ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর কলম ভেঙ্গে ফেলার বিধি-বাধ্যকতা নেই

ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর কলম ভেঙে ফেলার বিধি-বাধ্যকতা নেই

কথিত আছে, প্রকাশ্য আদালতে বিচারক ফাঁসির রায় লিখেই কলমের নিবটা ভেঙে ফেলেন। তবে কোনো আইনে এরকম করার কোনো বিধি-বাধ্যকতা নেই। সম্প্রতি একটি অনলাইন গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ এমন তথ্যই জানিয়েছেন।

ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর বিচারক কলম ভেঙ্গে ফেলে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই বিচারক জানান, ফাঁসির আদেশ দেওয়ার পর কলম ভেঙে ফেলার কোন নিয়ম বা আইন নেই। এটি কেবল ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কেউ যদি মনে করেন তিনি আর এ কলম ব্যবহার করতে চান না সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আদেশ দেওয়ার পর এমনটি করতে হবে আইনে তেমন বিধি-বাধ্যকতা নেই। এটা কেবল ওই ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। 

তবে এই নিব ভেঙে ফেলার পেছনে নানা রকম দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই এটি একটি রীতি হিসেবেই চলে এসেছে। এই রীতির সমর্থনে যা জানা যায়,

প্রথমত, মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে একজনের জীবন কালের ইতি টেনে দেওয়া হয় এবং বিচারক চান না, দ্বিতীয়বার তাঁর আদেশ দ্বারা আরেকটি জীবনের ইতি হোক।

দ্বিতীয়ত, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর সেই আদেশকে পুনর্বিচার করার সুযোগ থাকে না। যদি বিচারক, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর শাস্তি সম্পর্কে তাঁর মানসিকতা পরিবর্তন করেন, তথাপি মৃত্যুদণ্ডের আদেশকে আর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সেই বার্তার প্রতীকী হিসেবেই, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেওয়ার পর, আদেশনামা লেখার কলমটিকে আর ব্যবহারযোগ্য রাখা হয় না।

তৃতীয়ত, বিচারক ‘অপরাধ বোধ’ থেকে পেনের নিব ভেঙে ফেলেন। কারণ, প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা শুধু ঈশ্বরেরই আছে বলে মনে করা হয়। তাই বিচারক পেনের নিব ভাঙার মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে তিনি শুধু তাঁর পেশাদারি দায়বদ্ধতাটুকুই সারলেন।