তপসিলে অন্তর্ভুক্ত করাটা শুধু মাত্র সুবিধার জন্য এবং তা কেবল মাত্র ইক্যুইটি জন্যই করা হয়।

(৮) বন্টনের মামলায় যেসব সম্পত্তি বাদী ও বিবাদীর একই সাথে স্বার্থ (কম্যুনিটি অব ইন্টারেস্ট) ও দখল (ইউনিটি অব পজেশন) আছে কেবলমাত্র সেসব সম্পত্তিই অত্যাবশ্যকভাবে তপসিলে রাখতে হবে।

হচপচ বিধান

হচপচ বিধান এর বিবরণ দেয়া হয়েছে রায়ের ৫০ অনুচ্ছেদে। এত বলা আছে, মামলার পক্ষগণের মধ্যে যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ তার একক মালিক খুঁজে বের করে সে একক মালিকের সব সম্পত্তি বন্টন করতে হবে। এই একক মালিক টা কে? বিরোধীয় সম্পত্তির এমন একজন পূর্ব মালিক যিাঁর নিকট হতে হস্তান্তর পরিক্রমায় উভয় পক্ষ মালিকানা দাবী করার সুযোগ পেয়েছে, তিনিই বন্টনের মামলায় সে একক মালিক। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, বাদী ও বিবাদী ২টি নদী। এই নদী ২টির উৎপত্তি একই যে ঝর্ণা সে ঝর্ণা চিহ্নিত করে সে ঝর্ণার সকল জল বিবদমান ২ নদী ছাড়াও সে ঝর্ণা হতে সৃষ্ট সব নদীর প্রাপ্যতা অনুপাতে বন্টন করলে পক্ষগণের প্রাপ্যতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

৪ নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

কোন কোন নীতির ভিত্তিতে একটি (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা কে “রিমান্ডে প্রেরণ” করা হয়?

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৭৩ অনুচ্ছেদের, যাতে বলা হয় শর্ত পূরণ করলে দেওয়ানী কার্যবিধির ৪১ আদেশ ২৩ বিধি ও ২৫ বিধি তৎসহ ১০৭ (১) (৬) ধারা মোতাবেক রিমান্ডে প্রেরণ কা হয়। তবে শর্ত পূরণ না করলেও আপিল আদালত প্রয়োজন মনে করলে ১৫১ ধারা মোতাবেক রিমান্ডে ফেরত পাঠাতে পারবেন।

যদি আপিল আদালত উপযুক্ত ক্ষেত্রে রিমান্ডের প্রার্থণা নামঞ্জুর করেন, তবে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন তার রিভিশনাল এক্তিয়ার বলে মোকাদ্দমা রিমান্ডে বিচারিক আদালত বা আপিল আদালতে প্রেরণ করেন।

তবে রিমান্ডের আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় বিবেচনার জন্য বলে দেয়া হয়েছে, যথা:-

(১) মামলার ঘটনা সংক্রান্ত জটিলতা,

(২) মামলার আইন সংক্রান্ত জটিলতা

(৩) মামলার পেছনে ব্যয় হওয়া সময় এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য নিষ্পত্তি কাল।

বিজ্ঞ হাইকোর্ট ডিভিশন রিভিশনে রিমান্ডের সিদ্ধান্তে আপিল আদালত নাকী বিচারিক আদালত কোন আদালতে রিমান্ডে পাঠাবেন তা নির্ণয়ে কোন আদালত ফিরতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তূলণামূলক অধিক সুবিধা সম্পন্ন তা বিবেচনায় নিবেন।

তবে রায়ের ৭৫ অনুচ্ছেদে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে মোকাদ্দমায় স্বচ্ছ এবং কার্যকর এবং আপিল আদালতগুলো চাইলেই দেওয়ানী কার্যবিধির ৩০ ধারা, ৩১ ধারা, ৩২ ধারা ও ১৯ আদেশ এবং স্বাক্ষ্য আইনের ১৬৫ ধারা প্রয়োগ করে আপিল পরিচালনার সময়ও:-

(১) অধিকতর স্বাক্ষ্য গ্রহন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কোনো পক্ষ তার দুর্বলতা যা সে বিচারিক আদালতে কাটানোর সুযোগ পেয়েও কাটায় নাই সেই গলদ শোধরাবার সুযোগ যেনো না পায়।

(২) প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো দরকারী নথী, বালাম, কাগজাদী তলব করতে পারবেন।

(৩) যে কোনো ব্যাক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হতে নির্দেশ দিতে পারবেন।

(৪) যে কোনো ব্যাক্তি কে জবানবন্দী দাখিলের আদেশ করতে পারবেন।

(৫) যে কোনো ব্যাক্তিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবেন।

হাইকোর্ট ডিভিশন আশা প্রকাশ করেন বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে আপিল আদালতগুলো এই বাড়তি কর্মভার গ্রহন করে আবারও দায়িত্বশীলতার চিহ্ন রাখবেন।

৫ নং বিচার্য্য বিষয় সিদ্ধান্ত ও পেছনের যুক্তি

“বিরুদ্ধ দখল” এর সংশ্লিষ্ট আইনগুলো কি কি?

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে রায়ের ৭৬ অনুচ্ছেদে, আইনটি হলো নিরবিচ্ছিন্ন ১২ বছরের বিরুদধ দখল। তবে এ ক্ষেত্রে বাদীর আরজীতে সুস্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে যে বাদী কি রকমে বিরুদ্ধ দখল দাবী করে।

আইনগত প্রেক্ষিতে বিচার্য বিষয়গুলোর জবাব দেয়ার পাশাপাশি আলোচ্য ঘটনার আলোকে বিচার্য্য বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত ও যুক্তি ও বিজ্ঞ আদালত প্রদান করেন।

মামলার ঘটনাবলীর আলোকে বিচার্য্য বিষয়সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত

১ নং বিচার্য্য বিষয় এ ঘটনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত  

কোনো (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা “বন্টন”, “স্বত্ত্ব, “অন্যান্য” (ইংরেজী ভাষায় পার্টিশন স্যুট, টাইটেল স্যুট, আদার ক্লাস স্যুট) গয়রহঃ নামে নাম করণ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে কীনা এবং ভুল নামকরণের ফলে কোনো মোকাদ্দমা রক্ষনীয়তা হারায় কীনা?

ক্ষেত্রে বাদীর আরজীতে সুস্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে যে বাদী কি রকমে বিরুদ্ধ দখল দাবী করে।

মামলার ঘটনাবলীর আলোকে ১নং বিচার্য্য বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নেন, আলোচ্য মূল মামলায় মামলার নামকরণে “বন্টনের মামলা” শব্দাবলী ব্যবহার না করা হলেও আলোচ্য বন্টনের মামরা সে কারণে খারিজ হবে না।

২ নং বিচার্য্য বিষয় এ ঘটনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

যদি কোনো দেওয়ানী মোকাদ্দমা প্রাসংগিক প্রার্থনা না করলে বা ভুল প্রার্থনা করা হলে খারিজ হবে কীনা?

মামলার ঘটনাবলীর আলোকে ২নং বিচার্য্য বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নেন, যদিও আরজীতে বাদীর স্বত্ব ঘোষণা করা উচিৎ ছিলো যা বাদী করে নাই, তবে সেজন্য বাদীর মামলা খারিজ হবে না। বরং বিজ্ঞ আদালত নিজ উদ্যোগে সে সংক্রান্ত প্রতিকার দেবার ক্ষমা রাখেন।

৩ (এ) নং বিচার্য্য বিষয়, ৩) (বি) নং বিচার্য্য বিষয় ও ৩) (সি) নং বিচার্য্য বিষয় এ ঘটনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

(এ) বন্টনের মামলায় বাদীকে স্ব্ত্ব চাইতেই হবে কীনা তথা বন্টনের মামলায় সঠিক প্রার্থনা কি রকম?

(বি) বন্টনের মোকাদ্দমার আরজীর তপসিলে বাদী ও বিবাদীর কমন পূর্ববর্ত্তির সকল সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কীনা?

(সি) যৌথ-প্রজা বা জয়েন্ট টিনেন্ট, সহ-মালিক বা কো-ওউনার, সহ-প্রজা বা কো-টিনেন্ট এদের সকলের অবস্থান কি একই তথা বন্টনের মোকাদ্দমায় কোন কোন মূল বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হয়?

মামলার ঘটনাবলীর আলোকে ৩ (এ) নং, (বি) নং ও (সি) নং বিচার্য্য বিষয় ৩টিতে রায়ের বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নিতে রায়ের ৫৬ নং অনুচ্ছেদে ৫টি প্রশ্ন নির্ধারণ করেন,:-

(১) আলোচ্য মামলার বিবদমান পক্ষরা জয়েন্ট টিনেন্ট নাকী কো-ওউনার নাকী টিনেন্ট ইন কমন?

(২) সাফিয়া বেগমের আরও সম্পত্তি থাকা স্বত্বেও কেবল সাফিয়া বেগমের ১টি দাগের সম্পত্তি নিয়েই বন্টনের রায় দেয়া যাবে কীনা?

(৩) ১টি দাগে যদি বন্টন করা যায় ই তবে সে বন্টন ১ দাগের ভূমি কারও অসুবিধা সৃষ্টি না করেই হাতে কলমে বন্টনযোগ্য কীনা?

(৪) আলোচ্য বন্টনে রায়ের ৫৫ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত হচপচ বিধি প্রয়োগ করতে হবে কীনা?

(৫) কম্যুনিটি অব ইন্টারেষ্ট এবং ইউনিটি অব পজেশন আছে এমন সকল সম্পত্তি চিহ্নিত করতে আদালত বাধ্য কীনা?

এই ২নং এবং ৫নং প্রশ্ন ২টিই আবার রায়ের ৫৮নং অনুচ্ছেদে একত্রিত করে এই ভাবে বিজ্ঞ আদালত পরিবেশন করেন,

সাফিয়া বেগমের অন্যন্য দাগে সম্পত্তি বাদ কেবল আলোচ্য এক দাগের সম্পত্তিই বন্টন করা যাবে কীনা তথা সাফিয়া বেগমের সকল ওয়ারিশদের কম্যুনিটি অব ইন্টারেষ্ট এবং ইউনিটি অব পজেশন আলোচ্য একটি দাগেইর সম্পত্তিতে আছে নাকী সাফিয়া বেগমের সকল দাগের সকল সম্পত্তিতে সাফিয়া বেগমের ওয়ারিশদের কম্যুনিটি অব ইন্টারেষ্ট এবং ইউনিটি অব পজেশন আছে।

এছাড়াও ৬১নং অনুচ্ছেদে প্র্রশ্ন রাখেন, যা আসলে উপরের ২নং প্রশ্নের পূর্ব-বিস্তার (প্রি-এক্সটেনশন), যা ছিলো,

(৬) সাফিয়া বেগমের ছেলেরা মামলার আলোচ্য ১টি দাগের সকল ভূমি হস্তান্তর করতে পারে কীনা। এই ৬নং প্রশ্নে আদালত শর্তাধীনে ইতিবাচক জবাব দেন। বিজ্ঞ আদালত বলেন, যে ছেলেরা ১দাগে সব সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে তবে শর্ত রয়যে, দেখাতে হবে মেয়েরা মোট সম্পত্তি তাদের মোট প্রাপ্য মোট অন্যান্য দাগে বুঝে পেয়েছে কিনা । বিজ্ঞ আদালত এই বিষয়ে তথা ১দাগে কিছু অংশীদারের বিক্রি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই অন্যান্য প্রাপকদের প্রাপ্য বিবেচনায় নিবেন।

এর আগে বিজ্ঞ আদালত রায়ের ৫৭ নং অনুচ্ছেদে বলেন, যেহেতু পক্ষগণ কেউ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন বলে জয়েন্ট টিনেন্ট সংক্রান্ত বিধানাবলী এ মোকাদ্দমায় প্রযোজ্য নয়।

যেহেতু উভয় পক্ষই সাফিয়া বিবির ওয়ারিশ নন, তাই কো-ওউনার সংক্রান্ত বিধানাবলী এ মোকাদ্দমায় প্রযোজ্য নয়।

বিজ্ঞ আদালত বলেন ১নং বিবাদী সাফিয়া বেগমের ওয়ারিশ হতে খরিদ সুত্রে দাবী করেন । অন্য দিকে বাদীগণ সাফিয়া বেগমের অন্য কয়েক ওয়ারিশ। সাফিয়া বেগমের একই টিনেন্সিভুক্ত সম্পত্তি দাবী করায় বাদী এবং ১নং বিবাদী পরস্পর কো -টিনেন্ট বা টিনেন্ট ইন কম মর্মে বিজ্ঞ আদালত ঘোষণা করেন। অর্থাৎ উপরের ১নং প্রশ্নের উত্তর হলো, বাদী ও ১নং বিবাদী পরস্পর কো টিনেন্ট।

এরপর বিজ্ঞ আদালত ৩নং প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেন এ সম্পত্তি বন্টন যোগ্য।

বিস্তারিত আলোচনা শেষে রায়ের ৭০ নং অনুচ্ছেদে ৫নং প্রশ্নের আলোয় বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে সাফিয়া বেগমের সকল ওয়ারিশ তথা ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের সাফিয়া বেগমের সকল রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে কম্যুনিটি অব ইন্টারেষ্ট এবং ইউনিটি অব পজেশন। যেহেতু ভিন্ন রকম কিছু প্রমান হয়নি, তাই মামলার আলোচ্য দাগে সাফিয়া বেগমের কণ্যাদের কোনো অংশ নাই দাবীটি অগ্রাহ্য করা হয়।

রায়ের ৭২নং অনুচ্ছেদে বিজ্ঞ আদালত লিখেন, মামলার ভূমিতে কার স্বত্ত্ব আছে তা নির্ণয়ে মৃত্যুকালে সাফিয়া বেগমের রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি বিবচেনায় আনতে হবে। তার মানে বিজ্ঞআদালতের নিজের উত্থাপিত ২নং প্রশ্নে বিজ্ঞ আদালত উত্তর দেন যে, কেবল এক দাগের ভূমি নয়, সাফিয়া বেগমের সকল ভূমি বিবেচনায় নিতে হবে। একই সাথে ৫নং প্রশ্নেও সিদ্বান্ত হয়ে যায় যে কম্যুনিটি অব ইন্টারেষ্ট এবং ইউনিটি অব পজেশন আছে এমন সকল সম্পত্তি চিহ্নিত করতে হবে।

রায়ের ৫৯ নং হতে ৭০ নং অনুচ্ছেদ সমূহে বিবরণ দিয়ে ৭১ নং অধ্যায়েন বিজ্ঞ আদালত উপসংহার টানেন যে আলোচ্য ভূমিতে সাফিয়া বেগমের ওয়ারিশদের এবং ১নং বিবাদীর কারোও স্বত্বই প্রমান হয়নি। তার প্রেক্ষিতে ৭২ অনুচ্ছেদের দেখান যে ৫৫নংঅধ্যায়ের ৬নং দফায় প্রদত্ত হচপচ বিধান প্রয়োগের শর্তাবলী এ মামলায় বিদ্যমান আছে।

আমরা যদি আবার বিচার্য্য বিষয় ৩(এ), ৩ (বি) ও ৩(সি) তে ফিরে যাই তবে আমার সাফিয়া বেগমের সম্পত্তি বাটতে নিচের উত্তরগুলো উপরের ৬ প্রশ্নের উত্তর হতে অনুধাবন করি। যথা:-

(এ) সাফিয়া বেগমের সম্পত্তি বন্টনের মামলায় বাদীকে স্ব্ত্ব চাইতেই হবে।

(বি) সাফিয়া বেগমের সম্পত্তি বন্টনের মোকাদ্দমার আরজীর তপসিলে সাফিয়া বেগমের সকল সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কীনা?

(সি) আলোচ্য মামরায় পক্ষগণ পরস্পর সহ-প্রজা বা কো-টিনেন্ট। সে আলোকে এবং যেহেতু পক্ষগণের স্বত্ব সুস্পষ্ট নয় তাই বন্টনের পূর্বে সাফিয়া বেগমের সকল সম্পত্তিতে হচপচ সংক্রান্ত বিধান প্রয়োগ করতে হবে।

৪ নং বিচার্য্য বিষয় এ ঘটনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

কোন কোন নীতির ভিত্তিতে একটি (দেওয়ানী) মোকাদ্দমা কে “রিমান্ডে প্রেরণ” করা হয়?

রায়ের ৭২নং অনুচ্ছেদে সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু সাফিয়া বেগমের রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি বিজ্ঞ বিচারিক আদালত কিংবা আপিল আদালতের সামনে আনা উচিৎ ছিলো। ক্তিু আনা হয়নি।সে প্রেক্ষিত টেনে মামলার ঘটনাবলীর আলোকে ৪নং বিচার্য্য বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নেন, বিজ্ঞ আদালত ৭৪নং প্যারায় মামলা রিমান্ডে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার সাথে বিজ্ঞ আদালত যোগ করেন, যেহেতু মামলাটি ২০ বছরের পুরোনো, তাই কার্যকর সিদ্ধান্ত হবে মামলাটি আপিল আদালতে রিমান্ডে ফেরৎ পাঠনো সাথে কিছু সুস্পষ্ট নির্দেশনা যোগ করে দিয়ে। সেকল নির্দেশনা বিজ্ঞ আদালত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের ৭৮ নং প্যারার আলোচনায় যুক্ত করেন।

৫ নং বিচার্য্য বিষয় এ ঘটনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

“বিরুদ্ধ দখল” এর সংশ্লিষ্ট আইনগুলো কি কি?

মামলার ঘটনাবলীর আলোকে ৫নং বিচার্য্য বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত রায়ের ৭৭নং অনুচ্ছেদে সিদ্ধান্ত নেন, এই মামলায় ১নং বিবাদীকে “বিরুদ্ধ দখল” এর প্রতিকার দেয়া যাবে না। এই নেতিাচক সিদ্ধান্ত গঠনে বিজ্ঞ আদালত ৬টি যুক্তির অবতারণা করেন, যথা:-

(১) ১নং বিবাদী তার জবাবের কোথাও “বিরুদ্ধ দখল” দাবী করে নাই।

(২) ১নং বিবাদী “বিরুদ্ধ দখল” জনিত স্বত্ব ঘোষণার বিকল্প প্রার্থনা করে নাই।

(৩) বিচার্য বিষয় গঠনকালে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে “বিরুদ্ধ দখলঃ জনিত কোনো বিচার্য্য বিষয় গঠনের প্রার্থনা ১নং বিবাদী করে নাই।

(৪) স্বাক্ষ্য প্রদান কালে ১নং বিবাদী এমন কোনো স্বাক্ষ্য প্রদান করে নাই যা তার বিরুদ্ধ দখলের সপক্ষে যায়।

(৫) ওয়ারিশগণ কৃত্তিমভাবে দখল বজায় রাখে, এটা প্রতিষ্ঠিত আইনগত নীতি।

(৬) বন্টনের মামলায় “বিরুদ্ধ দখল” দাবীকারী পক্ষকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে হবে যে, যে সে প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণ রুপে বেদখল করেছে। কিন্তু ১নং বিবাদীর জবাবে এমন কোনো কথা লেখা নাই।

এপ্লাইড জুরিসপ্রুডেন্সের মাধ্যমে পুরো বিবাদের আইনগত ও ঘটনাগত যুক্তিগন বিবরণ শেষে বিজ্ঞ আদালত তাঁর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।

বিজ্ঞ আদালতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত:

আলোচ্য রায়ের ৭৮নং অনুচ্ছেদে বিজ্ঞ আদালত তাঁর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত লিপি করেন। এতে বিজ্ঞ আদালত আলোচ্য দেওয়ানী রিভিশনটি মঞ্জুর করতঃ রায় দেন যে,

(১) মূল মামলাটির আপিল, আপিল-আদালতে রিমান্ডে ফেরৎ যাবে।

(২) “বিরুদ্ধ দখল” সংক্রান্ত আপিল আদালতের রায় বাতিল হবে।

(৩) বিচারিক আদালতের রায়ের কার্যকারিতা রিমান্ডে প্রেরিত আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত স্থগিত হবে।

(৪) রিমান্ডে প্রেরিত আপিল নিষ্পত্তিতে আপিল আদালত এই ৭৮নং অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ৮টি নির্দেশনা মোতাবেক বিচার করবেন।

বিজ্ঞ আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, এই দেওয়ানী রিভিশনে ৪টি কারণ দেখান:-

(১) মোকাদ্দমায় আলোচ্য ভূমির উপর সাফিয়া বেগমের কণ্যাদের অংশ আছে মর্মে সে কণ্যাদের মাধ্যমে ২১ বছর পরে সে কণ্যাদের ওয়ারিশদে দাবী নিরঙ্কুশভাবে দূরে থাক এমনকী সম্ভাব্য হিশেবে ও প্রমান হয় নাই।

(২) কেবল আদালতে দাখিলকৃত বহুল আলোচিত দলিল ২টির যথার্থ মূল্যায়নের জন্য রিমান্ডে ফেরৎ পাঠানো টা কার্যকরী বিচারিক কাজ হবে না।

(৩) বাদী এবং ১নং বিবাদী আলোচ্য ভূমিতে টিনেন্ট ইন কমন। তাদের অংশ এবং স্বত্ব নির্ভর করতেছে সাফিয়া বেগমের ৪ ছেলে, ২ মেয়ের অংশ এবং স্বত্ত্বের উপর।

(৪) আপিল আদালতের “বিরুদ্ধ দখল” সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত আইন সম্মত হয় নাই।

 

আপিল আদালতে মামলার আপিল রিমান্ডে ফেরৎ পাঠিয়ে তা বিচারে বিজ্ঞ আদালত আপিল আদালত কে নিচের ৮টি বিষয় ঠিক করে দেন। যথা:-

(১) আপিল আদালত বাদী, নং বিবাদী এবং সাফিয়া বেগমের সকল ওয়ারিশ কে তাদের যা যার কাগজাদী সহ মৃত্যুকালে সাফিয়া বেগমের রেখে যাওয়া যাবতীয় সম্পত্তি সম্পর্কে যার যার বর্ণনা তার তার মতো করে বিজ্ঞ আপিল আদালতে হাজির করার আদেশ দিবেন।

(২) সাফিয়া বেগমের সকল সম্পত্তি র কাগজ পাওয়ার পর আপিল আদালত সকল কাগজাদী নিরীক্ষা করবেন।

(৩) নিরীক্ষার পর প্রয়োজন মনে করলে আপিল আদালত মোকাদ্দমার কার্যকর নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বা প্রাসংগিক অন্য যেকোনো কর্মকর্তা কে তলব করবেন।

(৪) উপরের সকল কাগজাদী নিরীক্ষার পর আপিল আদালত যদি মনে করেন কোনো ব্যাক্তির স্বাক্ষ্য প্রয়োজন তবে সে ব্যাক্তি কে সমন দিয়ে এনে তাকে ”কোর্ট উইটনেস (সি ডব্লিউ)” হিসেবে নিয়ে তার জবানবন্দী গ্রহন করবেন।

(৫) আপিল আদালত বিরুদ্ধ দখল বা অন্য কোনো বিষয়ে নজর দিবেন না। কেবল মাত্র সাফিয়া বেগমের আলোচ্য সম্পত্তিতে সাফিয়া বেগমের কণ্যারা তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির বদলে সাফিয়া বেগমের অন্য সম্পত্তি তে অংশ পেয়েছেন কীনা তা নির্ণয়ে মনোযোগ দিবেন।

(৬) যদি দেখা যায় আলোচ্য ভূমিতে প্রাপ্য অংশের বদলে সাফিয়া বেগমের মেয়েরা এই মামলা বহির্ভুত ভূমিতে বেশী করে অংশ পায় নাই, তবে বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকবে। সে ক্ষেত্রে আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে মূল নথী নিম্ন আদালতে প্রেরণ করবেন। সাথে বিচারিক আদালকে নির্দেশ দিবেন যেনো বিচারিক আদালত চুড়ান্ত ডিক্রি প্রার্থনার দরখাস্তের অপেক্ষা না করে, বিবদমান পক্ষগণকে নোটিশ দিয়ে মোকাদ্দমার বাকী পদক্ষেপগুলো গ্রহন করবেন।

(৭) যদি প্রকাশ পায় যে মামলায় আলোচ্য ভূমিতে সাফিয়া বেগমের কণ্যারা তাদের প্রাপ্য অংশ পরিত্যাগ করে সমপরিমান প্রাপ্য অন্যান্য সম্পত্তি হতে বুঝে পেয়েছিলো, তবে তবে আপিল আদালত একটি নতুন রায় দেবেন যাতে বাদী এবং ১নং বিবাদীর পূর্ববর্ত্তী বায়াগণের যার যার তার তার স্বত্ব ও অংশের বিবরণ সহ বাদী ও ১নংবিবাদীর প্রাপ্য অংশের স্ব্ত ঘোষণা করত অংশ বিবৃত করবেন।

(৮) আপিল আদালত কে খুব স্পষ্ট করে মনে রাখতে হবে যে তিনি কেবল এই মামলার ৪১ শতক সম্পত্তিই সাফিয়া বেগমের ৪ ছেলে, ২ মেয়ের মধ্যে বন্টন করবেন। যেহেতু সাফিয়া বেমর অন্যান্য সম্পত্তির বন্টন চাওয়া হয় নাই, সোফিয়া বেগমেরসেসব সম্পত্তি বন্টন সংক্রান্ত কোনো রায় দেয়া যাবে না। সাফিয়া বেগমের অন্যান্য সম্পত্তি এই মামলায় প্রাসংগিক কেবল এটা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে আলোচ্য ভূমিতে সাফিয়া বেগমের মেয়েরা তাদের অংশ পায় নাকী অন্যান্য সম্পত্তির বিনিময়ে আলোচ্য সম্পত্তিতে তাদের দাবী পরিত্যাগ হয়েছে নির্ণয় করার তাগিদে।

এই নির্দেশনা হতে দেখা যায় শর্তাধীনে নিম্ন আদালতের রায় বিজ্ঞ হাইকোর্ট ডিভিশন বহাল রেখেছেন। সে শর্ত হলো আদৌ আলোচ্য ভূমিতে সাফিয়া বেগমের সকল সম্পত্তির অনুপাতে সাফিয়া বেগমের কণ্যারা কোনো পাওনা থাকে কীনা। পাওনা থাকলে নিম্ন আদালতের রায় বহাল। আর পাওনা না থাকলে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল হবে এবং আপিল আদালত বাকী অংশ আনুপাতিক হারে বাদী এবং ১নং বিবাদীর মধ্যে বন্টন করে নতুন রায় দিবেন।

বিজ্ঞ আদালত এই আলাপে তাঁর অর্জিত পর্যবেক্ষণ প্রসূত অভিজ্ঞতা হতে কিছু সাধারণ প্রস্তাবনা প্রনয়ন করেন।

বিজ্ঞ আদালতের সাধারণ প্রস্তাবনা:-

”বন্টন” বিষয়টিতে বিস্তারিত আলাপ শেষে রায়ের ৭৯ নং অনুচ্ছেদে বিজ্ঞ আদালত ৩টি প্রস্তাব পেশ করেন:-

(১) “ দ্য রুলস কমিটি অব দ্য সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ’, কতৃক সিআরও হালনাগাদ এর জন্য প্রকল্প গ্রহন করতে আইন মন্ত্রণালয় বলা হয়।

(২) সে কমিটি নিম্ন আদালতের জন্য কর্ম নির্দেশনা দিবে যাতে হয় বিভিন্ন রকম দেওয়ানী মামলার রকম ফেরে নিদৃষ্ট নাম ব্যবহার করা হবে নয়তো সকল রকম দেওয়ানী মামলাকে “দেওয়ানী মামল “ ও সকল দেওয়ানী কার্যক্রম কে “দেওয়ানী বিবিধ মামলা” হিসেবে নামকরণ ব্যবহার করা হবে।

(৩) টিনেন্সি, জয়েন্ট টিনেন্সি, কো- ওউনার, কো-টিনেন্ট, হচপচ গয়রহঃ বিষয়াদী নিয়ে যেহেতু ব্যাপক অস্পষ্ট ধারণা বিরজমান, তাই সে ধোঁয়াশা দূরীকরণে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনিষ্টিটিউটের প্রশিক্ষণ সিলেবাসে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এমন বিস্তারিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেনো “বন্টন” এর মামলা কোনো ভীতিকর বিষয় হিসেবে না থাকে।

উপসংহারে বিজ্ঞ আদালতে কিছু দাপ্তরিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

উপসংহার নির্দেশনা:-

উপরের প্রস্তাবনার আলোকে বিজ্ঞ আদালত সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসন কে ৫টি নির্দেশ দেন। যথাঃ-

(১) নিম্ন আদালতের নথী অতি দ্রুত সিলেটের ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করতে,

(২) দেশের প্রত্যেক বিজ্ঞ জেলা জজ সাহেবদের নিকট এই রায়ের অনুলিপি প্রেরণ করতে,

(৩) এই রায়ের একটি অনুলিপি সিভিল রুলস এন্ড অর্ডার্স নেসেসারি এমেন্ডমেন্ট কমিটি অব দ্য সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ এর সামনে উপস্থাপন করতে,

(৪) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনিষ্টিটিউটের এর মহাপরিচালকের নিকট এ রায়ের একটি অনুলিপি প্রেরণ করতে, এবং

(৫) অবহিত করতঃ যথাবিহীত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজনে এই রায়ের একটি অনুলিপি আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করতে।

পরিশেষে বলা যায়, এই রায়ের একটি করে অনুলিপি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কতৃক প্রতিটি আইনজীবী সমিতিতে প্রেরণ করলে আইনজীবী সমাজে এ রায়ের চর্চার গুরুত্ব তৈরী হবে। আমাদের এসময়ে, পাঠ খুব বিরল হয়ে উঠেছে। পাঠে বিরলতা আইনজীবী পেশা কে হুমকীর মুখে ফেলে, যা হতে রক্ষা করার আশায় আইনজীবীগন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে আছেন।

সাব্বির এ মুকীম: অ্যাডভোকেট; জজ কোর্ট, কুমিল্লা। ই-মেইল:  samukim1@gmail.com