সতীনের শিশুপুত্র হত্যার দায়ে কক্সবাজারে নারীর যাবজ্জীবন 
যাবজ্জীবন দন্ডিত জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী

সতীনের শিশুপুত্র হত্যার দায়ে কক্সবাজারে নারীর যাবজ্জীবন 

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : সতীনের আড়াই বছরের শিশু পুত্রকে হত্যার দায়ে পাশবিক এক মহিলাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আবদুল্লাহ আল মামুন গত বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন। 

দন্ডিত আসামী হলেন কক্সবাজারের চকরিয়ার বাটাখালীর ফুলতলা খন্দকার পাড়ার খলিলুর রহমান ও শাহানা বেগমের কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী (২৪)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত মহিলা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। 

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজ বাগ এলাকার সাহাব উদ্দিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী’র। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের আক্রোশ থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী প্রতিহিংসা পারায়ণ হয়ে তার সাবেক স্বামী সাহাব উদ্দিনের অপর স্ত্রী রুনা ইয়াসমিন এর আড়াই বছরের শিশু পুত্র আল ওয়াসি-কে ব্রীজ থেকে মাতামুহুরি নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে। পরদিন মাতামুহুরি নদীর দক্ষিণ পাড় হতে শিশু আল ওয়াসি’র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। 

এঘটনায় শিশু আল ওয়াসি’র মা রুনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার চকরিয়া থানা মামলা নম্বর : ২৮/২০১৯ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ২৮/২০১৯ (চকরিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১২০/২০২০ ইংরেজি। 

বিচার ও রায়

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নীকে ঘটনার একমাত্র আসামী উল্লেখ করে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলার একমাত্র আসামী জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বেচ্ছায় তার জবানবন্দী প্রদান করে।

আদালত ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করে। মামলায় ১৬ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, আলামত প্রদর্শন, ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিনে বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন শিশু হত্যার একমাত্র আসামী জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নীকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান এবং একইসাথে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। 

রায়ে বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সে অনুযায়ী আসামীকে মৃত্যুদন্ড বা আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আসামীর বয়স কম, সন্তান থাকাসহ আরো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে আসামীকে অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।