কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসা দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে রোগী রেখে ডাক্তারের পলায়ন, আদালতে মামলা
আদালত (প্রতীকী ছবি)

জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’, আদালতের পর্যবেক্ষণ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। এ সময় আদালত বলেছেন, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা পুণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছেন।

জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কালিয়ারকাপন গ্রামের ফয়জুল হাসান।

পাশাপাশি মামলায় ফয়জুলের বন্ধু সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উমেদনগর গ্রামের মো. সোহাগ মিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বাকি চার আসামি ফয়জুলের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফয়জুল হক ও ভাই এনামুল হাসানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়ে যেসব লেখক মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার পক্ষে থাকেন, তাঁদের ভয় দেখানোই ছিল আসামি ফয়জুলের মূল উদ্দেশ্য। মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। শিক্ষকতার বাইরে তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক ও জনপ্রিয় লেখক। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে ও শিশুদের উপযোগী বই লিখে জাতির মননশীলতা গঠনে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার পক্ষে তাঁর সরব অবস্থান সর্বজনবিদিত।

তাঁর ওপর হামলার ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ উল্লেখ করে আদালত বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা পুণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছেন।

স্বাধীন মত প্রকাশ ও পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা তথা সভ্যতার অগ্রগতির প্রধান নির্ণায়ক। এগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবেই পেছনের দিকে হাঁটবে। স্বাধীন ও গঠনমূলক ভিন্নমত চর্চার মাধ্যমেই সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন আদালত।

আসামি ফয়জুল হাসান সম্পর্কে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এই আসামি দেশ বা কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য—এমনটা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু তিনি বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট থেকে জিহাদি প্রবন্ধ ও বই ডাউনলোড করে পড়ে, উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন।

আদালত বলেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কৌশলে ভার্চ্যুয়াল জগতে উগ্রবাদী মতবাদ ছড়িয়ে সহজে বেহেশতে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ প্রাণে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করছে। উচ্চশিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণেরা সহজেই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। আদালত উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়, এমন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের প্রচারিত তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেন।