সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ : রিমান্ডে আইনজীবী
অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগ্যান (ছবি: সংগৃহীত)

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ : রিমান্ডে আইনজীবী

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মারধর, ভাঙচুর ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় আইনজীবীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ওই আইনজীবীর নাম সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। অ্যাডভোকেট রিগান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য।

এদিন আদালতে রিগ্যানকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করে।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মূলত গত সোমবার থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

এই প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অপর সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন—এ নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে। এদিন সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীর ভাষ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক মনোনীত করার পর বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেন। মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে যান।

এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বুধবার সকাল থেকেই সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।

খোকন-কাজলসহ ১০০ জনের নামে আরও এক মামলা

এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে।

সিনিয়র আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে বুধবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় এ মামলা করেন।

মামলায় বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বাদী মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেছেন, ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিন ব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা৷ এই সময়ে আসামিরা অজ্ঞাত শতাধিক আইনজীবী অফিস রুমে প্রবেশ করে নির্বাচনের ব্যলটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বাইরে ফেলে দেয় ও কিছু ব্যালট ছিঁড়ে ফেলে।

এ সময় অনেক ব্যালট পেপার তারা নিয়ে যায়। পাশাপাশি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাব কমিটির সদস্য মৌসুমি বেগম, শুভ্র ভোস ও গোলাম সারওয়ারসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। হামলায় নির্বাচন সংক্রান্ত নথির আর্থিক ক্ষতি চার লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়।

মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ বলেন, ভোটের ব্যালট পেপার চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।