হত্যাকাণ্ড (প্রতীকী ছবি)

দুই সন্তানসহ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা; অবশেষে গ্রেপ্তার

সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই সন্তানসহ আলিমাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় স্বামী হিফজুর রহমানকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

১৯ জুন (শনিবার) দুপুর দেড়টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০ জুন (রোববার) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাইবে পুলিশ।

দুপুরে সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের স্ত্রী নিহত আলিমা বেগম (৩৫) পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। ঘাতকের বটির কোপে তার গর্ভে থাকা পাঁচ মাসের সন্তানও মারা গেছে। সে হিসেবে এ ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ভ্রূণহত্যার অভিযোগও আনব।’

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের সব তদন্তে প্রমাণ করে ঘটনার রাতে বাইরে থেকে কেউ ঘরে প্রবেশ করেনি। আলিমার স্বামী হিফজুরের রহস্যজনক আচরণ ও ওইদিন রাতে তিনজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার কল রেকর্ড পর্যালোচনা করে এই ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত বলে আমরা সন্দেহ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদকালে হিফজুর নিজেকে মানসিক রোগী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে। আমরা ঘটনার রাতে কী ঘটেছিল ঘরের মধ্যে জানতে চাইলে সে পুলিশকে জানিয়েছে, ওই রাতে তার ঘরে সে প্রচুর মাছ কেটেছে বটি দিয়ে। এ সময় তার বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের রক্তাক্ত শরীর পড়েছিল বলেও স্বীকার করেছে। তবে কে তাদের গলা কেটেছে জানতে চাইলে কোনো কথা বলছে না। রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সবকিছু খোলাসা হবে বলে আশা করছি।’

এসপি ফরিদ বলেন, ‘যে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই বটি তাদের ঘরেরই। এই বটির বাইরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া আমরা ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথম যে দৃশ্যটি দেখেছি সেটি হলো হিফজুর তার সন্তান ও স্ত্রীর মরদেহের ওপর সজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিল। তার পায়ে মাটি ছিল। অন্যদের সবার পা পরিষ্কার ছিল। এ থেকে বুঝা যায় ঘটনার আগে ও পরে মাটির ঘরটিতে সে হাঁটাচলা করেছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, ‘নিহত আলিমা বেগমের গলায় ব্যথা থাকায় একাধিকবার হিফজুর তাকে আতা হুজুর নামে একজন কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। কোনো চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে স্বামী হিফজুর সবসময় তাকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আতা হুজুরের কাছে নিয়ে যেত। প্রতিবারই ওই হুজুরকে কিছু টাকা পয়সাও দেয়া লাগত। এজন্য স্ত্রীর ওপর কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিল সে। এছাড়া তার শ্যালিকার বিয়েতে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও আলিমার সঙ্গে ঝগড়া হয় তার।’

উল্লেখ্য, ১৬ জুন (বুধবার) সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের একই পরিবারের তিনজনের গলা কাটা মরদেহ ও গৃহকর্তা দিনমজুর হিফজুর রহমানকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হলেন- গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩৫), আট বছরের ছেলে মিজানুর রহমান ও তিন বছরের শিশুকন্যা তানিশা বেগম।

হত্যার ঘটনায় ১৬ জুন রাতে নিহত নারীর বাবা আয়ুব আলী বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।