চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কুষ্টিয়া
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কুষ্টিয়া

আদালতে বিচারকের ‘হাড় ভেঙে’ দেওয়ার হুমকি বার সভাপতির

একটি মামলার জামিন শুনানিকালে প্রকাশ্য আদালতে বিচারকের হাড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম দুলালের বিরুদ্ধে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী জানান, বুধবার (২ মার্চ) কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আদালতপাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আইনজীবী সমিতির সভাপতির এমন হুমকি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। ঘটনার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন আদালতের বিচারকরা।

ঘটনাটি স্পর্শকাতর মনে করে ভয়ে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি নূরুল ইসলাম দুলাল বাকবিতণ্ডার কথা স্বীকার করলেও বিচারককে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদলিজনিত কারণে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমান একসঙ্গে কুষ্টিয়া সদর এবং দৌলতপুর আমলি আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে বসে তিনি একই সঙ্গে দুই আদালতের (সদর এবং দৌলতপুর) দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বুধবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমান প্রথমে সদরের মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরপর দুপুরের দিকে দৌলতপুর আমলি আদালতের মামলার কার্যক্রম।

এসময় একটি মামলার জামিন শুনানি শুরু হয়। প্রথমে জুনিয়ার একজন আইনজীবী মামলার শুনানি করছিলেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম দুলাল।

এক পর্যায়ে তিনিও জামিন শুনানিতে অংশ নিয়ে আদালতকে বলেন, এ মামলায় আসামিকে সাতদিন পরই জামিন দেওয়া যায়। কিন্তু একমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে আসামি জেল হাজতে রয়েছেন। জামিন পাচ্ছের না।

এপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমার কাছে এ মামলার প্রথম শুনানি হচ্ছে। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করেন।

এতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি দুলাল কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে আমি ভালো মতো চিনি। আপনার হাড় আমি ভেঙে দিবো।

এজলাসে দাঁড়িয়ে আইনজীবী সভাপতির এমন হুমকি শুনে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা সবাই হতবিহবল হয়ে পড়েন। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যেহেতু আমার হাড় ভেঙে দিতে চেয়েছেন তাই এ অবস্থায় আমার আর আদালতে থাকা ঠিক হবে না। এ কথা বলেই তিনি এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান।

ম্যাজিস্ট্রেট খাস কামরায় চলে যাওয়ার পর সভাপতি নূরুল ইসলাম দুলালও এজলাস ত্যাগ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা খাস কামরায় অবস্থানের পর আবারও দুপুর ২টার দিকে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজলাসে বসেন। তবে আর কোন শুনানি বা কার্যক্রম পরিচালনা না করেই এ দিনের সব মামলার পরবর্তী দিন বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) নির্ধারণ করে আবার খাস কামরা ত্যাগ করেন।

তবে এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের জিআরও শাহিন এবং কোর্ট সিএসআই আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল আদালতের নাজির নূরুল ইসলামের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সময় আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি পরে জেনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।

এদিকে মোবাইল ফোনে এবং আদালতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও অপারগতা প্রকাশ করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তারিক এজাজের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার সহকারী গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা মানা।

হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি নুরুল ইসলাম দুলাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, এজলাসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অতি দুর্বল মামলায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর অনুরোধ জানিয়ে কিছু পরামর্শ দিলে তিনি আমাদের ওপর প্রচণ্ড রেগে যান এবং অশালীন কথাবার্তা বলেন। পরে এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।

বিষয়টি নিয়ে পরে জেলা জজের উপস্থিতিতে আইনজীবী ও বিচারকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে বলেও জানান সমিতির সভাপতি।

উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম দুলাল। দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন একই প্যানেলের দেওয়ান মাসুদ করিম মিঠু। নুরুল ইসলাম দুলাল এর আগে বিভিন্ন সময় ছয় দফা কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একাধিকবার পিপির দায়িত্বও পালন করেন।