অ্যাডভোকেট সাব্বির এ মুকীম

চেক ডিজঅনার অপরাধ সংক্রান্ত আইনে আরব আমিরাতের সাম্প্রতিক সংশোধন

সাব্বির এ মুকীম:
কল্পনার অধিক বিস্তৃত সংযোগ ও গতি যোগাযোগের এ যুগে বিভিন্ন দেশের আইনের খবর রাখার উপযোগ দিনে দিনে বাড়ছে। এ ধরণের তূলনামূলক বিবেচনায় চিন্তার পরিসর বাড়ে, যোগাযোগ প্রযুক্তিও আইন ব্যবস্থার তাত্বিক উন্নয়নে কাজে দেয়। হাল সময়ের জুরিসপ্রুডেন্স কে কমপারেটিভ ল’ ভিত্তিক জুরিসপ্রুডেন্স বললে বেশী বলা হয়ে যায় না।

আইনে বর্তমানে চেক সংক্রান্ত আইনগুলো খুব সম্ভবত সারা দুনিয়ার অতি বিরল কিছু আইনী বিষয়ের একটি যাতে- মাশরেক থেকে মাগরেব, শিমাল থেকে জুনুব- মানষে ঘরে ঘরে এ আইনী বিষয়ের আলাপ তোলা যায়। মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার আইন মানুষের ঘরে ঘরের আলাপ নয়। ফরায়েজ এক এক দেশে এক এক রকম। কাস্টমস, বিল অব ল্যাডিং, এলসি ব্যাংকিং সম্পর্কিত আইন সবদেশে প্রায় এক রকম হলেও এসব ঘরে ঘরের আলাপ নয়। তবে কালো টাকা সাদা, টাকা পাচার, ঋণলোপাট, ক্ষুদ্র ঋণ এবং মাল্টি লেভেল মার্কেটিং এর কল্যানে প্রাসাদ থেকে বস্তি পর্যন্ত চেক বেশ পরিচিত হয়ে গেছে।

বৃটিশ শাসিত দেশগুলোতে আইনে আইনে মিল, ইতিহাসের উপজাত। সেজন্য আরব আমিরাতের চেক ডিজঅনার নিয়ে করা আইন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হবে না। ব্যবসার দেশ খ্যাত আরব আমিরাত ব্যবসাই ”প্রথমে নীতি“ কারণে চেক কে প্রচন্ড গুরুত্ব দেয়। আরব আমিরাতের আইনী গসিপগুলোতে চেক এর মামলা বহুল আলোচিত। ব্যবসাকে আরও সহজবোধ্য করতেই আরব আমিরাত আলোচ্য সংশোধনী এনেছে, যা ২০২২ সালে কার্যকর হবে। মাঝখানের সময়টাতে এই সংশোধণী কে সুপরিচিত করে তোলার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আরব আমিরাত আশা করে এই সংশোধনে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়াবে, যা আরব আমিরাতের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে। তাছাড়া আমাদের বিচারব্যবস্থার মতো, আরব আমিরাতের বিচার ব্যবস্থাতেও চেক ডিজঅনারের মামলা ব্যাপক বিষফোঁড়া। তাই মামলা জট কমাতে এ সংশোধনী উপকারে আসবে বলে তারা আশা করে।

আরব আমিরাতে কমার্শিয়াল ট্রান্সেকশন আইন ১৯৯৩ এ চেক ডিজঅনার কে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চেক ডিজঅনারের শাস্তি দেয়া হয় আরব আমিরাত পেনাল কোড ১৯৮৭ এর ৪০১, ৪০২ ও ৪০৩ ধারাগুলোতে। সাজা হিসেবে জেল জরিমানা উভয় শাস্তিকে রাখা হয়েছে। অভিযুক্তের সরল বিশ্বাস ছিলো কি ছিলো না কে চেক ডিজঅনার অপরাধ হওয়ার জন্য সবচে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান করা আছে।

গত ২০২০ সালের ১৪নং ফেডারেল ল ডিক্রি দিয়ে চেক ডিজঅনারের আইনে আলোচ্য সংশোধন আনা হয়। সংশোধনীতে তে যা বলা হয়:-

(১) আদালত চেকদাতা কে চেকের টাকা শোধ করতে বলবে, না করলে ধরা হবে দাতা চেকটি সরল বিশ্বাসে দেয় নাই। আমাদের দেশের লিগ্যাল নোটিশ প্রক্রিয়ার সাথে কিছুটা মিলে।

(২) যদি চেকদাতা নিচের যেকোনো একটা কাজ করে বসে, ধরা হবে দাতা চেকটি সরল বিশ্বাসে দেয় নাই, যথা:-

(ক) চেক দিয়ে এরপর ব্যাংক একাউন্ট থেকে চেকদাতা সব টাকা তুলে ফেলে।

(খ) চেক দিয়ে এরপর ব্যাংক একাউন্ট থেকে ক্লোজ করে ফেলে।

(গ) ব্যাংক একাউন্ট ডরমেন্ট জেনেও চেকদাতা চেক প্রদান করে।

(৩) যদি চেকদাতা চেক দেওয়ার সময়ই এমনভাবে চেকটি লিখে দেয়, যে চেক এর লেখা, স্বাক্ষর গয়রহ জনিত কারনে চেক ডিজঅনার হয়, তবে সেটাও খারাপ বিশ্বাসে করা কাজ হবে।

(৪) চেক এ লেখা টাকার চেয়ে চেক দাতার একাউন্টে কম টাকা থাকলে চেক গ্রহীতা চাইলে তাকে চেক এর আংশিক টাকা চেক দাতার একাউন্ট থেকে পরিশোধ এ ব্যাংকগুলো বাধ্য। ব্যাংক এই আংশিক পরিশোধ করতে অস্বীকার করলে তা ব্যাংকের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

(৫) ব্যাংক হতে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত সনদপত্র পেলে সেটা ব্যবহার করে আরব আমিরাতের দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯৯২ এর আওতায় সরাসরি অর্থজারি মামলা করা যাবে।

(৬) চেক ডিজঅনার অপরাধ প্রমান হলে, আসামীর কারাদন্ড না দিয়ে, অতিরিক্ত জরিমানার সাথে সাথে তাদের:-

(ক) চেক বই বাজেয়াপ্ত করে নতুন চেকবই নেয়ার সুযোগ ৫বছরের জন্য বন্ধ করা যাবে

(খ) ৬ মাসের‌ জন্য তার সব রকম ব্যবসা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যাবে।

(গ) একাধিক চেক ডিজঅনার অপরাধ করলে অপরাধীর সব ধরণের ব্যবসা অনুমতি বাতিল করে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা যাবে।

লেখক : আইনজীবী, কুমিল্লা জজ কোর্ট।