উচ্চশিক্ষিত হলেও নারীকে চাকরি করতে বাধ্য করা যাবে না: বম্বে হাইকোর্ট
বম্বে হাইকোর্ট

সন্তান জন্মদানে স্ত্রীকে জোর করতে পারেন না স্বামী : বম্বে হাইকোর্ট

স্বামী তাঁর স্ত্রীকে কখনওই সন্তান জন্মদানের জন্য জোর করতে পারেন না। সন্তান জন্মদানের বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একজন মহিলার— এক মামলার রায়ে এমনটাই জানিয়েছে ভারতের বম্বে হাইকোর্ট।

সম্প্রতি বম্বে হাই কোর্টে এক মামলায় প্রশ্ন ওঠে যে, এক জন মহিলা তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়াই যদি গর্ভপাত করান, তা হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী হিংসা বলে গণ্য হবে কি না। এই মামলায় বিচারপতি অতুল চন্দুরকর এবং উর্মিলা জোশী-ফালকের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এক জন মহিলাকে সন্তান জন্মদানে বাধ্য করা যায় না।

এ ক্ষেত্রে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই মহিলার স্বামীর আবেদন আদালতে গৃহীত হলেও জন্মদানের বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে এক জন মহিলার। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী এই বিষয়টি মহিলাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, বিয়ের পরে এক জন মহিলা যদি কর্মক্ষেত্রে যুক্ত থাকতে চান, তা কখনওই হিংসা বলে গণ্য হতে পারে না।

পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ওই মহিলা দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আবেদন জানিয়ে তাঁর স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন নাকচের আর্জি জানান। ওই মহিলার পক্ষে পরিবার আদালত রায় দিলে পাল্টা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁর স্বামী। বম্বে হাই কোর্টও স্বামীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ওই মহিলা পেশায় শিক্ষিকা। ৪৭ বছর বয়সি তাঁর স্বামীও শিক্ষক। স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি হিংসার অভিযোগ তুলে বিচ্ছেদের আবেদন জানান। তাঁর অভিযোগ, ২০০১ সালে বিয়ের পরেও কর্মক্ষেত্রে যুক্ত থেকেছেন স্ত্রী। এমনকি দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হলে স্বামীকে না-জানিয়েই গর্ভপাত করান তিনি। এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির দাবি, ২০০৪ সালে তাঁকে না জানিয়েই ছেলেকে নিয়ে ‘ঘর’ ছেড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। আর ফিরে আসেননি।

স্ত্রীর আইনজীবী অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল মাতৃত্ব মেনে নিয়েই প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অসুস্থতার জন্য গর্ভপাত করাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওই মহিলা স্বামীর ‘ঘর’ ছেড়ে বেরিয়ে এলেও ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তাঁকে ফেরানোর স্বামী কোনও চেষ্টাই করেননি বলেও অভিযোগ করা হয়।

এমনকি সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ভারও বহন করেননি স্বামী। এর পাশাপাশি ওই মহিলার আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে সন্দেহ করতেন স্বামী ও তাঁর বোন। তাই স্বামীকে ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

আদালতের বক্তব্য, এক জন মহিলা সন্তান জন্ম দেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ তোলা যায় না। স্ত্রীর বিরুদ্ধে গর্ভপাতের অভিযোগ প্রমাণের দায়ও স্বামীরই।

স্ত্রীর বাড়ি ছাড়ার প্রসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোনও মহিলাকে সন্দেহের নজরে দেখা হলে তাঁর পক্ষে শ্বশুরবাড়িতে থাকা খুবই কঠিন। এর পরেই স্বামীর অভিযোগ খারিজের পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনও নাকচ করে আদালত।

সূত্র : আনন্দবাজার