বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১ একটি সাধারণ আলোচনা
শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ একটি সাধারণ আলোচনা

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান : কোনো নিদিষ্ট আইনের পূর্বাপর ইতিহাস, ঐ প্রতিষ্ঠানের আইনের পরম্পরা জানা থাকলে ঐ আইনটি বুঝতে সহজতর হয়। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ আলোচনার পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানের আইন কাঠামো সম্বন্ধে আলোচনা করা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি আবাসকি এলাকার একটি বাড়ির সাথে কবি নজরুল জড়িয়ে আছেন গভীর একাত্মতায়। কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িটি কবি ভবন নামে পরিচিত। এটি ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কের (পুরাতন ২৮ নম্বর সড়ক) ৩৩০ বি নম্বর বাড়ি। এ বাড়ির প্রাঙ্গণ জুড়ে কাজী নজরুল ইসলামের গভীর স্মৃতি রয়েছে। এই বাড়িটি কীভাবে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট হলো, তার নেপথ্যে রয়েছে এক ইতিহাস।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম প্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কাজী নজরুলের গান, কবিতা প্রভৃতি যুদ্ধাস্ত্রের মতো ব্যবহৃত হয়েছে। পরাধীনতার গ্লানিবোধ মোচন করে মুক্তির দুর্বার কামনার বহ্নিজ্বালা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজী নজরুলের লিখা প্রেরণা জুগিয়েছে এবং জাগাচ্ছে। বাঙালির চেতনায় কাজী নজরুল ইসলাম চির জাগরুক হয়ে রয়েছে। তিনি এদেশকে হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪শে মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে কবির প্রথম জন্মদিন কবিকে নিয়ে আড়ম্বরে উদ্যাপন হয়। এ সময় কবি নজরুলের বসবাসের জন্য বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির কবি ভবনের সেই বাড়িটি বরাদ্দসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কবিভবন খ্যাত এ বাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকত।

১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজী নজরুলের শেষ জীবনের স্মৃতিঘেরা ‘কবি ভবন’-এ প্রতিষ্ঠা করা হয় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। কাজী নজরুলের অমর স্মৃতি রক্ষা, তাঁর জীবন, সাহিত্য-সংগীত ও সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা রচনাবলি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রকাশনা ও প্রচার এবং কাজী নজরুলের জীবনকর্ম দেশ-বিদেশে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরাই জন্যই জন্ম এ প্রতিষ্ঠানের। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে জন্য প্রথম আইন সামরিক সরকারের সময় ইংরেজিতে রচিত Nazrul Institute Ordinance 1984. এটি ছিল কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য তাৎপর্যময় ঘটনা। এই আইনে এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন চলে এসেছিল। সুপ্রীম কোটের আপীল বিভাগের এক রায়ে সামরিক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে দেন। ফলে ঐ সময়ের আইনগুলো সেই বাধ্যবাধকতা থেকেই অধ্যাদেশগুলো প্রথমে আইন পরিণত করতে নীতিগত অনুমোদন দেন মন্ত্রিসভা। এরই অনুবৃত্তিক্রমে Nazrul Institute Ordinance 1984 রদ করে জাতীয় সংসদে পাস হয় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮। ফলে প্রতিষ্ঠানটির নাম হলো কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। এ প্রেক্ষিতে এই আইনটির প্রথমেই এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। ইহাকে প্রস্তাবনাও বলা যায়। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ১২নং আইন) প্রবর্তিত হওয়ার ফলে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়।

এদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিই হলো জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদ প্রণীত আইনে সরকার ও বিরোধীয় দলীয় সদস্যগণ মতামত ব্যক্ত করেন এবং আইন কয়েকবার পাঠপূর্বক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। এ কারণে অধ্যাদেশ আকারে প্রণীত আইনের চেয়ে সংসদ প্রণীত আইন কার্যকর ও যুগোপযোগী বেশি। অধ্যাদেশ আকারে প্রণীত আইন সংসদ প্রণীত আইনের মতো পক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা হয় না। বর্তমানে বলবৎকৃত কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮, এই ইনস্টিটিউটের জন্য কার্যকর ও সময়োপযোগী একটি আইন। এই প্রসঙ্গে ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ সম্বন্ধে সাধারণ আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।

এ আইনের ধারা ১(১) এর মূলকথা হলো কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য এ আইন একটি মৌলিক আইন। বাংলাদেশের সংবিধান ছাড়া এ আইনটি অন্য কোনো আইনের অধীনে নয়। বরং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের এ আইন বলে প্রণীত বা প্রণীতব্য অন্যসব আইন এই আইনের অধীন। ২০১৮ সালের ১২নং আইন হচ্ছে কবি নজরুল ইনস্টিউিট আইন, ২০১৮। এই আইন প্রবর্তনের তারিখ ২০১৮ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি মোতাবেক ৮ই ফাল্গুন ১৪২৪; এই আইনের পূর্বে কবি নজরুল ইনস্টিউিটের জন্য যে আইন কার্যকর ছিল তা এ আইনের ১৮ ধারায় বর্ণিত হয়েছে। উক্ত আইন বলে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল নজরুল ইন্সটিটিউট (Nazrul Institute)। বর্তমান আইন প্রবর্তনের তারিখে উক্ত আইন রদ হয়ে গেছে।

এ আইনের ধারা ১-এর উপধারা ২ এর মূলকথা হলো এ আইন অবিলম্বে প্রবর্তিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এ আইন গেজেটে প্রকাশের তারিখ থেকে এ আইন কার্যকরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা ক্ষমতা অর্জন হয়ে গেছে। ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’ শীর্ষক আইনটি ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মোতাবেক ৮ই ফাল্গুন ১৪২৪ তারিখে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং সেদিনই থেকেই কার্যকর হয়েছে। এই আইন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক থেকে আরম্ভ করে অধীনস্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য। এমন কি সাধারণ নাগরিকদের জন্যও প্রযোজ্য। কারণ সেবা প্রত্যাশীদের এই আইন সমন্ধে ধারণা থাকলে তারা সেবা গ্রহণে জন্য কোথায় কার নিকট যাবেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে সহজ হয়।

এই আইনের ধারা ২-এর উপধারা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত এ আইনে ব্যবহৃত ১০টি শব্দের সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। এ শব্দগুলোর সংজ্ঞা এ আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। প্রত্যেক আইনের এ রকম সংজ্ঞা থাকে। The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh’ (Act of 1972)-এর অনুচ্ছেদ ১৫২-তে সংবিধানে ব্যবহৃত কতকগুলো শব্দের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। The General Clause Act, 1897 (Act x of 1897) সর্বতোভাবে একটি ব্যাখ্যার আইন (Interpretation Act)। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮-এর ধারা ২-এর উপধারা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত শব্দগুলো কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইনের বিধানুযায়ী যে ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা এখানে প্রযোজ্য হবে।

এ আইনের ধারা ৩-এর উপধারা ১ থেকে ২ তে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা, অভিন্ন সিলমোহর, সম্পত্তি অর্জন ও হস্তান্তর, মামলা রুজু করার অধিকার ইত্যাদির স্বীকৃতি রয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইনের বিধানুযায়ী একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হলো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা।

এ প্রতিষ্ঠানের একটি অভিন্ন বা সাধারণ সিলমোহর বা প্রতীকের বিধান এ ধারায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা বিমূর্ত প্রাণহীণ ব্যক্তি।

এ প্রতিষ্ঠান এই সঙ্গে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ও প্রাণহীন ব্যক্তি হওয়ার কারণে এ প্রতিষ্ঠান মামলা করতে পারে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। তদ্রুপ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এই নামে মামলা দায়ের করতে হবে। এ ধরনের মামলা করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তার বর্ণনা দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে বর্ণিত আছে। এ ধারায় বিধান অনুসারে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট নির্বাহী কর্তৃত্বের বলে সম্পত্তি গ্রহণ, বিক্রয়, হস্তান্তর করতে পারবে। কেননা, আইনের দৃষ্টিতে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট একজন কৃত্রিম ব্যক্তি। সেই হিসেবে এ অধিকার কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার।

কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮-এর ৪-এর উপধারার ১ থেকে ২তে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা, এ প্রতিষ্ঠানের শাখা বা গবেষণাকেন্দ্র বা স্মৃতিকেন্দ্রের বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হবে এবং এ ধারা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানের শাখা বা গবেষণা কেন্দ্র বা স্মৃতিকেন্দ্র খোলা সম্ভব। আইনের ধারা ৫-এর ১ থেকে ২ উপধারায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের বোর্ড সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালনা ও প্রশাসনের দায়িত্ব একটি বোর্ডের উপর অর্পণ করা হয়েছে। বোর্ড দায়িত্ব পালনকালে এ আইন এ আইন বলে বিধি প্রবিধান ও সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

এ আইনের ধারা ৫তে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটটের ট্রাস্টিবোর্ডের গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একজন প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের পক্ষে একজন প্রতিনিধি, কাজী নজরুলের সৃষ্টিকর্মে বিশেষজ্ঞ বা গবেষক বা স্বনামধন্য অনুরাগী হতে সরকারের পক্ষে মনোনীত ৪জন এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সদস্যসচিব হিসেবে ১জন ব্যক্তিগণের সম্বন্বেয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন হবে।
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মর্যাদা অতুলনীয়। কাজী নজরুলের সৃষ্টিকর্মে বিশেষজ্ঞ বা গবেষক বিশিষ্টদের মধ্য থেকে সরকার ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। তাঁকে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের কিছু কিছু কাজ অনুমোদন করতে হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টিগণ তাঁদের নিযুক্তির তারিখ হতে ৩ বছর পর্যন্ত স্বীয় পদে থাকবেন। তাঁদের পুনঃ নিয়োগ করা যাবে। চেয়ারম্যানের নিকট সম্বোধন করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে কোনো ট্রাস্টি যে কোনো সময় পদত্যাগ করতে পারবেন। তবে সরকারও যে কোনো সময় চেয়ারম্যান বা কোনো ট্রাস্টিকে প্রায়োজনবোধে মনোনয়ন বাতিল বা অপসারণ করতে পারবে।

বোর্ড ও ট্রাস্টিগণ যৌথভাবে কার্যাবলির জন্য সরকারের নিকট দায়ী থাকবেন। উল্লেখ্য, যে কোনো কোর্ড অভ ট্রাস্টিজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে এবং কারও না কারও নিকট দায়ী থাকতে হবে।

এ আইনের ধারা ৭-এর ক থেকে ড উপধারা পর্যন্ত কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের কার্যাবলি বিধৃত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের আপামর মানুষের। এদেশে কাজী নজরুলের শিল্প সংগীত-সাহিত্য বিকাশ ঘটানোর একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে এদেশের মানুষের গভীর প্রত্যাশা। কাজী নজরুলের সৃষ্টিকর্ম বিকাশসাধনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান আপামর জনসাধারণের আশা পূরণ করবে। দক্ষ প্রতিভাবান ও প্রশিক্ষিত কাজী নজরুল গবেষক গড়ে তোলবে।

কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮-এর ধারা ৭-অনুযায়ী কাজী নজরুলের সৃষ্টিকর্মের নানাবিধ কার্যাবলির উৎকর্ষ লালন পালনের মুখ্য প্রতিষ্ঠানই এটি। আইনের এ অনুযায়ী আইনগতভাবেই কাজী নজরুলের জীবন ও কর্মের উৎকর্ষসাধন, বিকাশসাধনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত।

এ আইনের ধারা ৮ এর উপধারা ১ থেকে ৭ পর্যন্ত বোর্ডের সভা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। বোর্ড উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পরিষদ। বোর্ডের ক্ষমতা ও দায়িত্ব পরিমাণে ব্যাপক। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন এবং এ আইনের বলে প্রণীতব্য প্রবিধান, বিধি এই বোর্ডেকে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে। বোর্ডের দায়িত্ব দুই রকমের হতে পারে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের কার্যাবলি তদারকি ও পর্যালোচনা এবং নির্বাহী পরিচালককে প্রয়োজনীয় দিঙ্নির্দেশনা প্রদান করা।

বোর্ডের সভার তারিখ ও সময় এবং স্থান চেয়ারম্যান ঠিক করবেন। প্রতি দুই মাসে কমপক্ষে একটি সভা হবে। বোর্ডের সভায় চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্ব করার অধিকার তিনি মনোনীত বা তাঁর ক্ষমতা প্রাপ্ত কোনো ট্রাস্টিকে দিতে পারেন তিনিই তখন সভাপতিত্ব করবেন।

বোর্ডের সভার বৈধতার জন্য কোরাম (Quorum) পূরণ করতে হবে। এ সভার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ৪জন ট্রাস্টির উপস্থিতির প্রয়োজন। বোর্ড সভার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাস্টি উপস্থিত না থাকলে বোর্ড সভার কার্যক্রম চলতে পারে না। তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোনো কোরাম পূরণ করতে হবে না। বোর্ড সভায় প্রত্যেক ট্রাস্টির একটি করে ভোট থাকবে। উপস্থিত ট্রাস্টিদের সংখ্যা গরিষ্ঠভাবে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তবে সমসংখ্যক ভোটের ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক একটি ভোট প্রদান করতে পারবে।

এ আইনের ধারা ৯ এর ১ থেকে ৪ উপধারায় নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ, তাঁর কার্যাবলি ইত্যাদি বিষয়ে বলা হয়েছে। সরকার নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ করবেন। নির্বাহী পরিচালক কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী বা প্রশাসনিক প্রধান। এ আইনে নির্বাহী পরিচালকের এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপালনে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্তৃত্ব নির্বাহী পরিচালকের উপর ন্যস্ত। এ প্রতিষ্ঠানের সকল নির্বাহী ব্যবস্থা নির্বাহী পরিচালকের নামে গৃহীত হবে। বোর্ডের সভার সিদ্ধান্তসমূহ সম্পাদনের জন্য তিনি দায়ী থাকবেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সংক্রান্ত সকল বিষয় এবং প্রশাসনিক কার্যাবলির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, নির্বাহী পরিচালকের পদ যখন শূন্য বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি তাঁর কার্যভার সম্পাদনে অসমর্থ হলে শূন্য পদে নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক কার্যভার গ্রহণ করা না পর্যন্ত কিংবা নির্বাহী পরিচালক পুনরায় কার্যভার গ্রহণ করা না পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি অস্থায়ীভাবে নির্বাহী পরিচালকের কার্যসম্পাদন করবেন।

এ আইনের ধারা ১০তে কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন দিয়ে তৈরি করা একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানের আইনের ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রণীত বা প্রণীতব্য বিধি প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে কিছু কিছু কর্মকা-ের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের আছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগ এ প্রতিষ্ঠানের আইনের বিধান অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সাংগঠনিক কাঠামো, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হবে।

আইনের ধারা ১১তে ক্ষমতা অর্পণ বিষয়ে বিধান প্রদত্ত হয়েছে। ক্ষমতা অর্পণ করতে হয় আইনের দ্বারা, মৌখিকভাবে বা পত্রযোগে ইহা করা যায় না। আইনের উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণসাধন। ক্ষমতা অর্পণের দ্বারা আইনের উদ্দেশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে। ক্ষমতা অর্পণের মাধ্যমে বিধি, প্রবিধান, ইত্যাদি প্রণয়ন করা যায়। আইনের এ ধারার বিধানুযায়ী চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি, নির্বাহী পরিচালক বা এতদুদ্দেশে ক্ষমতা প্রাপ্ত কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ক্ষমতা অর্পণের দ্বারা অর্পণকারী তাঁর আপন ক্ষমতা হারান না এবং দায়িত্বমুক্তও হতে পারেন না।

এ আইনের ধারা ১২-এর ১ থেকে ৩ উপধারা পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের তহবিল বিষয়ে বিধৃত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের তহবিলের আয়ের উৎসাহসমূহ হলো সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত অনুদান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুদান, এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশি সরকার বা সংস্থা কর্তৃক প্রাপ্ত অনুদান ইত্যাদি। তহিবলে জমাকৃত অর্থ এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখা যাবে এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তহবিল পরিচালিত হবে। উল্লেখ্য, এ ধারার আলোচ্য তফসিলি ব্যাংক বলতে Bangladesh Bank Order, 1972 (P.O.No 127 of 1972)-এর 2 (J) -এর অনুচ্ছেদের বিধান প্রযোজ্য হবে। তহবিলের অর্থ হতে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা যাবে এবং তহবিলের অর্থ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।

এ আইনের ধারা ১৩তে বার্ষিক বাজেট বিবরণী বিষয়ে বিধৃত রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের অর্থবছর ১২ মাস সময়কাল, ইহা ১লা জুলাই থেকে শুরু হয় এবং ৩০শে জুন শেষ হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘অর্থবছর অর্থ জুলাই মাসের প্রথম দিবসে যে বছরের আরম্ভ।’ সরকারের বাজেটের অর্থ জনগণের অর্থ। সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া বাজেটের অর্থের খাত স্থানান্তর করা যায় না। এ ধারায় বিধানুযায়ী কবি নজরুল ইনস্টিটিউট একাডেমি প্রতি অর্থবছরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয় এবং উক্ত অর্থ বছরে সরকারের নিকট হতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে একটি বাজেট সরকারের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে।
এ আইনের ধারা ১৪-এর ১ থেকে ৫ উপধারায় হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা বিষয়ে আলোচনা প্রদত্ত হয়েছে। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বা তাঁর প্রতিনিধি বা চার্টার্ড একাউন্ট ফার্ম ইনস্টিটিউটের সকল হিসাব ও অন্যান্য নথিপত্র নিরীক্ষা করবেন এবং রিপোর্ট দিবেন। প্রতি বছর এ ইনস্টিটিউটের হিসাবগুলো নিরীক্ষা করা ও হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করা হবে।

বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বা তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা চাটার্ড একাউন্টস ফার্ম ইনস্টিটিউটের কর্মচারীর দখলভুক্ত সকল দলিল, নথি, নগদ অর্থ, রশিদ বা অন্য প্রকার সম্পত্তি পরীক্ষা করবেন।

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব এবং ক্ষমতা ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত। এ কারণে Bangladesh Chartered Accounts Order, 1973 (P.O.No. 2 of 1973)-এর Article 2 (J) ন-এর মাধ্যমে যৌথ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যৌথ সংস্থাটি চার্টার্ড একাউন্সে ফার্ম। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও হিসাব নিরীক্ষিত করা যাবে। নিরীক্ষাকারী ব্যক্তি বা যৌথ সংস্থা ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি, নির্বাহী পরিচালক বা কোনো কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।

আইনের ধারা ১৫-এর ১ থেকে ২ উপধারায় বার্ষিক কর্মকান্ডের প্রতিবেদন বিষয়ে বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য উপাদান জবাবদিহিতা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন উপস্থাপনের মাধ্যমে জবাবদিহিতা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক অর্থবছরের সমাপ্তিকালে অবিলম্বে ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কার্যাবলির ওপর এক বছরের প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সরকারের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। উল্লেখ্য, সরকার যে কোনো সময় যে কোনো বিষয়ে নির্দেশ ইনস্টিটিউটকে প্রদান করতে পারে এবং ইনস্টিটিউটকে তা পালন করতে হয়। তেমনিভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন ছাড়াও যে কোনো সময়ে যে কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন সরকার আহ্বান করলে ইনস্টিটিউট তা সরকারকে দিতে হবে।

এ আইনের ধারা ১৬তে ইনস্টিটিউটকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। একটি আইনে পদ্ধতিগত নানা বিষয় থাকলেও তার ব্যবহারিক নানা বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা, নমুনা, গাইড লাইন থাকে বিধিতে; যা আইনে থাকে না। বিধি প্রণয়ন ব্যতীত আইন প্রয়োগে জটিলতা তৈরি হয়। ইনস্টিটিউটের এ আইনটি প্রশাসনিক আইন; প্রশাসনিক আইন প্রধানত বিধিগত আইন। বিধি আইনের অধীনে প্রণীত হয়। প্রবিধানও ইহার অন্তর্ভুক্ত। বিধি একাধিক হতে পারে। যেমন ভবিষ্যত তহবিল বিধি, পেনশন বিধি। প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার জন্য বিধি অতীব প্রয়োজন। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিধি প্রণীত হয়। বিধি এসআরও (Statutory Regulation Order) হিসেবে জারি করা হয় এবং গেজেটে প্রকাশিত হয়। ইনস্টিটিউটের আইনের অধীনে একাধিক বিধি প্রণয়ন করা যাবে এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

ইনস্টিটিউটের আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-ইনস্টিটিউটের আইনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তা প্রয়োগযোগ্য হবে। ইনস্টিটিউটের এ আইনের বিধানের অতিরিক্ত বা পরিপন্থি কোনো বিধান বিধিতে সন্নিবেশিত করা হলে তা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না কিংবা প্রণীত বিধি দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোনো আইন বা রদ হওয়া কোনো আইনকে বলবৎ করা যাবে না। ইনস্টিটিউটের আইনে অধীনে প্রণীত বিধি, উক্ত আইনের সাথে বিধি অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। ইনস্টিটিউটের আইনের অধীন বিধি হলে উক্ত আইন প্রণীত বিধির চেয়ে প্রাধান্য পাবে।

আইনের ১৭ ধারার বিধান অনুযায়ী ইনস্টিটিউটকে প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন ও গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। প্রবিধান প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূলভিত্তি এবং গাইড লাইন। প্রবিধানও এসআরও হিসেবে জারি করা হয়। মর্যাদা ও কার্যকরতার দিক থেকে সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন এবং আদেশের পরই প্রবিধানের স্থান। ইনস্টিটিউটের আইনের অধীনে প্রণীত প্রবিধান ইনস্টিটিউটের আইনের অংশ হিসেবে বিবেচিত এবং তদ্রুপভাবে প্রয়োগযোগ্য। ইনস্টিটিউটের আইনের বিধানের অতিরিক্ত বা পরিপন্থি কোনো বিধান প্রবিধানে সন্নিবেশিত করা হলে তা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না কিংবা প্রণীত প্রবিধান দ্বারা পূর্বে প্রণীত ইনস্টিটিউটের কোনো আইন যা রদ হয়েছে তা বলবৎ করা যাবে না। যে আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণীত, উক্ত আইনের সাথে তা অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। উল্লেখ্য, ইনস্টিটিউটের আইনের অধীনে কোনো প্রবিধান প্রণীত হলে উক্ত প্রবিধানের চেয়ে ইনস্টিটিউটের আইন প্রাধান্য পাবে।

এ আইনের ১৮ ধারা ১ থেকে ৩ উপধারায় রহিতকরণ ও হেফাজত বিষয়ে বিধৃত হয়েছে। এই আইনের এ ধারাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধারায় বাতিল নয়, রদ করণের কথা বলা হচ্ছে। এ আইনের বিধানুযায়ী ‘Nazrul Institute Ordinance, 1984’ আইনটিকে রদ করা হয়েছে। এই আইন রদ করবার কারণ এই যে, যে সমস্ত বিষয়ে এই আইনে জারি করা হয়েছিল, সেই সমস্ত বিষয় ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’-তে বিধান করা হয়েছে। সুতরাং কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ প্রবর্তিত ও জারি হয়ে যাবার পর তা ঐ অধ্যাদেশ রহিত হয়ে পড়েছে। তবে একটি আইন দ্বারা আরেকটি আইন রহিত করা হলেও সেই আইনে (রদ হওয়া আইন) পূর্বে যা কিছু করা হয়েছে, তা বেআইনি হবে না। রদ হওয়া আইনের বলে যা কিছু করা হয়েছে তা বলবতকৃত আইনে হেফাজত করেছে। সুতরাং রদ হওয়া আইনের আলোকে যা কিছু করা হয়েছে সেগুলোকে রক্ষা করেছে। এই বিধান আইনের ক্ষেত্রে অন্যতম তাৎপর্য বিষয়। উল্লেখ্য, রদ হওয়া আইন রদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর।

এ আইনের ধারা ১৯-এর ১ থেকে ২ উপধারায় ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ বিষয়ে প্রদত্ত হয়েছে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ বাংলা ভাষাতে গৃহীত হয়েছে। এই আইনের একটি নির্ভরযোগ্য ইংরেজিত অনূদিত পাঠ রাখার বিধান আইনে আছে। অনূদিত ইংরেজি পাঠও গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হয়। তবে ইংরৈজিতে অনূদিত পাঠ কিন্তু আইন নয়। আইন যে ভাষায় জারি হয়েছে সেই ভাষাতেই গ্রহণ করতে হয়। দেশের সার্বভৌম শক্তি সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে এবং জারি করতে পারে।

আইনের অনূদিত ইংরেজি পাঠ গৃহীত করতে হলে ইংরেজি পাঠও সংসদে হতে প্রণয়ন ও জারি করতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনটি বুঝার জন্য এবং উদ্ধৃত করার জন্য ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রয়োজন। এই কারণে আইন প্রণেতাগণ বাংলায় প্রণীত আইনের ইংরেজি পাঠ রাখার একটি বিধান সংশ্লিষ্ট আইনে রাখা হয়। উল্লেখ্য, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ বাংলায় জারি হয়েছে- তাই এই আইন বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে।

এই আইনের সাধারণ আলোচনায় বলা যায় যে, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ একটি যুগোপযোগী আইন। এই আইনের বলে ইনস্টিটিউটের বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপুরি এই আইন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা, সাংবিধানিক আইন ও আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকারকে সমুন্নত করেছে। এই আইন প্রবর্তিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট জাতির প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে যাবে।

লেখক : গবেষক