হাইকোর্ট ও খালেদা জিয়া
হাইকোর্ট ও খালেদা জিয়া

গ্যাটকো দুর্নীতি : খালেদার সম্পৃক্ততা নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আলোচিত গ্যাটকো দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততা পাওয়ার বিষয়ে মামলায় এক পর্যবেক্ষণ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

প্রকাশিত রায় হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মামলার আসামিদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেক্ষেত্রে আসামিদের জামিন বিবেচনার বিষয়ে বিচারিক আদালত পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত রয়েছেন। পাশাপাশি বিচারিক আদালতে থাকা এ মামলার কার্যক্রম আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (১৪ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের বিচারকদের স্বাক্ষরের পর ৯৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

রায়ে আদালত মামলার এজাহারের বর্ণনা তুলে ধরে জানিয়েছেন, আরাফাত রহমান কোকো তার মা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার থেকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে গ্যাটকোর কাছে ঠিকাদারির অবৈধ অর্থের অর্ধেক দাবি করেন। পরবর্তীতে মায়ের সম্মতি আদায় করে গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দেয় আরাফাত রহমান। অনভিজ্ঞ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়।

এছাড়াও আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে চলমান গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনসহ রায় দেন হাইকোর্ট। গ্যাটকো মামলা বাতিল চেয়ে দুই আসামির আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ মামলার দুই আসামি- গ্যাটকোর সাবেক পরিচালক সৈয়দ গালিব আহমেদ ও সৈয়দ তানভীর আহমেদকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে মামলার ওপর দেয়া স্থগিতাদেশ তুলে নেন আদালত। এর প্রায় আড়াই বছর পর মামলার পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।

আদালতে মামলা বাতিল চাওয়া আসামি সৈয়দ গালিব আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং আসামি সৈয়দ তানভীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আহসানুল করিম। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে গ্লোবাল এগ্রোট্রেড (প্রা.) কোম্পানি লিমিটেডকে বেআইনি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজটি পাইয়ে দিয়ে নিজে এবং অন্যদের আর্থিক সুবিধা প্রদান করায় খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সরকারের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অপরাধে দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়া, তার ছেলে (মৃত) আরাফাত রহমান কোকো, তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেন ও তার ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন, সৈয়দ গালিব আহমেদ, সৈয়দ তানভীর আহমেদসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।

এরপর ২০০৮ সালের ১৩ মে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদা তদন্ত করে ২৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার আসামি গ্যাটকোর সাবেক পরিচালক সৈয়দ গালিব আহমেদ ও সৈয়দ তানভীর আহমেদ মামলাটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দুই আসামিকে জামিন প্রদান করেন আদালত। এর ফলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ মামলাটির কার্যক্রম দীর্ঘ ১০ বৎসর ধরে বন্ধ থাকে।

দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর থেকে এই মামলা বাতিল চেয়ে করা রুলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৫ নভেম্বর আবেদনটি খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।

(জাগো নিউজ)