ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক তাবাসসুম ইসলামের বিরুদ্ধে আরও এক নালিশ গেছে। প্রধান বিচারপতির দপ্তরে নালিশকারী এবার এক বিচারপ্রার্থী।
অপহরণ ও ধর্ষণের মামলায় ‘খামখেয়ালি’ আদেশের বিষয়ে নালিশ করেন মর্মে জানিয়েছেন ওই বিচারপ্রার্থী। ভিকটিম ১৩ বছর চার মাস আট দিনের নাবালিকাকে কথিত শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় দেওয়ার নাবালিকার মা ওই নারিশ করেন।
ঢাকার জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা নাবালিকার মা নালিশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। গত ৯ ডিসেম্বর তিনি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে অভিযোগটি পাঠিয়েছেন।
অভিযোগের অনুলিপি আইনমন্ত্রী, আইন সচিব ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছেও রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিচারকের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে এবার বিচারপ্রার্থীর নালিশ
অভিযোগে যা বলা হয়
অভিযোগ সম্পর্কে ওই নারী বলেন, ‘আমার মেয়ে (১৩) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন কসমোপলিটন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন চন্দ্রপাড়ার বাসিন্দা ইব্রাহিম চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী পারভেজের সঙ্গে একটি সম্পর্ক হয়। আসামির পরিবার থেকে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। একারণে গত ১২ জুন মেয়েকে আসামি পারভেজ ও বাবাসহ তিনজন দুই ভরি স্বর্ণ ও নগদ চার লাখ ৫৬ হাজার টাকাসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গত ১৩ জুন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ও ৯(১) ধারায় মামলা করি। মামলা নং- ৪৫(৬)২০২১। মামলায় পারভজ ছাড়াও তার বাবা ও অপরজনকে আসামি করি।’
আবেদনে তিনি জানান, মামলার দিনই আসামি পারভেজ গ্রেপ্তার হয়। এরপর ২৬ আগস্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ভিকটিম উদ্ধার হওয়ার আগেই আসামি জামিন লাভ করেন। গত ৩০ আগস্ট মেয়ে উদ্ধার হয় এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জবানবন্দি শেষে তার মেয়েকে সেভকাস্টডিতে পাঠান। পরবর্তী সময়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর মেয়েকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জিম্মায় দেন। মায়ের জিম্মায় আসার পর গত ২৩ অক্টোবর আসামি পারভেজ ভিকটিমকে স্কুলে যাওয়ার পথে নিয়ে যায়। ওইদিনই থানায় একটি জিডি করেন। এরপর জামিন বাতিলের আবেদন করা হলে গত ২৬ অক্টোবর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামি পারভেজের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। পরবর্তী সময়ে মামলাটিতে আসামি পারভেজের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা তার মেয়ের বয়স জন্ম সনদ ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৩ বছর চার মাস আট দিন মর্মে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর মামলাটি ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারের জন্য আসে। সেখানে গত ৮ নভেম্বর ধার্য তারিখে অভিযোগকারীর মেয়েকে আসামি পারভেজের বাবা ও মা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে তাদের জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনে মেয়ে সাবালিকা, বয়স ১৮ বছর এবং ভিকটিম আসামি পারভেজের বিবাহিত স্ত্রী এবং নিজেরা ভিকটিমের শ্বশুড়-শাশুড়ি মর্মে দাবি করেন। অন্যদিকে ভিকটিমের মা অথাৎ অভিযোগকারী মেয়েকে তার জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাবাসসুম ইসলাম কথিত শ্বশুড়-শাশুড়ির জিম্মায় ভিকটিমকে দেন এবং তাকে বকাঝকাও করেন। গত ২১ নভেম্বর আসামি পারভেজকে জামিন দেন।
আইনজীবীদের বক্তব্য
এ সম্পর্কে বাদিনীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিয়াজ মোর্শেদ রোমান জানান, আইনে ১৮ বছরের কোনো মেয়ের বিয়ে স্বীকার করে না এবং ১৬ বছরের কম বয়সী নাবালিকার মতামতের কোনো মূল্য নেই। তাই ১৩ বছর চার মাস আট দিন বয়সী নাবালিকাকে শ্বশুরের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ নিঃসন্দেহে বেআইনি। তাই প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগটি করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ ফেরকান মিঞা আদেশ বেআইনি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরাও আদালতকে বলেছিলাম ভিকটিম নাবালিকা তাকে মায়ের জিম্মায় বা সেভকস্টডিতে পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু আইন যে বিয়ে স্বীকার করে না বিচারক মহোদায় সেই কথিত শ্বশুর-শাশুড়ির জিম্মায় ভিকটিমকে দিয়েছেন।
একই বিচারকের বিরুদ্ধে এর আগে গত ৩০ নভেম্বর একজন আইনজীবী একটি মামলায় ন্যায়বিচার না পাওয়া, বেআইনি কার্যক্রম ও বিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে অশোভন ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে অভিযোগ করেছেন।
সূত্র: ঢাকা টাইমস