গণকমিশনের শ্বেতপত্রে ১১৬ 'ধর্ম ব্যবসায়ী', তদন্ত চেয়ে দুদকে তালিকা হস্তান্তর

গণকমিশনের শ্বেতপত্রে ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’, তদন্ত চেয়ে দুদকে তালিকা হস্তান্তর

শতাধিক ‘ধর্ম ব্যবসায়ীর’ সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে তালিকা জমা দিয়েছে নাগরিকদের প্ল্যাটফর্ম মৌলবাদী ও সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন।

গণকমিশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার (১১ মে) দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর কাছে এই শ্বেতপত্র ও শতাধিক সন্দেহভাজন ধর্ম ব্যবসায়ী ব্যক্তির তালিকা তুলে দেয়।

গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ধর্মীয় উন্মাদনার তদন্তে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ গঠিত হয়। সম্প্রতি তারা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে।

তালিকা জমা দেওয়ার পর দুদক কার্যালয়ের সামনে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ৯ মাস তদন্ত করেছি। কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য নিয়েছি। ধর্মীয় ব্যবসায়ী, হেফাজত, জামায়াত মানি লন্ডারিং করেছে, এ ধরনের তথ্য-প্রমাণও পেয়েছি। যার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকেও শ্বেতপত্রটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওয়াজের নামে ব্যবসা করা অর্ধশতাধিক ব্যক্তির দুর্নীতির খোঁজ শুরু করেছে দুদক। দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, “তিনি এগুলো দেখবেন”।’

গণকমিশনের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক হাজার মাদ্রাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে এই এক শ’ ধর্ম ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়েছে। তাঁরা মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ করেছেন। তাঁদের অর্থনৈতিক জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

তালিকায় যাদের নাম

দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ৭৬০ ও ৭৬১ পৃষ্ঠায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বিস্তারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের কাছে দেওয়া ১১৬ ওয়ায়েজিন (ধর্মীয় বক্তা) হুজুরের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তারা হলেন-

১. মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী
২. মাওলানা সাজিদুর রহমান
৩. মুফতি রেজাউল করিম
৪. মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম
৫. মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী
৬. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বাশার)
৭. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব
৮. মুফতি দিলওয়ার হোসাইন সাইফী
৯. মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী
১০. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভূজপুরী
১১. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী
১২. মাওলানা মুহিব খান
১৩. মুফতি সাঈদ আহমদ কলরব
১৪. মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন
১৫. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী
১৬. মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী
১৭. মাওলানা আরিফ বিল্লাহ
১৮. মাওলানা বজলুর রশিদ
১৯. মুফতি নাজিবুল্লাহ আফসারী
২০. মাওলানা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী
২১. মুফতি নূর হোসেন নুরানী
২২. মুফতি কাজী ইব্রাহিম
২৩. মাওলানা গোলাম রাব্বানী
২৪. মাওলানা মুজাফফর বিন মহসিন
২৫. মাওলানা মোস্তফা মাহবুবুল আলম
২৬. মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবি
২৭. মাওলানা শায়েখ সিফাত হাসান
২৮. মাওলানা মোহাম্মদ রাকিব ইবনে সিরাজ
২৯. মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল
৩০. মাওলানা মতিউর রহমান মাদানী
৩১. মাওলানা মুজিবুর রহমান
৩২. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী
৩৩. মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকী
৩৪. মাওলানা আজিজুল ইসলাম জালালী
৩৫. মাওলানা মেরাজুল হক কাসেমী
৩৬. মুফতি মুহসিনুল করিম
৩৭. মাওলানা আব্দুল বাসেত খান
৩৮. মাওলানা আবদুল খালেক সাহেব শরিয়তপুরী
৩৯. মুফতি মাহমুদ উল্লাহ আতিকী
৪০. মুফতি উসমান গণি মুছাপুরী
৪১. মাওলানা আবু নাঈম মুহাম্মাদ তানভীর
৪২. মুফতি শিহাবুদ্দীন
৪৩. মুফতি মুসতাঈন বিল্লাহ আল-উসওয়ায়ী
৪৪. মাওলানা আশরাফ আলী হরষপুরী
৪৫. মাওলানা জাকারিয়া
৪৬. মুফতি আমজাদ হোসাইন আশরাফী
৪৭. মুফতি আনোয়ার হোসাইন চিশতী
৪৮. মাওলানা আতিকুল্লাহ
৪৯. মাওলানা বশির আহমদ
৫০. মাওলানা সিরাজুল ইসলাম মিরপুরী
৫১. মাওলানা রিজওয়ান রফিকী
৫২. মাওলানা আবরারুল হক হাতেমী
৫৩. মাওলানা রাফি বিন মুনির
৫৪. মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম জাবেরী
৫৫. মাওলানা মোতাসিম বিল্লাহ আতিকী
৫৬. মুফতি শেখ হামিদুর রহমান সাইফী
৫৭. মাওলানা আজহারুল ইসলাম আজমী
৫৮. মাওলানা কামাল উদ্দিন দায়েমী
৫৯. মাওলানা কামাল উদ্দিন কাসেমী
৬০. মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন নুরী
৬১. মাওলানা মাজহারুল ইসলাম মাজহারী
৬২. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদাউস
৬৩. মুফতি এহসানুল হক জিলানী
৬৪. মাওলানা মাহবুবুর রহমান জিহাদি
৬৫. মুফতি আব্দুল হক
৬৬. মুফতি শাহিদুর রহমান মাহমুদাবাদী
৬৭. মাওলানা ইসমাঈল বুখারী
৬৮. মাওলানা জয়নুল আবেদীন হাবিবী
৬৯. মাওলানা ইউসুফ বিন এনাম
৭০. মাওলানা শাববীর আহমদ উসমানী
৭১. মুফতি জাহিদুল ইসলাম যায়েদ
৭২. মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম জামী
৭৩. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
৭৪. মাওলানা ইসমাইল হোসাইন
৭৫. মুফতি আব্দুর রহিম হেলালী
৭৬. মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী
৭৭. মাওলানা মুশাহিদ আহমদ উজিরপুরী
৭৮. মাওলানা কাজিম উদ্দীন (অন্ধ হাফেজ)
৭৯. মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান
৮০. মুফতি হারুনুর রশিদ
৮১. মাওলানা আবুল কাসেম
৮২. মুফতি ওয়ালী উল্লাহ
৮৩. মাওলানা আবু নাঈম মুহাম্মাদ তানভীর
৮৪. মাওলানা জাকারিয়া নাটোর
৮৫. মাওলানা আবুল হাসান (সাদী)
৮৬. মুফতি রুহুল আমিন নুরী
৮৭. মুফতি মামুনুর রশিদ কামালী
৮৮. মাওলানা আবদুল কালাম আজাদ
৮৯. মাওলানা ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী (নওমুসলিম)
৯০. মাওলানা শামসুল হক যশোরী (নওমুসলিম)
৯১. মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ
৯২. মাওলানা মুফতি ওলিউল্লাহ
৯৩. মাওলানা বেলাল হুসাইন ফারুকী
৯৪. মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী
৯৫. মাওলানা আমির হামজা
৯৬. মাওলানা মিজানুর রহমান আযহারী
৯৭. মাওলানা তারেক মনোয়ার
৯৮. মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারী
৯৯. মাওলানা আতাউল্লাহ হাদেমী
১০০. মাওলানা আফম খালিদ হোসেন
১০১. মাওলানা মামুনুল হক
১০২. মুজিবুর রহমান হামিদী
১০৩. মাওলানা মুশতাকুন্নবী
১০৪. মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী
১০৫. মাওলানা কুতুব উদ্দীন নানুপুরী
১০৬. মাওলানা বেলাল উদ্দীন
১০৭. মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী
১০৮. মাওলানা রুহুল আমিন যুক্তিবাদী
১০৯. মাওলানা আবুল কালাম বয়ানী
১১০. মাওলানা রফিকুল্লাহ আফসারী
১১১. মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিন
১১২. মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসাইন সাইফী
১১৩. মাওলানা আলাউদ্দীন জিহাদি
১১৪. মাওলানা আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া
১১৫. জৈনপুরী সিলসিলার মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী
১১৬. মাওলানা মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী।

উসকানিদাতা সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিচার দাবি

সাম্প্রদায়িক হামলা ও উসকানির সঙ্গে সরকারি বেশ কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে মৌলবাদী ও সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন।

এ বিষয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেসব ডিসি, ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তা মৌলবাদী হামলাকারীদের উসকানি দিয়েছেন এবং উৎসাহিত করেছেন, তাঁদের নাম শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জের কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু পুলিশ সদস্যকে এরই মধ্যে সরানো হয়েছে। তবে তাঁদের বিষয়ে এই ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।

প্রতিনিধিদলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও গণকমিশনের সমন্বয়ক কাজী মুকুল, আসিফ মুনির তন্ময়, নাহিদা চৌধুরী, সদস্য শহীদসন্তান আসিফ মুনীর ও নাদিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।