চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত
চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত

ছয় শর্তে কারাগারের বদলে নিজ বাড়িতেই সাজা খাটবেন স্বামী-স্ত্রী

সংশোধনের সুযোগ দিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া আসামি স্বামী-স্ত্রীকে প্রবেশন সাজা দিয়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ফলে মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি ছয়টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কারাগারের বদলে নিজ বাড়িতেই সাজা খাটবেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রবেশনের সুযোগপ্রাপ্ত দুই আসামিকে প্রবেশন কর্মকর্তার (সমাজসেবা কর্মকর্তা) নিকট উপস্থাপন করা হবে। এর আগে, গত সোমবার (২৪ জানুয়ারি) চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব এ আদেশ দেন।

মাদক মামলায় যুগান্তাকারী রায়ে অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে একজনকে এক বছর কারাদণ্ড এবং বাকি চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ডাদেশ ছাড়াও নগদ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিন করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে পাঁচ আসামির মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই আসামি (স্বামী-স্ত্রীকে) কৃতকর্মের দায় থেকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন বিচারক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা নাথপাড়ার বাসিন্দা হিরু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীকে আদালত ছয়টি শর্ত দেন। রায়ে শর্তগুলো প্রতিপালন করার জন্য কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অপর তিন আসামি হলেন এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত বাদল দাশের ছেলে কুশা দাশ এবং ছয় মাস করে সাজাপ্রাপ্ত সৈয়দ রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ এবং সুকুমার নাথের ছেলে সুমন চন্দ্র নাথ। তার মধ্যে সুমন পলাতক রয়েছে। অপর দুইজনকে আদালত জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

প্রবেশনপ্রাপ্ত দুই আসামির জন্য শর্তগুলো নিম্নরূপ

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে আগামী এক বছর পর্যন্ত সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার হাসপাতালের ‘প্রাত্যহিক সেবামূলক কর্ম’ করবেন।
  • প্রতি শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পৌর শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়ার হরিমন্দিরে পুরোহিত বা সেবায়েত অথবা মন্দির কমিটির সভাপতি/সম্পাদক কর্তৃক নির্ধারিত মন্দির পরিচর্যা, ভক্তদের প্রসাদ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।
  • কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ আর করবেন না।
  • শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন।
  • তারা কোর্ট এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন।
  • কোনোরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না।

আদেশে বলা হয়, প্রবেশনার আসামিরা প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা তাদের আচরণ সন্তোষজনক না হলে তাদের প্রবেশন বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করবেন। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা উপযুক্ত জিম্মাদারের মাধ্যমে জামিনে থাকবেন এবং জামিননামা দাখিল করবেন, প্রবেশনের সব শর্ত পালন করবেন মর্মে বন্ড দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এই আদেশের সব শর্ত প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও তদারকি করে তিন মাস পরপর আদালতকে অবহিত করবেন।

প্রসঙ্গত, বিচারক রাজীব কুমার দেব ইতোমধ্যে আরো বেশ কয়েকটি মামলায় আলোচিত এবং যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এর আগে, মাদক বিরোধী প্রচারণার শর্তে দণ্ডিত ৩ আসামিকে সংশোধনের সুযোগ; সপরিবারে বাদিকে ইফতার ও ঈদের দিন খাওয়ানোর শর্তে আসামির প্রবেশন; কারাদণ্ডের বদলে পড়তে হবে বই, খাওয়াতে হবে এতিমদের; এরকম একাধিক রায় দিয়ে বিচার সংশ্লিষ্টসহ বিচারপ্রার্থী ও সর্বসাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব।