আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাইদুল ইসলামকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত ডিসি অফিসের দরজা, জানালা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা রাখতে বলেছেন।
এক রিট আবেদনের শুনানিতে আজ রোববার (২২ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
শুনানিতে কুষ্টিয়ার ডিসি সাইদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে আপনারা কী ধরনের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। চাকচিক্যময় জীবন-যাপন করেন। কীভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ করে থাকেন। সেটাও জানি। দুঃখজনক হলেও সত্য ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারেন না। সাধারণ মানুষ তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ পান না। আপনাদের অফিসের দরজা জানালা মোটা পর্দায় আবৃত থাকে। যার কারণে মানুষ আপনাদের ছবি পর্যন্ত দেখতে পায় না।
হাইকোর্ট বলেন, আপনাকে সতর্ক করছি। এখন থেকে ডিসি অফিসের দরজা, জানালা খোলা রাখবেন। যেন জনগণ আপনাদের চেহারা দেখতে পায়। আপনার দরজা-জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করবেন না।
হাইকোর্ট বলেন, ডিসি হলো সরকারের হার্ট। আপনাকে জনগণের জন্য সেভাবে কাজ করতে হবে।
আদালত বলেন, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নাই। আপনারা একটা দরখাস্ত পর্যন্ত রিসিভ করেন না। এখন থেকে কোনো ধরনের উন্মাসিকতা দেখাবেন না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো কাজ করলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।
আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, কোথাও চুরি ডাকাতি হচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি দখল হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ না পেলে কি আপনি বসে থাকবেন। বসে থাকার সুযোগ নাই।
পরে আদালত কুষ্টিয়ার ডিসি মো. সাইদুল ইসলামকে আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে আদালত অবমাননার ঘটনায় রুলের শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওইদিন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকরা সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ীকে আদালতে হাজির থাকতে হবে।
আদালতে ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান এবং এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক শুনানি করেন। ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে তথা রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাগিব রউফর চৌধুরী।
এর আগে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করার ঘটনায় ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে তলব করেন হাইকোর্ট।
গত ১১ আগস্ট বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গতকাল রোববার (২১ আগস্ট) ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এসপি মো. খায়রুল আলম, সদর থানার ওসি মো. সাব্বিরুল আলম ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ হাইকোর্টে হাজির হন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার পোড়াদহের আইলচারা বাজারে অবস্থিত মো. শফিকুল ইসলামের ধান, চাল, আটা ও ভুষি উৎপাদনের তিনটি প্রতিষ্ঠান বন্ধক (মর্টগেজ) রেখে ব্র্যাংক থেকে ৩৬ কোটি টাকা, পরের বছর তা বাড়িয়ে ৪২ কোটি ঋণ গ্রহণ করেন।
তারপর থেকে তিনি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠান তিনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় একটা সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন শফিকুল ইসলাম।
এই কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শফিকুল ইসলামকে খেলাপি দেখিয়ে তার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলতে গত ২৪ মার্চ দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং ১৮ এপ্রিল নিলাম আয়োজন করে ১৩৩ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
ওই নিলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিলস এবং ভিআইপি অটো রাইস মিলস লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম। গত ২ আগস্ট নিলাম স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের আদেশ থাকার পরেও গত ৫ আগস্ট ব্র্যাক ব্যাংক নিলাম ক্রয়কারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে রাতে জমি দখল করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।