ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট : ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন কক্সবাজার সদর থানার সাবেক ওসি এবং আইও
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার

স্টাম্প জালিয়তি : কক্সবাজারে স্টাম্প ভেন্ডারকে কারাগারে প্রেরণ

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সরকারি ট্রেজারী থেকে চালানের মাধ্যমে নন জুডিসিয়াল স্টাম্প ক্রয় করা হয়েছিলো ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী। আর সেই স্টাম্প বিক্রি করা হয়েছে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ উল্লেখ করে। অর্থাৎ ট্রেজারী থেকে স্টাম্প সংগ্রহেরও ১০ মাস আগের তারিখ উল্লেখ করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে স্টাম্প বিক্রি করেছে স্টাম্প বিক্রেতা (ভেন্ডার)। এ অভিযোগে মোঃ ছলিম উল্লাহ নামক এক স্টাম্প ভেন্ডারকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

অভিযুক্ত স্টাম্প ভেন্ডার মো: ছলিম উল্লাহ কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ বুধবার (৯ নভেম্বর) আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী আসামীর জামিন আবেদন শুনানি শেষে জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ভেন্ডার মোঃ ছলিম উল্লাহ কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জানারঘোনা এলাকার মৌলভী রশীদ আহমদ এর পুত্র। তার ভেন্ডার লাইসেন্স নম্বর : ০১/১৯৪-১৯৯৫।

কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

কক্সবাজারের যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন এসটি : ২২০/২০২১ নম্বর একটি মাদক মামলায় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি সিএনজি আইনশৃংখলা বাহিনী জব্দ করে। চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মো: আলী হোসেনের পুত্র খলিলুর রহমান জব্দকৃত সিএনজি খানা জিম্মা পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু সিএনজি খানার ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ হিসাবে সম্পাদিত চুক্তিনামায় ব্যবহৃত নন জুডিসিয়াল স্টাম্পের বিষয়ে আদালতের কাছে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এ অবস্থায় আদালত এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পিবিআই কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

পিবিআই কক্সবাজার অফিসের পরিদর্শক মোঃ আবুল কালাম চলতি বছরের ২ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিএনজি খানার বিক্রয় রশিদে ব্যবহৃত স্টাম্প গুলো সরকারি ট্রেজারী থেকে চালানের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছিলো ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী। আর সেই স্টাম্প গুলো বিক্রি করা হয়েছে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ উল্লেখ করে। অর্থাৎ স্টাম্প সংগ্রহেরও ১০ মাস আগের তারিখ উল্লেখ করে জালিয়াতির মাধ্যমে স্টাম্প বিক্রি করেছে সেই স্টাম্প বিক্রেতা (ভেন্ডার)।

আবার সেই স্টাম্প দিয়ে অ্যাডভোকেট রতন বরণ পাল নামক একজন নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে পিছনের তারিখে নোটারী পাবলিকের বালামে জাল জালিয়াতি করে সিএনজি ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ হিসাবে চুক্তিনামা সৃজন করা হয়েছে। যার কথিত নোটারী রেজিষ্ট্রেশন নম্বর : ৭১৬, তারিখ : ২৩/০৩/২০২০ ইংরেজি। এ বিষয়ে তদন্তে ৫ জনকে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্থ করে তারা পরস্পর যোগসাজশ পূর্বক জাল জালিয়াতি করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনায় তদন্তে বের হয়ে আসা জাল জালিয়াতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪৬৫/৪৬৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলা দায়ের করে জালিয়তি কর্মে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কক্সবাজারের যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার সদরের আমলী আদালত-কে চলতি বছরের গত ২৫ এপ্রিল এক আদেশ দেন।

এ আদেশের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী’র আদালতে ৫ জনকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির উল্লেখিত ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যার সিআর মামলা নম্বর : ৭৬১/২০২২ ইংরেজি (সদর)। মামলার আসামীরা হলেন-কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল ইউনিয়নের পাল পাড়ার মৃত দুর্গা প্রসন্ন পালের পুত্র অ্যাডভোকেট রতন বরণ পাল (নোটারী পাবলিক), একই উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জানারঘোনা এলাকার মৌলভী রশীদ আহমদ এর পুত্র স্টাম্প ভেন্ডার মোঃ ছলিম উল্লাহ, চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মো: আলী হোসেনের পুত্র খলিলুর রহমান, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং এর হোসাইন আহমদের পুত্র আবদুর রহিম (৩৫) এবং চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর ফরিদুল আলমের পুত্র বাবর উদ্দিন (৩৮)।

আসামীদের মধ্যে স্টাম্প ভেন্ডার মোঃ ছলিম উল্লাহ হাইকোর্ট থেকে ৫০০৮১/২০২২ নম্বর ফৌজদারী মিচ মামলা মূলে গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আগাম জামিন নেন। আগাম জামিনের মেয়াদ শেষে আসামী স্টাম্প ভেন্ডার মো: ছলিম উল্লাহ গত বুধবার (৯ নভেম্বর) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।  আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী আসামীর জামিন আবেদন শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আসামীর জামিন আবেদন না মঞ্জুরের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী বলেন, “আসামী কক্সবাজার ট্রেজারী থেকে বিগত ২০/০২/২০২১ তারিখ স্টাম্প সংগ্রহ করলেও উক্ত স্টাম্প ২০/০৩/২০২০ তারিখ দেখিয়ে বিক্রি করেন, যাহা তদন্তে প্রমাণিত হয়। কিন্তু আসামী পক্ষ উক্ত অভিযোগের বিপক্ষে সন্তোষজনক কোন বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। এজন্য সার্বিক বিবেচনায় আসামীর জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করা হয়।”

বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী’র এ আদেশ সম্পর্কে ফৌজদারী আইন আইন বিশেষজ্ঞ একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, এ আদেশ নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক ও জনহিতকর একটি আদেশ। আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে যারা জাল জালিয়াতি ও প্রতারণায় জড়িত, তারা এ আদেশের কারণে সর্তক হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এ বিষয়ে একটা বার্তা যাবে এবং জাল জালিয়াতি রোধে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। যা বিচারব্যবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে উক্ত আইনজীবী মন্তব্য করেন।