আদালত বিব্রত হয় কেন, এ বিষয়ে আইন কি বলে?
কামরুজ্জামান পলাশ

আদালত বিব্রত হয় কেন, এ বিষয়ে আইন কি বলে?

কামরুজ্জামান পলাশ : আমরা মাঝে মধ্যেই ইলেক্ট্রনিক্স প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদ পত্রে বা সোস্যাল মিডিয়াতে দেখতে পাই যে, বিজ্ঞ আদালত একটি মামলা বা মামলার আপীল বা রিট শুনতে বিব্রত বোধ করছেন। বিচারক যখন একটি মামলা শুনতে বিব্রত বোধ করেন তখন দরখাস্তকারীকে অন্য আদালতে তার দরখাস্তটি উপস্থাপন করতে পরামর্শ দেন।

সাধারণ অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠে আসে যে, আদালতের এমন বিব্রত বোধ এর আইনী কোন ব্যাখা আদৌ কি আছে? উক্ত বিষয়ে উৎসাহী সবার জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, এই ধরণের নিয়ম আইনের মধ্যেই রয়েছে। কেননা আদালত আইন দ্বারাই গঠিত এবং আইন দ্বারাই পরিচালিত হয়। তাই আদালতের কার্যক্রম কখনোই আইন পরিপন্থী হবে না। এইবার দেখে নেয়া যাক কোথায় বা কোন আইনে বিব্রত বোধ এর আইনী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

১৮৮৭ সালের ১২ নং আইন ‘দ্য সিভিল কোর্ট্‌স এ্যক্ট-১৮৮৭’ এর ৩৮ নং ধারা এবং ১৮৯৮ সালের ৫ নং আইন ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৯৮’ এর ৫৫৬ নং ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে বিজ্ঞ আদালত একটি মামলা বা মামলার আপীল বা রিট শুনতে অস্বীকৃতি বা অপারগতা জানাতে পারেন।

এইবার দেখে নেয়া যাক দেওয়ানী আইনে কি বলা আছে। দ্য সিভিল কোর্ট্‌স এ্যক্ট এর ৩৮ নং ধারায় বলা হয়েছে –

দেওয়ানী আদালতের প্রিজাইডিং অফিসারের (বিচারক) নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলা তিনি নিজে বিচার করবেন না। তাছাড়া দেওয়ানী আপীল আদালতের প্রিজাইডিং অফিসারের (বিচারক) নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলায় তাঁর নিজের দেওয়া ডিক্রি বা রায়ের বিরুদ্ধে তিনি নিজে আপিল শুনবেন না। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত (সুপিরিয়র কোর্ট)“দেওয়ানী কার্যবিধি-১৯০৮“ এর ধারা-২৪ অনুসরণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করবেন।

এইবার দেখে নেয়া যাক ফৌজদারি আইনে কি বলা আছে। দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-১৮৯৮ এর ৫৫৬ নং ধারায় বলা হয়েছে –

আপীল কোর্ট এর অনুমতি ব্যতিত,কোন বিচারক(জজ) বা ম্যাজিস্ট্রেট নিজে একজন পক্ষ বা নিজের স্বার্থ আছে এমন মামলা তিনি নিজে বিচার করতে করবেন না এবং নিজের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপীল শুনবেন না।

ল্যাটিন ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, ‘Nemo Judux In Causa Sua’ অর্থাৎ NO one should be a Judge of his own Cause. যখন কোন মামলা পরিচালনা করার সময় বিচারক যদি দেখেন উক্ত মামলায় তাঁর কোন প্রকার স্বার্থ রয়েছে, তখন তিনি উক্ত মামলা পরিচালনা করতে অস্বীকার করবেন। এটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার একটি পূর্বশর্ত।

এ কারণে অনেক সময় বিচারক মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করতে পারেন। এ বিষয়ে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, সম্প্রতি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট শুনতে বিব্রত হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে বেঞ্চের এক বিচারপতি বলেন, আমি পাঁচ বছর দুদকের আইনজীবী ছিলাম। যেহেতু এই রিট আবেদনে দুদকের প্রশ্ন জড়িত এ কারণে রিট আবেদনটি শুনতে বিব্রত বোধ করছি।

উল্লেখ্য, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনারও ছিলেন।

লেখক : শিক্ষানবিস আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, ঢাকা।