পুরুষ সেজে নারীদের যৌন হয়রানিতে লিপ্ত মনির ৬ বছরের কারাদণ্ড
সাইবার ট্রাইব্যুনাল, সিলেট এবং দণ্ডিত নারী ফরজুন আক্তার মনি (ইনসেটে)

পুরুষ সেজে নারীদের যৌন হয়রানিতে লিপ্ত মনির ৬ বছরের কারাদণ্ড

পুরুষ সেজে নারীদের যৌন হয়রানিমূলক বার্তা প্রদানে লিপ্ত এক নারীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এক মামলায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আসামিকে চার লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর ৯ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আসামির উপস্থিতিতে আজ রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবুল কাশেম সরকার এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিত নারীর নাম ফরজুন আক্তার মনি (৪০)। দণ্ডপ্রাপ্ত ফরজুন আক্তার মনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের জহুর উদ্দিনের মেয়ে।

মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফা দেলোয়ার আল আজহার, অ্যাডভোকেট গোলাম আজম। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাওসার আহমদ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রতারক নারী ফরজুন আক্তার মনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রী, ফেসবুক কর্তৃক ব্র্যান্ড গবেষক, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের মেয়েসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি ও মানুষকে হয়রানি করছিলেন।

এছাড়া তিনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, নবীগঞ্জ উপজেলার সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, মহিলা ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগমকে যৌন হয়রানিমূলক ম্যাসেজ দিয়ে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম. এ আহমদ আজাদ তাকে ডেকে এনে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। এতে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হন। বিভিন্ন সময় ফরজুন আক্তার মনি নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদকে নিয়ে অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে একাধিক মানহানিকর পোস্টও দেন।

পরে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এম. এ আহমদ আজাদ বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে নবীগঞ্জ শহরের জে. কে উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট থেকে ফরজুন আক্তার মনিকে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর নবীগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ফরজুন আক্তার মনি নারী না পুরুষ এ বিষয়ে মনির মেডিক্যাল পরীক্ষা করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তিন মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে ফের তিনি মানহানিকর ও আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন।

সকল বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত আজ ওই মামলায় রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফা দেলোয়ার আল আজহার বলেন, আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে মনিকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর ৯ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।