মিথ্যা মামলায় বাদীর কারাদণ্ড, দিতে হবে ক্ষতিপূরণ
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রাজশাহী

মিথ্যা মামলায় হয়রানি : বাদীর কারাদণ্ড, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

মিথ্যা মামলা দায়ের করায় মামলার বাদীকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর একটি আদালত। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বাদীর প্রতি মামলার চারজন আসামির প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মারুফ আল্লাম এই আদেশ দেন।

দণ্ডিত মোঃ আবুল কাশেম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ধন্দহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে।

চারজন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তারা তার স্ত্রীকে মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন এবং তার শ্লীলতাহানি করেছিলেন। মামলা নম্বর সিআর ৬৬/২০২০ (বাঘা)। এতে আসামি করা হয় একই গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগমসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে।

সাজানো এই মামলা থেকে তাদের খালাস দেন আদালত। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় চারজন আসামির প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে আদালতের আদেশে।

রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী মোঃ নজরুল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বিচার শেষে আদালতের কাছে বাদীর অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক প্রতীয়মান হয়। ফলে আদালত আসামিদের খালাস দিয়ে বাদীকেই ৭ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে চারজন আসামির প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন।

আদালত তার আদেশে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হলেও বাদী কিংবা তার কোনো একজন সাক্ষী আদালতকে শ্লীলতাহানি সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি।

মামলার ভিকটিম বাদীর স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি স্ত্রীকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে আনতে পারেননি। শুধু তাই নয়, বাদীর মানীত দুজন সাক্ষী আদালতে এসে আসামিদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, ঘটনার দিন চারজন আসামির দুজন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না, তারা সেদিন অন্য জেলায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। এই সাক্ষীরা আরও বলেন, ঘটনার দিন বরং আসামিরাই আক্রান্ত হয়েছিলেন।

বাদীর সাক্ষীরা আসামিদের পক্ষাবলম্বন করে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন- এমনটি জ্ঞাত হওয়ার পরও বাদীর আইনজীবী তাদেরকে জেরা করেননি।

সাক্ষ্যপ্রমাণ, তদন্তকারীর প্রতিবেদন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য অনুসন্ধানে আদালতের কাছে স্পষ্ট হয়, আসামিদের দায়ের করা একটি মামলার পাল্টা শোধ হিসেবে বাদী এই মামলাটি করেছেন।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ২২ জুন রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। সেদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বাদী মোঃ আবুল কাশেম। ওইদিন আদালত তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের প্রত্যেককে বাদী কেন ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন না এবং বাদীকে কেন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হবে না তা জানতে চান আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ধার্য তারিখে বাদী এক ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেন, যা সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন আদালত।